![সৌদি আরবের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ](uploads/2024/06/27/Saudi-Arab-Trade-1719479416.jpg)
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সৌদি আরবের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এই সময়ে দেশটির উদ্বৃত্তের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪০ কোটি (৪১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) সৌদি রিয়াল বা ১১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। সে হিসাবে আগের মাসের তুলনায় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আরব নিউজের।
সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা, তেলবহির্ভূত (পণ্য ও সেবা) রপ্তানি বাড়ায় দেশটির সামগ্রিক বাণিজ্য উদ্বৃত্তের দেখা পেয়েছে তারা। সৌদি আরবের জেনারেল অথোরিটি অব স্ট্যাটিস্টিকসের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সৌদি আরবের তেলবহির্ভূত রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এই বাণিজ্য উদ্বৃত্তের সংবাদটি এমন সময়ে এসেছে, যখন দেশটি জ্বালানি খাতের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে তেলবহির্ভূত রপ্তানি বাড়ানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অন্যান্য খাতকে শক্তিশালী করতে এবং আরও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক কাঠামো অর্জনে সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরেছে।
খবরে বলা হয়, জাতীয় তেলবহির্ভূত রপ্তানিতে ২০২৩ সালের এপ্রিলের তুলনায় এই বছরের এপ্রিলে ১ দশমিক ৬০ শতাংশের মাঝারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেখানে পুনরায় রপ্তানি করা পণ্য একই সময়ের তুলনায় ৫৬ দশমিক ৪০ শতাংশের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
তবে রপ্তানির বিপরীতে সামগ্রিক বহির্গামী পণ্য সরবরাহ ১ শতাংশ কমেছে। প্রাথমিকভাবে জ্বালানি তেল রপ্তানিতে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ হ্রাসের কারণে সামগ্রিক রপ্তানি কমেছে। ফলস্বরূপ, মোট বহির্গামী সরবরাহে জ্বালানি তেলের অনুপাত ২০২৩ সালের এপ্রিলে যেখানে ছিল ৮০ দশমিক ৬০ শতাংশ, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেটি ৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই সময়ে দেশটির আমদানি ১ দশমিক ৩০ শতাংশের মতো হ্রাস পেয়েছে এবং মার্চেন্ডাইজ ট্রেড ব্যালেন্স সারপ্লাস আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রসঙ্গত, মার্চেন্ডাইজ ট্রেড ব্যালেন্স সারপ্লাস হলো, একটি দেশের রপ্তানি থেকে আসা আয়ের পরিমাণ যখন আমদানিতে করা ব্যয়ের চেয়ে বেশি হয়।
খবরে বলা হয়, গত মাসের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরবের পণ্য রপ্তানির মূল্য ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, তেলবহির্ভূত রপ্তানি ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং আমদানি ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ কমেছে। তবে এসব সত্ত্বেও দেশটির বাণিজ্য ভারসাম্য যথেষ্ট বেড়েছে।
আমদানির বিপরীতের তেলবহির্ভূত পণ্য রপ্তানির অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলের ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই হার ৩৭ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই উন্নতির পেছনে তেলবহির্ভূত রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আমদানি হ্রাসের ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরব নিউজ জানায়, সৌদি আরবের তেলবহির্ভূত রপ্তানির মধ্যে শীর্ষ স্থানে ছিল প্লাস্টিক, রাবার এবং এই দুটি থেকে তৈরি করা পণ্য। মোট রপ্তানিতে এর অবদান ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং এপ্রিল ২০২৩ সালের তুলনায় এই ক্যাটাগরির পণ্য রপ্তানি ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
রাসায়নিক পণ্যগুলোও দেশটির রপ্তানিতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যার অবদান ছিল তেলবহির্ভূত রপ্তানির ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। তবে রাসায়নিক পণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ, যার পরিমাণ ছিল মোট আমদানির ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায় ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া পরিবহন সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ আমদানির পরিমাণ ছিল মোট আমদানির ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এটি আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।
খবরে বলা হয়, সৌদি আরবের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার চীন। চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটির মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশই ছিল চীনে। এ ছাড়া জাপান ও ভারতে যথাক্রমে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১০ শতাংশ পণ্য ও সেবা রপ্তানি হয়েছে।