![সুযোগ নিচ্ছেন না জাহাজ নির্মাণ শিল্পের খেলাপি উদ্যোক্তারা](uploads/2023/11/28/1701153640.sgip.jpg)
দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দেওয়া ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ ঋণের বিপরীতে রিটার্ন বা সুদ ও আসল কোনোটিই ব্যাংকগুলো ফেরত পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়া ঋণ পুনঃতফসিলীকরণে দফায় দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে না খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ শিল্পে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান তহবিলও আছে। গত জুন মাসে প্রথম দফা সহজ শর্তে এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের খেলাপি হয়ে পড়া ঋণ ৯০ দিনের মধ্যে পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেওয়া হয়। সাড়া না পেয়ে এরপর সেপ্টেম্বরে আরেক দফা দুই মাস সময় বৃদ্ধি করে নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত করা হয়। তাতেও পুনঃতফসিলীকরণে প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি ব্যাংকগুলো।
অবশেষে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও সময়সীমা বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এ বিষয়ে নতুন সার্কুলার দিয়েছে।
এতে বলা হয়, পূর্ববর্তী সার্কুলার লেটারে বর্ণিত জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলীকরণের লক্ষ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ নগদে জমাদানপূর্বক গ্রাহক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন দাখিলের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
‘কিন্তু নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বিভিন্ন কারণে এ খাতের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক অদ্যাবধি সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে ডাউন পেমেন্ট প্রদান ও অন্যান্য শর্তাদি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বরাবর আবেদন দাখিলে সমর্থ হননি মর্মে জানা যায়। এমতাবস্থায়, গ্রাহক কর্তৃক ডাউন পেমেন্ট বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ নগদে জমাদানপূর্বক ব্যাংকের কাছে আবেদন দাখিলের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।’
২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে সহজ শর্তে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বকেয়া ঋণ পরিশোধে ১০ বছর সময় দেওয়া হয়। তাতে প্রথম তিন বছর মরেটরিয়াম সুবিধা দেওয়ার কথাও বলা হয়। পরবর্তী সময়ে এ মরেটরিয়াম সুবিধা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় তখন বলা হয়, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ-এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক পত্রে বর্ণিত নির্দেশনা যথাযথভাবে এর ১৮ (ছ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো।’
সংকট কাটিয়ে উঠতে করোনা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে সরকার। এর ফলে জাহাজ নির্মাণ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১ সালের বকেয়া ঋণের ৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে আরও দুই বছর মরেটরিয়াম সুবিধা নিতে পারত খেলাপি হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠান।
এরপর গত জুনে আরও ছাড় দিয়ে মাত্র আড়াই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের পথ উন্মুক্ত করা হয়। এ দিকে দেশীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নে ২ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এই জাহাজ নির্মাণকারী রপ্তানিমুখী ও স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন, পরিচালনা ও বিকাশের জন্য এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে। তহবিলের আওতায় সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পান এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। ব্যাংকগুলো ১ শতাংশ সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা নিতে পারে।