![ময়মনসিংহে বাড়ছে আনারস চাষ](uploads/2024/03/18/1710750989.anaros.jpg)
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার নাওগাঁও, এনায়েতপুর, রাঙ্গামাটিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে আনারস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া লাল চিনি, কাঁচা হলুদের পাশাপাশি আনারসের জন্যও বিখ্যাত। এখানের কৃষকরা জলডুবি, হানিকুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। এবার প্রায় ৫০ কোটি টাকার আনারস বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা খেত থেকে আনারস তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন আনারস কিনতে। কৃষক এবং পাইকারদের মধ্যে চলছে দামাদামি। এরপর ট্রাক কিংবা পিকআপে করে এসব আনারস দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহ ছাড়াও টাঙ্গাইল, ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, পঞ্চগড় ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জমি থেকে আনারস কিনে নিয়ে যান।
কৃষকরা জানান, আনারস উৎপাদনের জন্য জৈব সার ছাড়া অন্য কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। তবে ফসল পাকার আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। ফলে বিষাক্ত কোনো কিছু নেই।
আনারস চাষে অনেকের সফলতা দেখে শিক্ষিত বেকার যুবকরাও আনারস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কথা হয় নাওগাঁও ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের আনারস চাষি সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার পাঁচ একর জমিতে প্রায় ১৪ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছি। এতে জমি বর্গা নেওয়া, চারা রোপণ, শ্রমিক খরচসহ ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারব।’
একই গ্রামের ফাহাদ তালুকদার বলেন, ‘তিন বছর আগে আনারস চাষ শুরু করি। এতে লাভবান হওয়ায় এবার ১০ একর জমিতে আনারস চাষ করেছি। এর মধ্যে ৩ একর জমিতে জলডুবি জাতের এবং বাকি জমিতে হানিকুইন ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষ করেছি। গত বছর রমজানে চারা লাগানোর পর থেকে ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত দুই দফা ভিটামিন স্প্রে করাসহ ফল পাকার আগে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছে। আশা করছি এবার ৪০ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করতে পারব।’
একই ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের কৃষক মোজাফফর মিয়া বলেন, ‘আমি দুই একর জমিতে আনারস চাষ করেছি। কিন্তু গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে আনারস বিক্রিতে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এতে আনারস বিক্রি করতে খরচ বেশি হয়। তা না হলে আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম।’
রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেট গ্রামের কৃষক শামসুল আলম বলেন, ‘গত বছর ৩ একর জমিতে আনারস চাষ করে লাভ করতে পারিনি। কারণ সব কৃষকের আনারস একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় দাম একেবারেই কমে গিয়েছিল। তখন শুধু খরচের টাকা উঠলেও এবার আবারও তিন একর জমিতে আনারস চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এবার আগের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ায় ভালো লাভ হবে।’
এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। তবে উপজেলাটি লাল চিনি, কাঁচা হলুদের পাশাপাশি আনারসের জন্যও বিখ্যাত। আনারসের ফলন বাড়াতে কৃষকদের দিকনির্দেশনাসহ নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি আনারস খাওয়ার পর মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতি হবে এমন কোনো রাসায়নিক আনারসে দিতে সব সময় নিরুৎসাহিত করি। এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা।’