![হবিগঞ্জে বন্যায় বেড়েছে ডিঙির চাহিদা](uploads/2024/06/26/Habiganj-Boat-1719387789.jpg)
হবিগঞ্জের হাওরগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। এই সময়টাতে হাওর পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান সঙ্গী নৌকা। দৈনন্দিন নানা কাজে প্রতিটি পরিবারেই ডিঙি নৌকা এখন অপরিহার্য বাহন। বর্তমানে ছোট এই ডিঙি নৌকার কয়েক গুণ চাহিদা বাড়িয়েছে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি। ফলে হবিগঞ্জের বাজারগুলোতে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে ডিঙি। এমনকি সিলেটের পাইকাররাও হবিগঞ্জ থেকে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার পাঁচ উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও লাখাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বসেছে নৌকার হাট। একই সঙ্গে নৌকা বানাতে ব্যস্ত সময় কাটছে কারিগরদের। ব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে, দম ফেলার ফুরসত নেই। দিন কিংবা রাত, সমান তালে নৌকা বানাতে হচ্ছে কারিগরদের।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঠের মানের ওপর নৌকার দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। নৌকা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বেলজিয়াম ও মেহগনি গাছ। কাঠের মান ভেদে ২০-২৪ ফুটের প্রতিটি নৌকা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়।
বিক্রিতাদের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন বাজারে ১০০-১৫০টি ডিঙি নৌকা বিক্রি হচ্ছে। এমন চাহিদা থাকবে আগামী এক মাস পর্যন্ত। যেখানে ডিঙি নৌকাকে ঘিরে ব্যবসা হবে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বন্যার কারণে নৌকার চাহিদা বাড়ায় হঠাৎ করেই বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে নিম্নআয়ের মানুষ প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ডিঙি কিনতে এসেছেন ফরিদ উদ্দিন। তিনি এখান থেকে অন্তত ২০টি নৌকা নিতে চান। ফরিদ বলেন, ‘বন্যার কারণে ফেঞ্চুগঞ্জের অধিকাংশ জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তাই নৌকার চাহিদা বেড়েছে। দুই দিন আগেও আমি ২০টি নৌকা নিয়ে গেছি, আজ আবার এসেছি। তবে বাজারে এখন নৌকা খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।’
ইনাতগঞ্জ থেকে নৌকা কিনতে আসা আফজাল মিয়া বলেন, ‘বন্যায় চারপাশ ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই নৌকা কিনতে আসছি। নৌকা ছাড়া কোনো গতি নাই।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার দাম একটু বেশি। বিক্রেতারাও দাম ছাড়ছেন না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরছি, কেউই দাম ছাড়ছেন না।’
একই এলাকার আরেক ক্রেতা হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের ভাটির মানুষের বর্ষায় নৌকা খুবই দরকার। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে নৌকা লাগে। গরুর জন্য পেনা (কচুরিপানা) কাটতে হয়। আরও নানা কাজে আমাদের নৌকা লাগে। তাই নৌকা কিনতে আইছি।’
তবে বিক্রেতারা বলছেন, নৌকা তৈরির উপকরণ কাঠ ও লোহার দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। যে কারণে বিক্রি বাড়লেও লাভের পরিমাণ সীমিত।
নবীগঞ্জ শহরের হাসপাতাল এলাকার নৌকা বিক্রেতা ঝন্টু দাস বলেন, ‘নৌকা বাজারে নাই। বন্যার কারণে চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। যে কারণে দাম একটু বেশি। এ ছাড়া আগে কাঠের দাম ছিল ২৫০ টাকা ফুট, এখন এটি ৪০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি ছিল ৫০০ টাকা, সেটি এখন ৮০০ টাকা হয়েছে। তাহলে নৌকার দাম তো কিছু বাড়বেই।’
আরেক বিক্রেতা অরুণ কুমার বলেন, ‘দাম যে খুব বেশি বেড়েছে তা না। প্রতিটি নৌকায় ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে। আমরা সীমিত লাভে নৌকাগুলো বিক্রি করে দিচ্ছি। কারণ সবাই এখন বিপদে আছেন, তাদের হাতে টাকা-পয়সা নেই। এটা তো আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আবার কাঠ, লোহা, শ্রমিকের মজুরি বাড়ার কারণে আমাদেরও কিছু করার নেই।’