![পাম অয়েলের দাম এক মাসে সর্বনিম্ন](uploads/2024/06/26/pam-oil-1719390211.jpg)
মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের দাম আবারও কমেছে। ভোজ্যতেলটির ভবিষ্যৎ সরবরাহ (ফিউচার) চুক্তি মূল্য গতকাল মঙ্গলবার প্রায় এক মাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুর্বল চাহিদা ও ক্রমবর্ধমান মজুত নিয়ে উদ্বেগের কারণে টানা তৃতীয় সেশনে পাম অয়েলের দরপতন হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বুর্সা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে সেপ্টেম্বরে সরবরাহের চুক্তি বেঞ্চমার্ক পাম অয়েলের দাম ৪৭ রিঙ্গিত বা দশমিক ৯৫ শতাংশ কমেছে। মধ্যাহ্ন বিরতির মধ্যে ভোজ্যতেলটির দাম কমে টনপ্রতি ৩ হাজার ৮৬১ রিঙ্গিতে (৮২০ ডলার ৪৪ সেন্ট) নেমে এসেছে। এই দাম, গত ২৭ মের পর থেকে যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বনিম্ন।
মুম্বাইভিত্তিক ট্রেডিং ফার্ম কান্তিলাল লক্ষ্মীচাঁদ অ্যান্ড কোম্পানির ট্রেডিং ম্যানেজার মিতেশ সাইয়া বলেন, ‘দুর্বল রপ্তানি, চীনের পক্ষ থেকে কম চাহিদা এবং পাম তেল ও সয়াবিন তেলের দামের ব্যবধান কম থাকায় ভোজ্যতেলটির দামের ওপর প্রভাব পড়ছে।’ মিতেশ সাইয়া আরও বলেন,
মজুতের পরিমাণ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্যের দৃষ্টিভঙ্গিটা হতাশাজনক।
দুজন নেতৃস্থানীয় ক্রেতা এবং একজন কাস্টমস কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জুনে সরবরাহের চুক্তিতে রেকর্ড পরিমাণ ৫ লাখ টন সূর্যমুখী তেল কিনেছে। কারণ শীর্ষস্থানীয় সরবরাহকারী রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রতিযোগিতার ফলে এই সূর্যমুখী তেলের দাম সয়া অয়েল ও পাম অয়েলের চেয়ে সস্তা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, চলতি জুন মাসে মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রপ্তানি এখনো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। কার্গো জরিপকারীরা অনুমান করেছেন যে, মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েলের শিপমেন্ট এক মাস আগের তুলনায় ৮ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
গত ১ থেকে ২৫ জুনের মধ্যে পাম অয়েলের পরিসংখ্যান বুধবার (২৬ জুন) প্রকাশিত হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিং রেটিং সংস্থা ফিচ রেটিং বলেছে, তারা মনে করছে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বৈশ্বিক উদ্ভিজ্জ তেলের সরবরাহ চুক্তিমূল্য কমে যাবে। কারণ লা নিনা আবহাওয়ার কারণে ভালো বৃষ্টিপাত হবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেল সরবরাহ বাড়বে। বিশেষ করে পাম অয়েলের বৃহত্তর উৎপাদক ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদন বাড়বে।
প্রসঙ্গত, লা নিনা হলো প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব-মধ্য অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ঠাণ্ডা তাপমাত্রার একটি ক্রমাগত অবস্থা। সাধারণত প্রতি দুই থেকে সাত বছর পরপর এমনটা ঘটে এবং এটি এল নিনো আবহাওয়ার বিপরীত অবস্থা। বর্তমানে (২০২৪ সালের জুন মাসে) প্রশান্ত মহাসাগরে একটি দুর্বল লা নিনা বিদ্যমান।
এক বিবৃতিতে ফিচ রেটিং বলেছে, ২০২৪ সালের এপ্রিলের শুরুতে প্রতি টনের দাম ৯৫০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পরে, স্পট মার্কেটে পাম অয়েলের দাম কমে গেছে। ফিচ রেটিংসের অনুমান হলো, তারা ২০২৪ সালে পাম অয়েলের দাম আরও কমে টনপ্রতি গড়ে ৭৭৫ ডলারে নামবে।
এদিকে চীনের দালিয়ানে (দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য ১ দশমিক ১০ শতাংশ কমেছে। আর বাজারটিতে পাম অয়েলের দাম কমেছে ১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে (সিবিওটি) সয়াবিন তেলের দাম দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে।
পাম তেলের দাম অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলের দামের সঙ্গে ওঠানামা করে। কারণ এই তেল বিশ্ববাজারে একই গ্রাহক বা ক্রেতাদের আকর্ষণ করে থাকে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সামান্য পরিবর্তিত হয়েছিল। কারণ চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হওয়ার আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবং রাশিয়ার জ্বালানি তেল পরিশোধন কারখানায় ইউক্রেনীয় আক্রমণের কারণে সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর সৃষ্ট উদ্বেগ কমে গেছে।
খবরে বলা হয়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তি মূল্য কমে গেলে, বায়োডিজেলের কাঁচামাল হিসেবে পাম অয়েলের ব্যবহার আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে ওঠে।
রয়টার্সের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষক ওয়াং তাও বলেছেন, পাম অয়েলের দাম আরও কমে ৩ হাজার ৮১১ থেকে ৩ হাজার ৮৪৩ রিঙ্গিতের মধ্যে নেমে আসবে। কারণ ইতোমধ্যেই প্রতিটনের দাম ৩ হাজার ৮৮৯ রিঙ্গিত থেকেও নিচে নামতে শুরু করেছে।