আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাজবাড়ীতে এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। ঠিকমতো সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছরই গড়ে ৩০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয় বলে দাবি চাষিদের।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ ভাগ উৎপাদিত হয় রাজবাড়ীতে। জেলায় দুই ধরনের পেঁয়াজের আবাদ হয়। মুড়ি পেঁয়াজ আর হালি পেঁয়াজ। সংরক্ষণ করা যায় না বিধায় এরই মধ্যে মুড়ি পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন কৃষকরা। মাচা পদ্ধতিতে হালি পেঁয়াজ কৃষকরা সংরক্ষণ করেন। তবে এ পদ্ধতিতে ৬ থেকে ৭ মাস সংরক্ষণ করা যায় মাত্র।
পেঁয়াজ চাষিরা জানান, বাড়তি দামে বিক্রির জন্য বাঁশের মাচা বানিয়ে টিনের ঘরে ভালো মানের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। তবে অধিক তাপমাত্রা, বৃষ্টির পানিসহ নানা কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। চাষিদের দাবি, ৬ মাস ঘরে সংরক্ষণ করলে পেঁয়াজের ওজন প্রতি মণে ১০ কেজি কমে যায়। অনেক সময় পচন দেখা দেয়, এতে প্রতি মণে ২০ কেজিও নষ্ট হয়। এজন্য চলতি মৌসুমে ভালো দাম দেখে কৃষকরা এখনই সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষকদের দাবি, পেঁয়াজ সংরক্ষণে আধুনিক সুযোগ সুবিধা তৈরি হলে দেশে পেঁয়াজের এমন সংকটের সৃষ্টি হতো না।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের রশোড়া গ্রামের কৃষক অমল দাস বলেন, ‘আমি ১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। জমি থেকে সব পেঁয়াজ তুলে ফেলেছি। কিন্তু সংরক্ষণ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছরও আমার অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছিল।’
একই গ্রামের কৃষক মিন্টু শিকদার বলেন, ‘আমরা ভালো করে রোদে শুকিয়ে তারপর পেঁয়াজ মাচায় তুলি। ৩ থেকে ৪ মাস ভালো থাকে। কিন্তু ৬ মাস রাখলে ৪০ কেজি পেঁয়াজ শুকিয়ে ৩০ কেজি হয়। আর যদি কোনো কারণে পচন দেখা দেয় তখন কী পরিমাণ নষ্ট হয় তার কোনো হিসাব থাকে না।’
বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মাশালিয়া গ্রামের মকশেদ মিয়া বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনো ভালো আছে। এ জন্য খেত থেকে তুলেই বিক্রি করছি। কারণ ঘরে রাখা আমাদের জন্য লোকসান। ঘরে রাখলেই পেঁয়াজ ওজনে কমে যায়।’
একই গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান মৃধা বলেন, ‘আমার ১৬ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এখন দোকানের হালখাতা ও শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার জন্য কিছু পেঁয়াজ বিক্রি করে বাকি পেঁয়াজ রেখে দিব। আমরা নিজেদের মতো করে সংরক্ষণ করি। কোনো বছর ভালো থাকে কোনো বছর নষ্ট হয়। পেঁয়াজ রাখার জন্য কোনো আধুনিক পদ্ধতি থাকলে ভালো হতো। আমাদের এই পদ্ধতিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বছর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়ে একটু সমস্যা হবে। আবহাওয়া খারাপ দেখে অনেক কৃষক অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলছেন। এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে ভালো থাকবে না। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি পরিপক্ব পেঁয়াজ রোদে ভালো করে শুকিয়ে তারপর মাচায় তোলার জন্য। তাহলে সেই পেঁয়াজ ভালো থাকবে।’
পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষি বিপণন বিভাগ বালিয়াকান্দি জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘর বানিয়েছে। সেই ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যাবে। কৃষকরা সেই ঘরে দেখে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ঘর বানাতে পারেন।’
রাজবাড়ীতে এ বছর ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে মুড়ি পেঁয়াজ ৪ হাজার হেক্টর আর হালি পেঁয়াজ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি বছর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। তবে আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর ৫ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।