টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার চার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার থেকে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের স্কুলগুলো। জেলায় বন্যাকবলিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটার উপজেলার মোট ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ছুটি শেষে গতকাল বুধবার বিদ্যালয় খোলা হয়েছে। চার উপজেলার চরাঞ্চলে কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে ওই এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। বিদ্যালয় খোলার পর বিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী আসলেও অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসতে পারেনি। টানা চার দিনের বৃষ্টি আর বন্যার পানি বেড়েই চলছে। জেলার ৭০টি বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরে ১৭টি, ফুলছড়িতে ২১টি, সাঘাটা ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ ১১টি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়িতে কয়েকটি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ভরতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পানি হয়েছে। শ্রেণিকক্ষেও পানি। যাতায়াতের রাস্তার পানির নিচে পড়ে আছে। রাস্তাগুলোতে প্রায় ২ থেকে ৩ ফুট পানি রয়েছে। রাস্তা পানি নিচে থাকায় চলাচল করতে পারছে না লোকজন। ফুলছড়ি উপজেলার চর পেপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর একই অবস্থা। এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম অভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া তারাপুর, হরিপুর, সাঘাটা উপজেলার ফজলুপুর, গজারিয়া ইউনিয়নের অনেক নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত চারটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। জেলায় ১৮১ স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জি আর (প্রাকৃতিক দুযোর্গ) চারশ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
চর পেপুলিয়া গ্রামের আবদুল্লাহ (৪৫) বলেন, গতকাল থেকে নদীর পানি খুব বাড়ছে। রাতে আমাদের বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। রান্না করতে পারছি না। খুবই কষ্টে আছি। বাড়ির পাশে স্কুলটিতে পানি ঢুকেছে। বন্যার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে পারছে না।
গুপ্তমনি চরের জলিল মিয়া (৫০) বলেন, বন্যার পানি বেড়েই চলছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। বন্যার কারণে অনেক ভোগান্তির মধ্যে আছি। চালডাল সবই আছে,শুধু রান্না করতে পারছি না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, জেলার চার উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল থেকে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে ৭০টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। ১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়ে আগের মতো পাঠদান চালু করা হবে।
গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রে নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।
অপরদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ পরিমাণ পানি বৃদ্ধি ও কমে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানিয়েছেন, নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বড় বন্যার সম্ভাবনা নেই। তিনি মুঠোফোনে বলেন, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
রফিক খন্দকার/এমএ/