![নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব](uploads/2024/06/26/a3-1719381715.jpg)
বর্তমান সময়ে যেসব রোগ খুব সহজেই মানুষের শরীরে দানা বাঁধছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ডায়াবেটিস। তরুণ বয়সী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের এই রোগ দেখা যাচ্ছে। প্রাচীন ভারতে ডায়াবেটিসকে মধুমেহ বা বহুমূত্র রোগ বলা হতো। মধু মানে মিষ্টি আর মেহ মানে প্রস্রাব। প্রস্রাবের সঙ্গে যেহেতু মধু জাতীয় মানে মিষ্টি জাতীয় জিনিস যাচ্ছে সে কারণে মধুমেহ বলত। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে সুগার যাওয়া, শরীর শুকিয়ে যাওয়া- এই তিনটি হয় ডায়াবেটিস হলে। পুরো নাম ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস। আমরা শুধু ডায়াবেটিস বলি। ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিনের অভাব দেখা দেয়। ইনসুলিন কমে গেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পড়ে। বেশি আক্রান্ত হয় চোখ, দাঁত, হৃদযন্ত্র ও কিডনি। ডায়াবেটিস একসঙ্গে দুই চোখকেই আক্রান্ত করে। নারীদের শরীরে ডায়াবেটিস মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
কথায় বলে, নারীর শরীরে সবসময়ই রোগ একটু মাথাচাড়া দেয় বেশি। ঠিক তেমনই ডায়াবেটিসও নারীর শরীরে একটু বেশি দানা বাঁধে। ডায়াবেটিসের কারণে নারীর শরীরে একে একে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়। এই রোগ থেকে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ, অন্ধত্ব, অবসাদ, ইউটিআইয়ের মতো সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হতে পারেন বলে গবেষণায় উঠে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসের কারণে নারীদের মৃত্যুঝুঁকিও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আসলে ডায়াবেটিস নারীর সার্বিক স্বাস্থ্যে বিশাল প্রভাব ফেলে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অতিরিক্ত ওজনই এ রোগের মূল কারণ। ডায়াবেটিস হলে যৌন চাহিদা কমে যাওয়া, ভ্যাজাইনাল ইচিং, বারবার মূত্রত্যাগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। যেকোনো বয়সীর মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে, নারীদের শরীরে এর প্রভাব কিন্তু তুলনামূলকভাবে বেশি।
গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় নারীদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এমনকি বন্ধ্যাত্ব, গর্ভপাত, অপরিণত বাচ্চা, মেনোপজের সমস্যাসহ নারী স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
নারীর শরীরে ডায়াবেটিসের কারণে হার্টের সমস্যা ভীষণ বেড়ে যায়। বেশির ভাগ নারীই অল্প বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কার্ডিওভাসকুলার রোগই কাল হয়ে দাঁড়ায়।
৫০-এর নিচে যাদের বয়স তাদের এক ধরনের অ্যালার্জি জাতীয় রোগ সৃষ্টি হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ইউরিনারি ইনফেকশন খুব স্বাভাবিক বিষয়। ইউরিনের সঙ্গেই হঠাৎ করে রক্ত দেখা দিলে শিগগিরই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রভাবে সমস্যা বেড়ে যায়। ফলত কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়া খুব স্বাভাবিক। অন্ধত্ব ও মানসিক চাপ দুটিই এর প্রভাবে হতে পারে। অনিয়মিত ঋতুচক্র হতে পারে। তাই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব
অনেক সময় গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। যা আবার বাচ্চা প্রসবের পরে সেরে যায়। এটাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়। এটারও স্কিনিং করা দরকার। জটিলতা দেখা দিলে, সন্তান না হলে, মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তখনই এটা নজরে আসে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে গর্ভকালীন ২৪ সপ্তাহ বা তারপর ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করলে ভালো হয়। গর্ভের আগে ও গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষাটা করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকে এটা করেন না। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া আফসানা এক গণমাধ্যমে বলেন, ‘সবার ক্ষেত্রে একই রকম ঘটনা ঘটে না। সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, যাদের গর্ভকালীন ইনসুলিন লাগে না, শুধু খাবার বা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায় বা খুব অল্প ডোজের ইনসুলিন লাগে, সাধারণত সন্তান প্রসবের পর তারা স্বাভাবিক হয়ে যান। আর যাদের গর্ভাবস্থায় অনেক হাই ডোজের ইনসুলিন লাগে, তাদের সন্তান প্রসবের পরও ইনসুলিন নিতে হয়। তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার পরে পুরোপুরি ডায়াবেটিস হয়ে যায়।’
মায়ের ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘গর্ভপাত হতে পারে, যেকোনো সময় রক্তপাত শুরু হয়ে যেতে পারে, সন্তান প্রসবের সময় বাচ্চা আটকে যেতে পারে। ফলে নরমাল ডেলিভারি নাও হতে পারে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। আর সন্তানের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। মায়ের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চা অনেক বড় হয়। ফলে প্রসবের সময় সমস্যা তৈরি হতে পারে। জন্মের পর শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা লো ব্লাড সুগার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইট লবণের কম-বেশি হতে পারে।’
ডা. ফারিয়া আরও বলেন, ‘মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চা ডায়াবেটিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে, তা নয়। তবে, ধরে নিন এক নারীর দুটি সন্তান। তার প্রথম গর্ভধারণের সময় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল না, আর দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের সময় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল। তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যতে বড় হয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’
জাহ্নবী