রাজধানীসহ সারা দেশে দ্রব্যমূল্য ও খাবারের মাণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এখন তৎপর। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীদের অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হচ্ছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে ‘বাংলাদেশ কনজুমার রাইট সোসাইটি’ নামের এই ভুয়া সংগঠন।
১০ সদস্যের এই দলটির পঞ্চগড় শহরের স্যামসাং শোরুমের তৃতীয় তলায় অফিস রয়েছে। মাইক্রোবাস ভাড়া করে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তারা ভুয়া অভিযান চালান। রীতিমতো ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের’ দোকান খুলে বসেছেন।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার সাতমেরা বাজারে দলবল নিয়ে তারা অভিযান চালাতে গিয়েছিলেন। অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা পড়তে হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হাতে। পরে তাদের পুলিশে দেওয়া হয়।
আটক হওয়া ওই ভুয়া সংগঠনটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম (৫২) জেলার বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকায় বাসিন্দা। সংগঠনটির সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম (৪৭) সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝাকুয়াকালী এলাকার বাসিন্দা ও সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম (৪৫) জেলা শহরের মসজিদপাড়ার বাসিন্দা। এই তিনজনের মধ্যে আমিনুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন।
বাংলাদেশ কনজুমার রাইট সোসাইটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার স্বাক্ষরিত পঞ্চগড় জেলা কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহসভাপতি লুপনা আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া পায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক সোলেমান আলী, কোষাধক্ষ্য জাহাঙ্গীর আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক সফিউল আলম প্রধান, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাজিদা আক্তার ও জেসমিন আক্তার।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার সাতমেরা বাজারের দোকানি তরিকুল ইসলাম বলেন, তারা চারজন একটি মাইক্রোবাস করে আমাদের বাজারে আসে। এ সময় নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে আমাদের জানান তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে তারা প্রথমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে চান। পরে দুই হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা নিয়ে দ্রুত চলে যান। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে জানতে পারি তারা প্রতারক।
এ বিষয়ে আটক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে। আমরা প্র্যাকটিস করছিলাম। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য ছোট ছোট জরিমানা করেছি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের বলেছেন, আমরা ছোটখাটো জরিমানা করতে পারবো।’ কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, ‘এই চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করছিল। শুধু পঞ্চগড় নয়, অন্য জেলাতেও তারা এমন করেছে। তাদের সঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কোনো সম্পর্ক নেই। কখনই ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ পরিচালনা হয় না। তাদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরাই মামলা করেছে।’
ভুক্তভোগীরা জানান, বাংলাদেশ কনজুমার রাইট সোসাইটি পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির দশজন সদস্য বিভিন্ন স্থানে নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও জরিমানা আদায় করে আসছিলেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষের দোকানে অভিযান চালিয়ে হাতিয়ে নিয়েছিলেন টাকা। গত সোমবার তাদের জরিমানা করা একটি রশিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
দুপুরে একই কায়দায় মাইক্রোবাস নিয়ে তারা অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনজনকে আটক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী। পরে তাদের পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।