![বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের বিকল্প হতে পারে পুঁজিবাজার: বিএমবিএ](uploads/2024/06/26/BMBA-1719390637.jpg)
জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন এবং কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যে অর্থায়ন প্রয়োজন তা সংগ্রহে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। জাতীয় বাজেটের ঘাটতির অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো বিএমবিএর পর্যালোচনা-সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থমন্ত্রী ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ উপস্থাপন করেছেন। আলোচ্য বাজেট অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার রূপরেখা প্রদান করেছে।
বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণের অধিকাংশ ব্যাংকিং উৎস হতে ধার স্বরূপ সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অ-ব্যাংকিং উৎস হতে ধার করার মাধ্যমেও বাজেট ঘাটতি পূরণের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থ সংস্থানের দীর্ঘমেয়াদি উৎস হিসেবে পুঁজিবাজার হতে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের প্রাইমারি মার্কেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্ড/সুকুক/ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ইস্যুর মাধ্যমে বাজেটে অর্থায়নের উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া জাতীয় বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন পুঁজিবাজারের মাধ্যমে করতে হলে এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ। অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ স্টক, বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজের মাধ্যমে পুঁজিবাজার হতে অর্থায়ন ও পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তিকরণে কাজ করে। উল্লেখ্য, এসব কাজের আওতা বৃদ্ধি পেলে কর আয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহকে তাদের পরিচালন আয়ের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর দিতে হয়, যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যদের কর দিতে হয় ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এমতাবস্থায় মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহের দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য প্রযোজ্য করের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশে আনয়নে অতি প্রয়োজন। এরূপ কর হ্রাস করা হলে পুঁজিবাজার হতে অর্থায়নে মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের কার্যক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে যা মূলত বাড়তি কর সংগ্রহের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
পুঁজিবাজারের উন্নতিকল্পে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায় বিএমবিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পুঁজিবাজারের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাইমারি মার্কেট। বিভিন্ন উদ্যোক্তাগণ, এসএমই কোম্পানি, স্টার্ট-আপ কোম্পানি এবং অন্যান্য অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজার হতে পুঁজি সংগ্রহ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য প্রাইমারি মার্কেটকে অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। এতদলক্ষ্যে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কমপ্লায়েন্স এবং আইনকানুন বিনিয়োগবান্ধব ও সহজীকরণ এবং উপদেষ্টা সহায়তা প্রদানের মতো বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যকার বিদ্যমান কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ যাহা অতি স্বল্প বিধায় কোম্পানিসমূহের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ কম। জাতীয় বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্যে কর হারের ব্যবধান বৃদ্ধি করা হলে কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আকৃষ্ট হবে। এ ছাড়া অ-তালিকাভুক্ত বা নতুন নিবন্ধিত কোম্পানিসমূহকে নির্দিষ্ট সময়ান্তে তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে বলে মনে করে বিএমবিএ।
দেশের বৃহৎ ও স্বনামধন্য কোম্পানিসমূহ, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পলিসি সহায়তার পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করপোরেট ট্যাক্সের হার ১৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ছাড় ইত্যাদি প্রদান করা যেতে পারে। এরূপ সুযোগ-সুবিধা অধিক সংখ্যক ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের জন্য পত্রকোষে বৈচিত্র্যকরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে, বাজারের গভীরতা ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মুনাফা বাড়ার পাশাপাশি তাদের স্টকগুলোকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
পুঁজিবাজার হতে ৫০ লাখ টাকার ওপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে কর ধার্যকরণের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে ৫০ লাখ টাকার ওপরে হতে বিভিন্ন স্ল্যাব ভিত্তিক কর ধার্য করা যেতে পারে এবং এই ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাইলান ট্যাক্স হিসেবে বিনিয়োগকারীর ট্যাক্স ফাইলে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া পুঁজিবাজার হতে কর সংগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতকরণ এবং পরিবর্ধন করা যেতে পারে।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করায় উৎসাহিত করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য কর প্রণোদনা, সহজীকৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি এবং পলিসি সহায়তার মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নকল্পে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা প্রদান আবশ্যক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা এবং সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবিকে প্রাইমারি মার্কেট-সংক্রান্ত কার্যক্রম পুনরায় শুরুকরণসহ বিভিন্ন কার্যকরী পলিসি সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।
বিএমবিএ মনে করে, উপর্যুক্ত পদক্ষেপসমূহ পুঁজিবাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। এ সকল উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন করা সম্ভব পর হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব পর হবে।