বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, ‘প্রায় ২০০ দেশে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। মানসম্পন্ন পণ্য কম দামে দিতে পারার কারণেই এসব দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশে খুব বেশি রপ্তানি হয়। সব নিয়ম মেনে কোয়ালিটি পণ্য কম দামে দিতে পারি বলেই রপ্তানি হচ্ছে। আমরা কারও দয়াদাক্ষিণ্যে রপ্তানি করি না।’
সোমবার (৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে শ্রম অধিকারসংক্রান্ত ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের (এনএপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা উপলক্ষে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহছানে এলাহী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ অন্যরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি বাজার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য যা যা করণীয় তা করব। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে এসব কাজ করা হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা ২৫ বিলিয়ন (২৫০০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানি করি, সেটা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করি, কিন্তু সেখানে কোনো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। অনেক বেশি শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে রপ্তানি করতে হয়।’
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি না- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি বলেন, ‘এর আগেও বলেছি, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, সব দেশের শ্রম পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে। আমরা সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যেসব ইস্যু ছিল, সেগুলো নিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিকী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, সেটা কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। সর্বশেষ ১২-১৬ নভেম্বর একটা উচ্চপর্যায়ের দল ঢাকায় এসে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যে সংস্কারগুলো নিয়ে এসেছে, সেগুলোর প্রশংসাও করেছেন। তারা বলেছেন, আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, এখন তাদের চাওয়াগুলো আরও বেশি বাস্তবায়ন দেখতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশ যেহেতু শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সেহেতু তাদের চাওয়া আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। আমাদের ৬০ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ। এটা একটা বিশাল বাজার, আমাদের এটা রক্ষা করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছি।’
বেপজা আইনের সংশোধন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে বেপজা আইনে অনেকগুলো সংশোধন আনা হয়েছে। এখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন। এটাও সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ মিলে ঠিক করবেন, কীভাবে করা হবে।’ এসব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হবে কি না- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘তাদের চাওয়াগুলো যে পূরণ হয়েছে, যেমন বেপজা আইনে সংস্কার করা হয়েছে, শ্রম আইনটিই বেপজার মতো প্রযোজ্য হবে, বাংলাদেশের শ্রম আইনে সংশোধন আনা হয়েছে, এই অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। এ জন্য কয়েক দিন লাগবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছি। সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রম আইনে বেশ সংশোধনী আনা হয়েছে। আমরা গত ১০ বছরে অনেক সংস্কার এনেছি। ২০১০ সাল থেকে এরই মধ্যে তিনবার আমাদের শ্রম আইনে সংস্কার আনা হয়েছে। চারবার নিম্নতম মজুরি বোর্ড নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করেছে। সুতরাং আমরা প্রতিনিয়ত সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যে শিল্পায়ন হচ্ছে, সেখানে যে কর্মপরিবেশ, শ্রম অধিকার এসব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’