![খেলাধুলায় সৌদি নারীদের অগ্রযাত্রা](uploads/2024/05/29/a-1716963406.jpg)
সৌদি আরব বরাবরই একটি রক্ষণশীল দেশ ও জাতি হিসেবে পরিচিত। রক্ষণশীল কর্তৃপক্ষের কারণে এই দেশে নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। সৌদি নারীরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন, তারা বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছেন। এমনকি সৌদি নারী ফুটবলারদের দল একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও জিতে নিয়েছে। এ ছাড়া দেশটির প্রধান বর্তমানে নারীদের স্টেডিয়ামে গিয়ে সরাসরি খেলা দেখার অনুমতি দিয়েছেন। যদিও সেখানে তাদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা থাকবে।
সৌদি আরবে মেয়েদের জন্য প্রথম ডেডিকেটেড স্পোর্টস সেন্টার খোলা হয়েছিল ২০১৩ সালে; যেখানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এখানে শারীরিক ফিটনেস, ক্যারাটে এবং ওজন কমানোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য বিশেষ ক্রিয়াকলাপও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে শারীরিক কসরত কিংবা খেলাধুলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে এখন। সৌদি নারীরা এখন ক্রিকেট, ফুটবলের পাশাপাশি গলফ, টেনিসের মতো খেলায়ও অংশ নিচ্ছেন।
ক্রিকেট: সৌদি নারীরা ক্রিকেটে বেশ ভালো অবদান রাখছেন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)-এর সদস্যপদ লাভ করে। সৌদি নারী ক্রিকেট দল তাদের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ খেলে ২০২২ সালের মার্চ মাসে, ওমানের বিরুদ্ধে।
ফুটবল: সৌদি নারীরা ফুটবল খেলায় বেশ এগিয়ে গেছে। সৌদি আরব ২০১৭ সালে মহিলাদের ফুটবল খেলার অনুমতি দেয়। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে মহিলা ফুটবল দলের একটি অনানুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সৌদি নারী ফুটবল দল ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলে এবং প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ সিসিলসকে ২-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করে।
অলিম্পিক: সৌদি আরব ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো মহিলা ক্রীড়াবিদদের অন্তর্ভুক্ত করে। এবং এর ধারাবাহিকতায় তারা ২০১৬ সালেও অলিম্পিকে পুনরায় নারী ক্রীড়াবিদ পাঠায়।
সৌদি নারীদের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা
তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ঘোড়দৌড়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল খেলা। প্রতিযোগিতাটি তিন দিনব্যাপী হয়ে থাকে। এখানে সৌদি আরব ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের নারীরাও অংশ নিয়ে থাকেন। সৌদি আরবে নারীদের জন্য ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা একটি অনুষ্ঠান। নারীদের জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতা ব্যবসায়িকভাবে ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নতির দিকে মূল লক্ষ্য রাখে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সৌদি নারীদের স্বাধীনতা এবং সামাজিক অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি উদার পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং নারীদের প্রতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনগুলো উন্নত করে। এই প্রতিযোগিতা সৌদি নারীদের স্বাধীনতা এবং সম্মান অর্জনে সাহায্য করে এবং তাদের মধ্যে একত্রিত হতে সাহায্য করে। ২০২০-এর ২৯ ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। ‘দ্য সৌদি কাপ’ নামের এই আসরে পুরস্কারের মূল্যমান ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো রক্ষণশীল এই দেশটিতে যেখানে কালো বোরখা ছাড়া নারীদের বাইরে চলাচল করা নিষেধ, সেখানে ‘নিকোলা কারি’ নামে এক নারী জকি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন। যদিও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘সৌদিতে নারীদের অধিকার ভয়ংকর রকম ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করে। তারা আরও জানায়, ‘খেলাধুলায় সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে বিশ্বের চোখে ধুলো দিচ্ছে সৌদি কর্তৃপক্ষ’। কিন্তু সৌদি যুবরাজ এই মানবাধিকার সংস্থাটির কথা কানে না নিয়ে সেই নারী জকিকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেন। সৌদি আরবের রক্ষণশীল সমাজে নারীদের ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ থাকলেও সম্প্রতি দেশটির সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত সমালোচনার মুখে দেশটির নারীরা এখন সীমিত পরিসরে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন। যার সর্বশেষ নজির ঘোড়দৌড়ে নারী জকি রাখার সিদ্ধান্ত।
কয়েকটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সৌদি নারী ঘোড় সওয়ারিরা অশ্বারোহণে অসাধারণ দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০১৮ সালে ‘সামা আল খলিল টিম’ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন সামা হুসেইন। ৮৮তম জাতীয় দিবসে এই দলটি প্রথমবারের মতো ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিল। টুর্নামেন্টে সৌদি আরবের নারী ঘোড় সওয়ারিরা ১৪ মিনিটের মধ্যে ঘোড়দৌড় প্রদর্শন, প্রতিবন্ধকতা লাফিয়ে পার হওয়াসহ আরও কয়েকটি ইভেন্টে অংশ নেন।
জাহ্নবী