![নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখেন যারা](uploads/2024/05/22/a2-1716358041.jpg)
ইসাবেল ফারিয়াস মায়ার
(প্রিম্যাচিওর মেনোপজবিষয়ক কর্মী, চিলি)
ইসাবেল ফারিয়াস মায়ারের মাসিক চক্র ছিল অনিয়মিত। তিনি কখনো ভাবেননি, এটি খারাপ কিছুর লক্ষণ হতে পারে। তার বয়স ১৮ হওয়ার আগেই প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি ধরা পড়ে। ডিম্বাশয় সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে এই সমস্যা হয়। যাদের বয়স ৪০ বছরের কম, তাদের ভেতর শতকরা ১ জনের ভেতর এ সমস্যা দেখা যায়।
প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সিতে আক্রান্ত নারীরা অনেক কম বয়সে মেনোপজের মতোই উপসর্গ লক্ষ করেন। এসবের প্রভাব পড়ে নারীর গোটা জীবনের ওপর। ফারিয়াস মায়ার নিঃসংকোচে অস্টিওপোরোসিস নিয়ে বেঁচে থাকা এবং ওই স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কীভাবে তার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে, সেসব নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৩০ বছর বয়স্ক এই সাংবাদিক লাতিন আমেরিকাতে প্রিম্যাচিওর মেনোপজবিষয়ক প্রথম আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক চালু করেছেন। তার মাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে, জনসচেতনতা তৈরি হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে মেনোপজ হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন অনেক নারীই; যা নিরাপদ মাতৃত্বে ভূমিকা পালন করছে।
উলান্ডা তাম্বা
(বাল্যবিবাহবিরোধী কর্মী, মালাওয়ি)
শুধু বাল্যবিবাহ এবং অপরিণত বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর অনেক মা জীবনের ঝুঁকিতে পড়েন। কেউ কেউ মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন, তাদের বেশির ভাগই অপুষ্টিতে ভোগেন, স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। বিশ্বজুড়ে বাল্যবিয়ে রোধের জন্য অনেক জনসচেতনতা তৈরি করা হয়, অনেক আইন প্রয়োগ করা হয়। তবু এখনো বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণরূপে রোধ করা সম্ভব হয়নি।
বাল্যবিবাহ বিরোধী কর্মী উলান্ডার বেড়ে ওঠা মালাওয়ির লিলোঙ্গউয়ি নামের এক গোত্রে। সেখানে নারীদের পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। ১৮ বছর হওয়ার আগেই তাদের পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তবু তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। বর্তমানে ‘এইজ আফ্রিকা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালাওয়ির কান্ট্রি ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন; যারা মাধ্যমিক স্তরে আফ্রিকা মহাদেশের মেয়েদের সমান সুযোগ নিশ্চিতে কাজ করে থাকেন। অনেক দেশেই আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তিনি বাল্যবিবাহ রোধে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সেই সঙ্গে অকাল গর্ভধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করে থাকেন।
ন্যাটালি পিসাইলা
(চিকিৎসক, মাল্টা)
ইউরোপের দেশগুলোয় গর্ভপাতের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম রয়েছে। তার মধ্যে মাল্টায় সবচেয়ে কঠিন নিয়ম চালু রয়েছে। চিকিৎসক ন্যাটালি পিসাইলা সেসব নারীদের সহযোগিতা করেন, যাদের গর্ভপাতের ব্যাপারে তথ্য ও পরামর্শ প্রয়োজন। ন্যাটালি ‘ডক্টরস ফর চয়েস মাল্টা’ সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গর্ভপাতকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করা এবং এর বৈধকরণের পাশাপাশি গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতার পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মাল্টায় গর্ভপাতে প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র একজন নারীর জীবনের ঝুঁকি থাকলেই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে নারীরা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই বড়ি সেবন করছেন।’
নারীদের গর্ভপাতের সময়, এর আগে এবং পরেও সহায়তা করার লক্ষ্যে তিনি একটি হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া তিনি ‘মাই বডিস ফ্যানটাস্টিক জার্নি’ নামে একটি যৌন শিক্ষামূলক বইও প্রকাশ করেছেন। ন্যাটালি পিসাইলার উদ্যোগের ফলে নারীর স্বাস্থ্য যেমন সুরক্ষিত হয়, তেমনই অনাকাঙ্ক্ষিত জন্মদান থেকে তাদের রক্ষা করে প্রয়োজনে নিরাপদ ও স্বেচ্ছাকৃত সুন্দর মাতৃত্বে ভূমিকা রাখে।
সূত্র: বিবিসি
জাহ্নবী