যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে। মন্দার কবল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি প্রাথমিক অনুমানের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। যুক্তরাজ্যের সংশোধিত সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে। খবর বিবিসির।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ৬০ শতাংশ।
বিবিসি বলছে, ‘অর্থনীতির শক্তি’ দেশটির সাধারণ নির্বাচনে প্রচারের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনীতির গতি মন্থর ছিল।
অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী চান, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ক্রমাগত বৃদ্ধি পাক। কারণ সাধারণত এর অর্থ হলো মানুষের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, সরকার আরও বেশি কর পাচ্ছে এবং শ্রমিকদের বেতনও আরও ভালো পরিমাণে বাড়ছে।
ওএনএস বলেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) মূল চিত্রটি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী ছিল এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি বৃদ্ধির গতিকে উচ্চতর করতে সাহায্য করেছে। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির মধ্যে হেয়ারড্রেসার, ব্যাংক ও আতিথেয়তার মতো ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যদিও ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যান দিয়ে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির সংশোধন করা হয়েছে, তবে আরও তথ্য সংগ্রহের ফলে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিম্নমুখী পরিসংখ্যানের দ্বারা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যানের কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সংগঠন জি৭ গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ছিল যুক্তরাজ্য।
প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক নতুন সংশোধিত প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার পরিবারের জন্য আরও নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে আমাদের দলের পরিষ্কার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তবে গত ১৪ বছরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙেচুরে ফেলার জন্য ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ নেতাদের অভিযুক্ত করেছে লেবার পার্টি। লেবার পার্টি বলছে, কনজারভেটিভরা সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছেন।
লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘নির্বাচিত হলে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাবে এবং তারা দেখিয়ে দেবে যে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনাসহ দেশটি ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত। আমরা এটা এ জন্য করব, যাতে আমরা জনগণের পকেটে তাদের অর্থ ফেরত দিতে পারি।’
লিবারেল ডেমোক্র্যাট ট্রেজারির মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেছেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন সত্ত্বেও এই পরিসংখ্যান ক্রমবর্ধমান খরচের বোঝা- যেমন বাড়ি কেনার জন্য বন্ধকি ঋণের কিস্তি, গোপনে বাড়ানো কর এবং সাপ্তাহিক খাদ্য কেনাকাটার খরচ আকাশচুম্বী হওয়ায় কষ্টে থাকা পরিবারগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক হিসেবে কাজ করবে না।’
গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসে কর্মরত যুক্তরাজ্যবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেছেন, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জিডিপিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ‘মূলত ভোক্তা ব্যয়ের (পূর্বাভাসের) ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের কারণে।’
ওএনএস বলেছে, বিনোদন ও সংস্কৃতির পাশাপাশি আবাসন ও খাদ্যের জন্য ব্যয় বেড়েছে। তবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বাড়তে থাকে।
অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেন, এর অর্থ হলো গত বছরের শেষে পরিবারের সঞ্চয়ের হার ১০ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে। এটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের থেকে সর্বোচ্চ হার ছিল, যখন কোভিড মহামারি চলাকালীন সঞ্চয় বাড়ানো হয়েছিল।
পল ডেলস আরও বলেন, নতুন পরিসংখ্যানটির পরামর্শ হলো, ‘আগামী সপ্তাহে যিনিই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হবেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় তিনি উপকৃত হতে পারেন।’
ব্রিটিশ অর্থনীতিবিষয়ক পরিষেবা কোম্পানি এজে বেলের আর্থিক বিশ্লেষণের প্রধান ড্যানি হিউসন বলেছেন, ‘এটি (প্রবৃদ্ধি) অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষুদ্রতম অংশ। কিন্তু যখন এটি যুক্তরাজ্যের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আসে, তখন প্রতিটি (অংশ) সামান্য হলেও সত্যিই তা সাহায্য করতে পারে।’
ড্যানি হিউসন আরও বলেন, ‘কীভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যেতে পারে তার বিবরণ নিয়ে ভিন্নতা থাকলেও দলীয় ইশতেহারের আগাগোড়ায় রয়েছে এই তথ্যটি। (আসলে) একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি দেশের জন্য সম্পদ তৈরি করে, জনগণের পকেটে আরও অর্থ রাখে এবং ভঙ্গুর কোষাগারে করের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।’