![চার বছরে এডিপির সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন](uploads/2024/06/27/ADP-1719471508.jpg)
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত- এগারো মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বাস্তবায়নের হার গত চার অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। মোট এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার মধ্যে আলোচ্য এগারো মাসে খরচ করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা জুন মাসের মধ্যে খরচ করতে হবে। একক মাস হিসেবে শুধু মে মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের চেয়েও কম। কারণ, গত বছরের মে মাসে বাস্তবায়ন হয়েছিল ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
বুধবার (২৬ জুন) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার খবরের কাগজকে বলেন ‘আমি এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ রিপোর্ট হাতে পাইনি। তাই না দেখে কিছু বলা যাবে না’।
তবে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও বাস্তবায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার কমে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ডলারের সংকট। তবে জুনে বাস্তবায়নের হার বেড়ে যাবে। কারণ শেষ মাসে অনেক পেমেন্ট থাকে। ঠিকাদাররা তা পাবেন। এ জন্য বাস্তবায়নের হার বাড়বে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার গত বছরের মতো বাস্তবায়নের হার বাড়বে না। কারণ নির্বাচনের বছর থাকায় প্রথম দিকে কাজের গতি কম ছিল। আর ডলারসংকট তো প্রথম থেকেই ছিল।’
আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এগারো মাসে বাস্তবায়নের হার ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে ৩২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে সবচেয়ে কম ২৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। আর ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১ হাজার ৬৪৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমে ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরে সংশোধন করে কমিয়ে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯২ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ মাসে খরচ করতে পেরেছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তবে জুন মাসে খরচ করতে হবে ১ লাখ ৮ হাজার ১৭ কোটি টাকা বা ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
৬ মন্ত্রণালয়ে ও বিভাগ অগ্রগতি ভালো নয়: ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি ৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম বাস্তবায়ন করেছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। ৩২৯ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করতে পেরেছে ৮৯ কোটি টাকা। এর পরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করেছে ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ৩৮৭ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করতে পেরেছে ১১০ কোটি টাকা। ৩০ দশমিক ০৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ৬০১ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ করেছে ১৮০ কোটি টাকা। ৩৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় প্রায় ১ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ৪৪১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ১৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ২৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ৮৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৩৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ভালো অগ্রগতি হয়েছে যেসব মন্ত্রণালয়ের: প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই বিভাগ ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করতে পেরেছে ৬ কোটি টাকা। এরপরই জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় ৯২ দশমিক ১৪ শতাংশ। তারা ৩ হাজার ৮৪২ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ করতে পেরেছে ৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ বাস্তবায়নে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। তারা ২ হাজার ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপরই রয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তারা ৯১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ৭১৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাস্তবায়নে পঞ্চম স্থানে রয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ৩৭ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ১৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে খরচ করেছে ১১৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ৩০ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ২৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা খরচ করে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৭৭ দশমিক ০১ শতাংশ।