পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা এবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি আশ্চর্যজনক পদক্ষেপ, যা আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের আগে এসেছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজারে পেঁয়াজের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত। দেশটির সরকার গত বছরের ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। কারণ, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের ফসল আসতে শুরু করায় নতুন করে সরবরাহ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশায় ছিলেন। তবে এখন তাদের সেই আশার গুড়েবালি পড়েছে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) ভারত সরকার এই (পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা) সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। তাতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এ দিকে ভারত সরকারের এই ঘোষণায় রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর আগেও পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সময়ও সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তারা।
শুক্রবারের এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার বিষয়ে মুম্বাইভিত্তিক একটি রপ্তানি সংস্থার এক নির্বাহী বলেছেন, নতুন মৌসুমের ফসল বৃদ্ধি এবং দাম পতনের প্রেক্ষাপটে এই নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর বিষয়টি আশ্চর্যজনক এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়।
পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকার করা ওই নির্বাহীর বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, ভারতের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রের পাইকারি বাজারে ডিসেম্বরে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ৪ হাজার ৫০০ রুপি ছিল। এখন তা কমে ১ হাজার ২০০ রুপিতে (১৪ মার্কিন ডলার) নেমে এসেছে।
রয়টার্স বলছে, আসন্ন নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক টানা তৃতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসতে চাইছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রয়টার্স জানায়, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো অভ্যন্তরীণ শূন্যতা পূরণ করতে ভারত থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করে এবং সেই দেশগুলোর অনেকেই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে।
মুম্বাইভিত্তিক একটি রপ্তানি সংস্থার অন্য একজন নির্বাহী বলেছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ প্রতিদ্বন্দ্বী রপ্তানিকারকদের অনেক বেশি দাম হাঁকানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। কারণ, ক্রেতাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।
ব্যবসায়ীরা মনে করেন যে, এশিয়ার দেশগুলো ভারত থেকে অর্ধেকেরও বেশি পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, চীন বা মিশরের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ভারতের পণ্য চালানে সময় কম লাগে। এই সুবিধার কারণে রপ্তানি বাজারের অর্ধেকটাই ভারতীয় পেঁয়াজের দখলে।
রয়টার্স জানায়, গত অর্থবছরে ভারত রেকর্ড পরিমাণ ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে।