ঢাকা ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার তাগিদ

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৯:২১ এএম
তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার তাগিদ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, অবাধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে প্রবেশের অধিকার চেয়ে সাংবাদিকদের দাবি ‘ইমোশনাল’। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আচরণের সঙ্গে একমত হতে পারেননি এই বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাংবাদিকরা। 

কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নমুনা গবেষণা নিয়ে ‘লাল-নীল’ সূচক সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশের সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম প্রধান ‘কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন’। আর দশটি এ ধরনের স্পর্শকাতর স্থাপনার মতোই এর নিরাপত্তা অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকা প্রয়োজন। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে তথ্য সরবরাহের প্রচলিত ধারা আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এসব তথ্য দেশের অর্থনীতির জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষকে জানানোর ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমই সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে। 

আকস্মিকভাবে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা না দিয়ে এর বিকল্প ব্যবস্থা করে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের জন্য সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করলে সাংবাদিকরা তথ্যপ্রাপ্তির সুব্যবস্থা সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে পারতেন। তবে জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে অ্যাক্রিডিয়েটেড ও ব্যাংকের অনুমোদিত সাংবাদিকদের জন্য আলাদা অনলাইন পোর্টালে প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা করলেও সাংবাদিকরা দেশের অর্থনীতির আসল চিত্র জনগণ ও সরকারের কাছে তুলে ধরায় কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে পারতেন। 

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো আমাদের তথ্য অধিকার আইনে মূল চেতনা তথ্যকে অবারিত করা। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে। দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে তথ্য জানতে চান তা ব্যক্তিগত তথ্য নয়, যা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন। সাংবাদিকরা যা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান, তার সবই সাধারণ মানুষের তথ্য চাহিদা পূরণ করার উদ্দেশ্যে চাওয়া। এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন ও হুইসেল ব্লোয়ার আইনে এ অধিকার দেওয়া আছে। আবার ওই একই আইনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য সংবেদনশীল হিসেবে গোপনীয় রাখার বাধ্যবাধকতা আছে তাও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।’ 

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘তথ্য না দিলে গুজব সৃষ্টি হয়। সেটি বিপজ্জনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তথ্য ব্যবস্থাপনা থাকা উচিত। প্রবেশাধিকার সংকুচিত করে তথ্যপ্রবাহ বন্ধ করা আদর্শ পথ নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে একটা ভুল-বোঝাবুঝি বা কমিউনিকেশন গ্যাপ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে যে সাংবাদিকরা ইচ্ছামতো বাংলাদেশ ব্যাংকে ঘোরাফেরা করতে চান। এটি ঠিক নয়। নিয়মিত তথ্য পেলে সাংবাদিকদের তো বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন তখন প্রবেশের প্রয়োজন নেই। সাংবাদিকদের এত সময়ও নেই।’

পরামর্শ দিয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘তিনটি উপায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্যপ্রবাহ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এর একটি হলো তাৎক্ষণিক এবং অনলাইন বা ওয়েবসাইট। দ্বিতীয়টি হলো নিয়মিত ব্রিফিং। আর তৃতীয়টি হলো জরুরি সংবাদ সম্মেলন। ব্রিফিং আর সংবাদ সম্মেলনের পার্থক্য হলো একটি একতরফা আর অন্যটি ইন্টারঅ্যাকটিভ।’

তিনি বলেন, ‘এর বাইরে যদি বিশেষ কোনো কর্মকর্তার সাক্ষাৎ চেয়ে কোনো সাংবাদিক অনুমতি পেয়ে যান সেটি রুদ্ধ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা কর্তৃক সাংবাদিককে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়ার স্বাধীনতার ব্যাপারে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ থাকা যাবে না।’

এ প্রসঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘‘যা হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রতি এত ওপেনলি কঠোর না হলেও পারত বাংলাদেশ ব্যাংক। আমি মনে করি, একটা পয়েন্টে গিয়ে আমাদের থামতে হবে। সবাইকে ছাড় দিয়েই একটা বোঝাপড়া তৈরি করতে হবে। আমরা পেশাদার সাংবাদিক আর ওনারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকার। আমাদের উভয়ের দায়িত্ব হলো দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা। কোনো পক্ষই যেন সৃষ্ট বিষয়গুলো ‘ইগো’ হিসেবে না নেয়।”

শামসুল হক জাহিদ আরও বলেন, ‘‘আত্মসমালোচনা করে আমি বলতে পারি যে আমরা ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘রুলস অব বিজনেস’ ও বিশেষায়িত কোর অর্থনৈতিক ইস্যুসমূহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখি না। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ন্যূনতম ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি (আর্থিক বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান) নেই। যে রিপোর্টটি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটা একেবারেই ‘অনৈতিক কাজ’ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব কক্ষে সব ফাইলেই সাংবাদিকদের অ্যাকসেস থাকতেই হবে, এটা ঠিক নয়। এতটা অবারিত সুযোগ থাকা উচিত নয়। আমাদের সময়ে আমরাও অনেক কর্মকর্তার কক্ষে যেতাম। সামনেই ফাইলের স্তূপ থাকত। আমাদের বলে দিতেন এটা দেখতে পারবেন। (আরেকটা দেখিয়ে) ওটা নয়। এইটুকু সীমাবদ্ধতা দেওয়ার অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তথ্যপ্রবাহের সুযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক অবরুদ্ধ করে দেবে।’’

অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞজনদের অনেকেই বলেছেন, বিশ্বের সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই সাংবাদিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রাষ্ট্রীয় ও সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে তথ্য প্রকাশ করে থাকে। কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে সাধারণের অবাধ যাতায়াত নিরাপত্তাঝুকিঁ তৈরি করতে পারে। দু-একজন গভর্নর তাদের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ প্রবেশাধিকার দিয়েছেন সত্য, কিন্তু এটি ‘গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিস’ নয়।

বেসরকারি খাতে দেশের একজন শীর্ষ ব্যাংকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। এখনো তারা চাইলে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে পূর্বানুমতি নিয়ে তার কাছে যেতে পারেন।

সাংবাদিকবান্ধব এই ব্যাংকার বলেন, “আমার পক্ষে এ ক্ষেত্রে বক্তব্য দেওয়াটা ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’র মতো পরিস্থিতি। নাম-পরিচয় বলা যাবে না। নিরপেক্ষভাবে যদি বলি, এতদিন অবাধে প্রবেশের সুযোগ ছিল। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা দিচ্ছে না। এখানে সাংবাদিকদের দাবি হলো একেবারেই ‘ইমোশনাল ডিমান্ড’। সাংবাদিকরা যখন তখন যত্রতত্র রুমে রুমে যাবেন, এটা ঠিক নয়। আবার আমি এটাও বলব যে দেশের স্বার্থে যেসব তথ্য প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা যেন সাংবাদিকরা পান- সেটাও বাংলাদেশ ব্যাংককে নিশ্চিত করতে হবে।” 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নিয়মের মধ্যে তথ্য শেয়ার করে। রুমে রুমে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা ঠিক নয়। আমাদের সবাইকে নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ 

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব তথ্য স্পর্শকাতর নয় তা তো দেশের স্বার্থেই জনগণকে অবহিত করতে হবে। সুতরাং এসব তথ্যপ্রবাহে এত রাখঢাক না করাই উত্তম।’

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এটি একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানও বটে। এর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে অনেক তথ্য এবং ভৌত ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরির পর এ ‘সুরক্ষা’র বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। এবার যে নিষেধাজ্ঞা বা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, সেটি শুধু সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে হলে প্রশ্ন থেকেই যাবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী, চাকরির তদবিরকারী ও অন্য সবার ক্ষেত্রেও এ কড়াকড়ি সমানভাবে আরোপিত হলে বোঝা যাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সত্যিকার অর্থেই নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাতেই কেবল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক গাম্ভীর্য ও স্বাতন্ত্র্য অটুট থাকবে।

মিডিয়ার প্রবেশাধিকার খর্ব করার রীতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত ও তৎপরবর্তী আচরণে সাংবাদিকরা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে গভর্নরের তিক্ততা সাধারণের আলোচনায় আছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও গণমাধ্যমের মধ্যে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আর এই দূরত্ব নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংককেই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘প্রবেশাধিকার যতটুকুই দেওয়া হোক না কেন, তা যেন মর্যাদাপূর্ণ হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। নিরাপত্তারক্ষী থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত যেন সবাই সাংবাদিকদের দেওয়া অধিকারটুকুর প্রতি মর্যাদাশীল আচরণ করেন।’

এদিকে গত ১৫ মে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অবাধ তথ্যপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংরক্ষিত সকল প্রকাশযোগ্য অর্থনৈতিক তথ্য ও উপাত্ত ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে আসছে। কোনো বিশেষ প্রয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রবেশ পাস সংগ্রহ করে উক্ত কর্মকর্তার কাছে সংবাদকর্মীরা প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাও নিতে পারেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে প্রেস কনফারেন্স, প্রেস রিলিজ ও অন্যান্য মাধ্যমে সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করছে। সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে সংবাদকর্মীদের প্রবেশ ও তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিষয়টি স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কিত গণমাধ্যমে প্রদানযোগ্য তথ্য প্রদান, তার ব্যাখ্যা ও সম্পূরক তথ্যাদি দেওয়ার জন্য নির্বাহী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা মুখপাত্র এবং পরিচালক পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা সহকারী মুখপাত্র হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। যেকোনো সংবাদকর্মী অফিস চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনে প্রবেশ করে উল্লিখিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগপূর্বক তথ্য সংগ্রহ ও বক্তব্য গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের কাছে সকল প্রদানযোগ্য তথ্য প্রদানের জন্য বদ্ধপরিকর। সে আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্ণিত পদ্ধতিতে তথ্য সরবরাহ ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করছে। জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।

আরও পড়ুন:

> ব্যাংকিং খাতে সুশৃঙ্খলা আনতে সফল হবে কি বাংলাদেশ ব্যাংক?
> দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি যুক্তরাজ্যের

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:২৬ এএম
প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি যুক্তরাজ্যের
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে। মন্দার কবল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি প্রাথমিক অনুমানের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে। যুক্তরাজ্যের সংশোধিত সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে। খবর বিবিসির।

অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। গত মাসে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ৬০ শতাংশ। 

বিবিসি বলছে, ‘অর্থনীতির শক্তি’ দেশটির সাধারণ নির্বাচনে প্রচারের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনীতির গতি মন্থর ছিল।

অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী চান, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ক্রমাগত বৃদ্ধি পাক। কারণ সাধারণত এর অর্থ হলো মানুষের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, সরকার আরও বেশি কর পাচ্ছে এবং শ্রমিকদের বেতনও আরও ভালো পরিমাণে বাড়ছে।

ওএনএস বলেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) মূল চিত্রটি অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে শক্তিশালী ছিল এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতি বৃদ্ধির গতিকে উচ্চতর করতে সাহায্য করেছে। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির মধ্যে হেয়ারড্রেসার, ব্যাংক ও আতিথেয়তার মতো ব্যবসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যদিও ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যান দিয়ে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির সংশোধন করা হয়েছে, তবে আরও তথ্য সংগ্রহের ফলে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিম্নমুখী পরিসংখ্যানের দ্বারা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত ঊর্ধ্বমুখী পরিসংখ্যানের কারণে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর সংগঠন জি৭ গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ ছিল যুক্তরাজ্য।

প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক নতুন সংশোধিত প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছেন। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার পরিবারের জন্য আরও নিরাপদ ভবিষ্যৎ উপহার দিতে আমাদের দলের পরিষ্কার পরিকল্পনা রয়েছে।’

তবে গত ১৪ বছরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙেচুরে ফেলার জন্য ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ নেতাদের অভিযুক্ত করেছে লেবার পার্টি। লেবার পার্টি বলছে, কনজারভেটিভরা সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় করে তুলেছেন। 

লেবার পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘নির্বাচিত হলে লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটাবে এবং তারা দেখিয়ে দেবে যে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনাসহ দেশটি ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত। আমরা এটা এ জন্য করব, যাতে আমরা জনগণের পকেটে তাদের অর্থ ফেরত দিতে পারি।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাট ট্রেজারির মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেছেন, ‘ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন সত্ত্বেও এই পরিসংখ্যান ক্রমবর্ধমান খরচের বোঝা- যেমন বাড়ি কেনার জন্য বন্ধকি ঋণের কিস্তি, গোপনে বাড়ানো কর এবং সাপ্তাহিক খাদ্য কেনাকাটার খরচ আকাশচুম্বী হওয়ায় কষ্টে থাকা পরিবারগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক হিসেবে কাজ করবে না।’

গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসে কর্মরত যুক্তরাজ্যবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেছেন, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে জিডিপিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ‘মূলত ভোক্তা ব্যয়ের (পূর্বাভাসের) ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের কারণে।’

ওএনএস বলেছে, বিনোদন ও সংস্কৃতির পাশাপাশি আবাসন ও খাদ্যের জন্য ব্যয় বেড়েছে। তবে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বাড়তে থাকে।

অর্থনীতিবিদ পল ডেলস বলেন, এর অর্থ হলো গত বছরের শেষে পরিবারের সঞ্চয়ের হার ১০ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে। এটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের থেকে সর্বোচ্চ হার ছিল, যখন কোভিড মহামারি চলাকালীন সঞ্চয় বাড়ানো হয়েছিল।

পল ডেলস আরও বলেন, নতুন পরিসংখ্যানটির পরামর্শ হলো, ‘আগামী সপ্তাহে যিনিই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হবেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় তিনি উপকৃত হতে পারেন।’

ব্রিটিশ অর্থনীতিবিষয়ক পরিষেবা কোম্পানি এজে বেলের আর্থিক বিশ্লেষণের প্রধান ড্যানি হিউসন বলেছেন, ‘এটি (প্রবৃদ্ধি) অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষুদ্রতম অংশ। কিন্তু যখন এটি যুক্তরাজ্যের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে আসে, তখন প্রতিটি (অংশ) সামান্য হলেও সত্যিই তা সাহায্য করতে পারে।’

ড্যানি হিউসন আরও বলেন, ‘কীভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যেতে পারে তার বিবরণ নিয়ে ভিন্নতা থাকলেও দলীয় ইশতেহারের আগাগোড়ায় রয়েছে এই তথ্যটি। (আসলে) একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি দেশের জন্য সম্পদ তৈরি করে, জনগণের পকেটে আরও অর্থ রাখে এবং ভঙ্গুর কোষাগারে করের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।’

দেশি বীজ রক্ষায় সাতক্ষীরার অল্পনার লড়াই

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১৮ এএম
দেশি বীজ রক্ষায় সাতক্ষীরার অল্পনার লড়াই
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামে নিজ বাড়িতে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ করেছেন অল্পনা। ছবি: খবরের কাগজ

বিভিন্ন জায়গা থেকে বীজ তোলা, শুকানো এবং অন্যকে বিতরণ করতে সময় লাগে। তারপরও কষ্ট করে সবকিছু করি। কারণ, হেরে যাবে বলে তো মানুষ লড়াই শুরু করে না। তা ছাড়া সবাই আমার কাছে আসে ভালোবেসে। দানের তো শেষ নেই, দান করলে পুণ্য হয়। এতে আমার মতো আরও পাঁচজন কৃষানি তৈরি হবেন। আর আমি যখন বীজ দিই তখন বলে দিই, দেখেন, এখন দিচ্ছি দ্বিতীয়বার আর দেব না। আমার মতো করে বাড়িতে বীজ তৈরি করে আমাকে দেখাতে হবে। কিছু প্রশিক্ষণ দিলে তারা বীজ তৈরি করে রাখেন। সে বীজ আমাকেও কিছুটা দেন। কথাগুলো বলেছেন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের কৃষি পদকপ্রাপ্ত অল্পনা রানি। ফসলের দেশীয় বীজ রক্ষায় যিনি করে যাচ্ছেন আপ্রাণ চেষ্টা। 

জানা গেছে, মা-বাবার অভাবের সংসারে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় অল্পনা রানিকে। স্বামী গঙ্গারাম মিস্ত্রি ছিলেন ভ্যানচালক। অল্পনাকেও অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতে হতো। একটা সময় ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় অল্পনার বসতভিটাসহ পুরো উপকূলীয় জনপদ। ওই সময় আয়ের কোনো উৎস না থাকায় শিশু সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। দিনের পর দিন থাকতে হয় অনাহারে। আইলার বিভীষিকাময় জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়ে নিজ বসতভিটার ৩৩ শতক জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি রোপণ করেন অল্পনা। একই সঙ্গে শুরু করেন বীজ সংরক্ষণের কাজ।

এর কয়েক বছর পার না হতেই পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করলেন অল্পনা। গঙ্গারামও ভ্যান  চালানো ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী অল্পনার কাজে সময় দিতে থাকেন। এভাবে একসময় অভাব ঘুচেছে গঙ্গারাম-অল্পনা দম্পতির সংসারে। কুঁড়েঘরের বদলে পাকাঘর উঠেছে বাড়িতে। এলাকার লোক এখন এক নামে চেনে অল্পনাকে। তার বাড়িটি এলাকায় ‘কৃষিবাড়ি’ নামে পরিচিত।

অল্পনা রানির বাড়িতে ঢুকতেই দেখা যায়, একটু জায়গাও পতিত পড়ে নেই। নিজ বাড়ির আঙিনা ও বসতভিটাকে ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে তাতে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন বিষমুক্ত শাকসবজি চাষ করছেন। একই সঙ্গে বীজ রাখার ঘরে বয়াম (চীনামাটির বা কাচের তৈরি মোটা বোতল), প্যাকেট ও বস্তায় রাখা হয়েছে বীজ।

বর্তমানে অল্পনা তার কৃষি বাড়িতে দেশীয় জাতের চার শতাধিকেরও বেশি শাকসবজি ও ঔষধি গাছের বীজ সংগ্রহ করেছেন। বীজ প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণের কাজ নিজ হাতেই করেন তিনি।

অল্পনা পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি। কিন্তু এখন হাজার হাজার নারীকে শেখাচ্ছেন কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এলাকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে একটি সমিতিও গড়েছেন তিনি। নাম ‘ধুমঘাট শাপলা নারী উন্নয়ন সংগঠন’। ওই সংগঠনটির সভাপতিও অল্পনা। প্রতি মৌসুমে অল্পনা তার বীজ ভাণ্ডার থেকে শত শত মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করেন।

অল্পনা রানির মতে, স্থানীয় জাতের বীজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। উৎপাদিত ফসলের বীজও সংরক্ষণ করা যায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায় বলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।

স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে অল্পনা বলেন, ‘স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ না করলে কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। এ জন্য স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সাধারণ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। বিষমুক্ত সবজির খামার গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তো বীজ রোপণ করলে খরা হতে পারে, অতিরিক্ত বর্ষা হতে পারে, তখন তো কেনা বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। কাছে টাকা না থাকলে কোম্পানির বীজ কেনা যাবে না। এতে অনেকে চাষাবাদও করতে পারবেন না। আর যখন দেশি বীজ আমার কাছে বয়ামে থাকবে, তখন একবারের জায়গায় পাঁচবার লাগাতে পারব।’

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে তিনি নিজে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে অল্পনা রানি বলেন, ‘আগে দু-একটি বীজ রাখতাম। ২০১২ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ) আমাকে বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝায়। প্রশিক্ষণও দেয়। নানাভাবে সহায়তাও করে। বারসিকের উৎসাহ পেয়েই আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি। যা এক যুগের ব্যবধানে বীজ ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে।’

বীজ সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন জানিয়ে অল্পনা বলেন, ‘কৃষি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক, ২০২০ সালে অন্য পুরস্কার, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। দেশ বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেল আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে আসে। আমার জীবনে আর কী চাওয়ার আছে।’

সিলেটে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচাবাজার, মরিচের কেজি ৪০০ টাকা

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১২ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:১২ এএম
সিলেটে ঊর্ধ্বমুখী কাঁচাবাজার, মরিচের কেজি ৪০০ টাকা
ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের পাইকারি বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচ কেজিতে ২৫০, ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং ধনেপাতা  কেজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা কেজি ও ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি অন্য শাকসবজির দামও বাড়তি। কেজি ৫০ টাকার  নিচে বাজার থেকে কোনো সবজি কেনা যায় না। তবে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছ থেকে দুই-চার টাকা কমে কেনা যায় সব ধরনের শাকসবজি।

সিলেটের খুচরা বাজারগুলোতে টমেটো প্রতি কেজি ১০০, পেঁপে প্রতি কেজি ৫০, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৫০, ঢ্যাঁড়স ৫০, ঝিঙে ৬০, কাঁকরোল ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, মুলা ৬০, পটোল ৫০, বেগুন ৮০, আমড়া ৮০, শসা ১০০, গাজর ১৫০, কচুরমুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁচকলা এক হালি ৬০ টাকা, লতা এক আঁটি ৬০, মিষ্টিলাউ প্রতি পিস ছোট ৬০ টাকা, মাঝারি ৮০ টাকা, বড় ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

গত শুক্রবার সিলেটের বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় আড়তে সরবরাহ কম আসছে, তাই সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের পণ্যে এখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়ান। আগে সিন্ডিকেট করে চাল, তেল, পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হতো। এখন সবজি ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছামতো শাকসবজির দাম বাড়ান। বাজার থেকে সড়কে বা পাড়া-মহল্লায় গিয়ে যারা ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রি করেন তাদের কাছে দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। 

শুক্রবার সকালে সিলেট নগরীর টুকেরবাজার, সোবহানিঘাট সবজির আড়ত ও মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজার, কাজীরবাজার এবং রিকাবীবাজার এলাকার সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলক ক্রেতার আনাগোনা অনেক কম। 

বাজারে সবজি কিনতে আসা নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার লিটন তালুকদার বলেন, ‘শুক্রবারে আমরা শাকসবজি খাই, তাই কিছু সবজি কিনতে এসেছিলাম। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচ, টমেটো, শসা, গাজরের দামে তো আগুন ঝরে। অথচ আগে এই সময়ে আমরা অনেক কম দামে শাকসবজি কিনেছি।’ 

নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সামছু মিয়া বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি ছিল। তাই ক্রেতা অনেক কম। শাকসবজির দাম একটু বেশি এখন। তবে কাঁচা মরিচ, ধনেপাতার দাম বেশি, কারণ আড়ত থেকে আমাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে।’

এদিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক ক্ষতি ও মুনাফা বেশি না হওয়ায় অনেক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এখন শাকসবজি বাদ দিয়ে মৌসুমি ফল বিক্রি শুরু করেছেন। এমনই একজন ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা রইচ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আড়তে শাকসবজির দাম বেশি। কেন বেশি জিজ্ঞাস করলেই আড়তদাররা বলেন, সরবরাহ কম তাই দাম বেড়েছে। এখন আমরা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বেশি মূল্যে সবজি কিনলে খুব একটা লাভ হয় না। তার ওপর এখন বৃষ্টির সময়। সবজি খুব তাড়াতাড়ি পচে যায়। তাই মাঝে মাঝে লাভ তো দূরের কথা, কেনা দামই ওঠে না। তাই কয়েক দিন ধরে আর সবজি বিক্রি করছি না। এখন চিন্তা করেছি কয়েক দিন আম, লটকনসহ মৌসুমি ফল বিক্রি করব। আমার মতো সবজিতে লোকসানের কারণে অনেক ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এখন ফল বিক্রি শুরু করেছেন।

থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবেই রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৯ এএম
থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবেই রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে এবারও থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবের মাইলফলক ধরে রেখেছে। বিগত তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার হ্যান্ডলিয়ের ক্ষেত্রে ৩০ লাখের উপরে যাচ্ছে। ডলারসংকট, এলসি না হওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ও বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দাভাব থাকলেও আমদানি-রপ্তানিতে থ্রি মিলিয়নিয়ারের রেকর্ড ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৪১ হাজার ১৪৬ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়িভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। 
বন্দরের পরিসংখ্যান মতে, বিগত তিন অর্থবছরের থ্রি মিলিয়নিয়ার রেকর্ড ধরে রাখার পাশাপাশি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও ১১ কোটি টনের ঘরেই রয়েছে। তবে জাহাজের সমস্যায় এবার ছন্দপতন হচ্ছে। বিগত তিন অর্থবছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা ৪ হাজারের উপরে। এবার এ সংখ্যা চার হাজারের নিচে নেমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক পরিবহন মোহাম্মদ এনামুল করিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবের রেকর্ড ধরে রেখেছে। তবে জাহাজ কম আসার কারণ হলো আগে তিনটি জাহাজে যে পরিমাণ কনটেইনার বা কার্গো আসত এখন দুটি জাহাজে সেই পরিমাণ কনটেইনার ও কার্গো আসছে। ফলে জাহাজের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু কার্গো ও কনেইটার পরিবহন ঠিকই রয়েছে।’ 

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৪১ হাজার ১৪৬ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরে গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৫৩টি জাহাজ ভিড়েছে। এর মাধ্যমে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।

এর আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪ হাজার ২৩১টি জাহাজ ভিড়ে। এর মাধ্যমে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৪ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। 

২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬২টি জাহাজের মাধ্যমে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস কনটেইনার ও ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। 

পরিসংখ্যান মতে, গত তিন বছর ধরে জাহাজের সংখ্যা ৪ হাজারের কোটা পূরণ করলেও এবার এর ছন্দপতন হতে পারে। কারণ জাহাজের গড় আগমন হিসেবে প্রতিমাসেই বিগত সময়ের তুলনায় কম এসেছে জাহাজ। তবে এবার কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে গত বছরের তুলনায়।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট জাহাজ এসেছে ৩ হাজার ৬৪৩টি। সে হিসাবে প্রতিমাসে গড়ে ৩৩১টি জাহাজ এসেছে। গত জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৩৬৯টি, ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন ২৯৬টি জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

চলতি জুন মাসে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জাহাজ ভিড়তে পারে বন্দরে। সে হিসাবে কোনোভাবেই ৪ হাজার জাহাজ ভিড়ানোর মাইলফলকে পৌঁছছে না চট্টগ্রাম বন্দর।

এদিকে এগারো মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৪৯ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। ফলে এবার কার্গো হ্যান্ডলিং গত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে আমদানি কার্গো ১০ কোটি ৬৭ লাখ ৮ হাজার ১৭৫ টন, রপ্তানি কার্গো ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৪ টন।
এ এগারো মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯১৭ টিইইউএস। যার গড় প্রতি মাসে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩ টিইইউএস। যদিও চলতি জুন মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ বাকি থাকতে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাইলফলক ছুঁয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ কম এলেও যে জাহাজগুলো এসেছে সেগুলো আগের চেয়ে অনেক বড়। অনেক বেশি পরিমাণে কনটেইনার নিয়ে জাহাজ এসেছে বন্দরে। ফলে বছরজুড়ে কনটেইনার আসার পরিমাণটা ঠিকই ছিল। কনটেইনার হ্যান্ডলিং থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবে রয়েছে। আমাদের কার্গো হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। এখন বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারছে।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নিয়ার ক্লাবের রেকর্ড ধরে রেখেছে এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। কারণ ব্যবসা বাণিজ্যের যে অবস্থা চলছে এতে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এলসি করতে পারছেন না। দেশে ডলারসংকট। এসব কিছুর মধ্যে যে বন্দরের এ অর্জন এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।’

রাজশাহীতে অনাবৃষ্টিতে আউশ চাষ ব্যাহত

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৩ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ১১:০৩ এএম
রাজশাহীতে অনাবৃষ্টিতে আউশ চাষ ব্যাহত
পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া ধান খেত। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীর কুন্দুলিয়া যোধপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

আষাঢ় মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চললেও রাজশাহীতে বৃষ্টি নেই। ভরা বর্ষা মৌসুম সত্ত্বেও অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরায় রাজশাহী অঞ্চলে আউশ ধান চাষ ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খেত ফেটে চৌচির হওয়ায় আউশের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকরা। 

কৃষকরা জানান, দুই মাস ধরে ধানচাষ শুরু হলেও পানির অভাবে খাঁখাঁ করছে মাঠ-ঘাট। ফলে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্ধেকের মতো জমিতে আউশের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। সেগুলোও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই রোপণ করা ধানের চারা বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিতে শ্যালো মেশিন বা গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এতে চাষের খরচ বাড়ছে। এমন অবস্থায় ফলন কম হওয়াসহ আউশ চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ইরি-বোরো থেকে শুরু করে আউশ-আমন ধান চাষের অন্যতম মাধ্যম হলো সরমংলা খাল। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে এই খালে ফেলা হয়। সেখান থেকে সোলার বিদ্যুতের মাধ্যমে কৃষকরা জমিতে পানি সেচ দেন। কিন্তু এবার ওই খালেও কোনো পানি নেই। ফলে আশেপাশের অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এখনো ধান চাষ শুরু করতে পারেননি কৃষকরা।

এদিকে, কয়েকদিন পরেই শুরু হতে যাওয়া আমন চাষের জন্যও জমিতে পানি সেচ দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ যেমন হচ্ছে, তেমনি ধানের চারা ঠিকমতো উৎপাদন হবে কি না সেটি নিয়েও কৃষকদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৫০ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু গত দুই মাসে মাত্র ৩১ হাজার হেক্টরের একটু বেশি জমিতে আউশের চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে, আগামী এক মাসের মধ্যে শুরু হবে আমন ধান চাষ। কিন্তু রাজশাহীতে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন ধানের বীজতলাও প্রস্তুত করা যাচ্ছে না।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন ধরে আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলেও মেঘ সরে গিয়ে আবার রোদের দেখা মিলেছে। এতে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টিতে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে সর্বশেষ গত ২২ জুন বৃষ্টিপাত হয়েছিল দশমিক ২ মিলিমিটার। এরপর গত শুক্রবার মাত্র ১৫ মিনিটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার। তবে গতকাল শনিবার প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টিতে কৃষকদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। 

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, ‘রাজশাহীতে শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত চলে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’ 

স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে সরমংলা খাল থেকে পানি তুলে বীজতলায় চারা উৎপাদন করছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়া ও খালে পানি কমে যাওয়ায় এখন সেচের কোনো সুযোগ নেই। তাই বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।’ 

অপর কৃষক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘মেশিন নষ্ট থাকায় পদ্মা নদী থেকে খালে পানি দিতে পারছে না বিএমডিএ। তাই খালে পানি নেই। আবার বৃষ্টিও না হওয়ায় আমরা চরম বিপদে আছি। ধানচাষ না করলে কি খেয়ে বাঁচব।’

পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার কৃষক আক্কাছ আলী বলেন, ‘রাজশাহীতে টানা কয়েক মাস ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এখন বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিহীন কাটছে। আউশ-আমন হলো বৃষ্টিপ্রধান ধান। জমিতে সেচ দিতেই হয় না। এখন জমিতে চারা রোপণ করতেও সেচ দিতে হচ্ছে, আবার রোপণ করার পরও সেচ দিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা বলেন, ‘রাজশাহীতে এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম। ফলে বৃষ্টির অভাবে মাঠ-ঘাট শুকিয়ে চৌচির হয়ে যাওয়ায় ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে টানা তীব্র খরার কবলে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি। তাই, ধান বাঁচাতে আউশের চারা রোপণ করা জমিতে সেচের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহীতে এক দিন মাঝারি বৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। দু-এক দিন বৃষ্টি হলেও সেটি ছিল পরিমাণে খুবই কম। এতে করে কৃষিপ্রধান রাজশাহী জেলাতে আউশ ধানচাষ নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন ব্যাপক ভোগান্তিতে।