![রোজার আগেই গরম ফল বাজার](uploads/2024/03/08/1709870403.Fruits.jpg)
পবিত্র রমজান শুরু হতে সপ্তাহেরও কম সময় বাকি। এদিকে রমজানের প্রভাবে বেড়েছে আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম। এ জন্য ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, শুল্ক বেড়ে যাওয়া, এলসি জটিলতাসহ নানা কারণকে দূষছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে দেশি ফলের দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর-৬, কচুক্ষেত, গুলশান, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার এবং ফার্মগেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা সব ধরনের ফলের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশে উৎপাদিত ফলের দামও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজানে খেজুর ও মাল্টার চাহিদা বেশি থাকে। ঠিক এ কারণে রমজানের আগেই বেড়েছে এই ফলের দাম। এর পাশাপাশি বেড়েছে আপেল ও কমলার দামও।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি মাল্টার সরবরাহ কম। এ কারণে দেশি মাল্টার দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হয় ২৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২২০ টাকা। এদিকে দেশি কমলা বিক্রি হয় ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে আমদানি করা কমলা। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। এ ছাড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে আনার কেজি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তবে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে আঙুরের দাম। প্রতি কেজি সবুজ আঙুর বিক্রি করা হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি কালো আঙুর বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়।
এদিকে বাজারে মারিয়াম খেজুরের দাম পড়ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, মাবরুম ৬০০ থেকে ৬৫০, মেডজুল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, দাবাস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। আজোয়া মানভেদে বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। বাজারে আরও উচ্চমূল্যের খেজুর আছে। তবে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে জাহিদি খেজুর। দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। গত বছরের তুলনায় সব ধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যে আনারস বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়, গতকাল তা বিক্রি হয় ৬০ টাকা। এক সপ্তাহে আগে বড় বেলের দাম ছিল ১০০-১২০ টাকা। গতকাল বড় বেলের দাম ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্য ধরনের বেল যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, সেটি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে পাকা পেঁপের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়। পেয়ারার দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা। গতকাল তা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগে ২০ কেজি আপেলের প্যাকেটে শুল্ক দিতে হতো ৩০০ টাকা। এখন সেটি দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর এক কেজি আঙুরে দিতে হতো ৩০ টাকা। এখন সেটি দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। আবার ডলারের রেট বেশি। সব মিলিয়ে খরচও বেশি।’
তিনি আরও বলেন, খেজুরে যে পরিমাণ শুল্ক কমানো হয়েছে, তাতে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ খেজুরে শুল্কায়ন হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। কেনা দামে শুল্কায়ন করা গেলে ভোক্তার কিছুটা সুবিধা হতো।
মিরপুর-৬ বাজারে ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন খবরের কাগজকে জানান, তিনি ২৫ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন। প্রতিবছর তিনি দেখেছেন রোজার সময় ফলের চাহিদা বেড়ে যায়। রমজানের প্রথম সপ্তাহজুড়ে ধনী-গরিব সবাই চেষ্টা করেন ইফতারে ফল রাখতে। এতে চাহিদা যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। এতে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া অনেক ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে থাকেন।
এদিকে পেঁয়াজের বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শ্যামবাজারের আড়তে আগের সপ্তাহের দামে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আমজাদ আলী বলেন, পাইকারিতে দাম বেশি। ১১০ টাকা কেনা। লোকসান করে ব্যবসা করা যায় না। ১১৫-১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য বিক্রেতারাও জানান, ভারতের পেঁয়াজ না এলে কমবে না দাম। আলু ৩০-৩৫ টাকা কেজি। আদা ২২০-২৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৭০ ও আমদানি করা রসুন ২২০-২৪০ টাকা কেজি।