ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

পেঁয়াজ ডিম আদার দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় সুফল নেই

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
পেঁয়াজ ডিম আদার দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় সুফল নেই
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি মুদি দোকান। ছবি : খবরের কাগজ

পেঁয়াজ, ডিম ও আদার দাম কমতির দিকে রয়েছে পাইকারি বাজারে। ফলে খুচরা বাজারেও এসব পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন এসব ভোগ্যপণ্য। ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমার সুফল মিলছে না ভোক্তা পর্যায়ে। 

চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত নগরের পাহাড়তলী বাজারে। টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে আনা হয় ডিম। প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ডিম থাকে। রোজায় ডিমের চাহিদা কম থাকায় পাইকারি বাজারে কমেছে বেচাকেনা। ফলে পাইকারি বাজারে দফায় দফায় কমছে দাম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে প্রতিটি লাল ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। মার্চ মাসের শুরুতে পাইকারিতে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ৩০ পয়সায়। গতকাল বিক্রি হয় ৯ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকায়। সে হিসাবে খুচরায় প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা। 

চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘রোজায় ডিমের চাহিদা কম থাকায় পাইকারিতে বেচাকেনা একেবারেই কম। ফলে দাম কমতির দিকে রয়েছে। সামনে আরও কমবে। তাই খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমার কথা। কিন্তু তা কমেনি।’ 

নগরের হালিশহর এলাকার আল মক্কা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, ‘পাহাড়তলী বা রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ডিম কিনে নিয়ে আসি। পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি আছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি ডিম ১১ টাকায় ডিম বিক্রি না করলে লোকসান হয়।’ 

এদিকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে আরও কমেছে পেঁয়াজের বাজার। এক সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৬০ টাকা, মেহেরপুরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ও চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত মাসে প্রতি কেজি চায়না আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়। 

বর্তমানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম আরও কমে প্রতি কেজি মেহেরপুরের পেঁয়াজ মানভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, ফরিদপুরের মানভেদে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা ও চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি কেজি চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪৭ টাকায়। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। 

খাতুনগঞ্জের আফরা ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। দামও কমতির দিকে রয়েছে। আমরা আশাবাদী পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না।’ 

হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘একদিকে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশ ভালো, তার ওপর বেচাকেনা আগের তুলনায় কম। তাই পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ না আনলেও চলবে। আমাদের দেশি পেঁয়াজের ওপর আগামী দুই মাস নির্ভর করা যাবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা হয়তো বাড়তি দরে বিক্রি করছেন।’

নগরের ঈদগাঁ এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখেছি পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু আমরা তো এর সুফল পাচ্ছি না। আমাদের বাড়তি দরেই কিনে খেতে হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে। এটা খুব দুঃখজনক।’ 

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সব সময় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা অল্প করে পণ্য আনেন এবং বাড়তি দরে বিক্রি করেন। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরাও অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সরকারের সংস্থাগুলোর উচিত পাইকারি, খুচরা সব জায়গায় সমানভাবে মনিটরিং করা।’ 

ডিমের ডজন ১৫০ টাকার বেশি নয় : ভোক্তার ডিজি

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
ডিমের ডজন ১৫০ টাকার বেশি নয় : ভোক্তার ডিজি
ছবি : খবরের কাগজ

খুচরা বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৫০ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর কাওরান বাজারে টিসিবি ভবনে ভোক্তা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, ‘ফার্মে প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ১০.২৯ টাকা থেকে ১০.৮৮ টাকা। সিন্ডিকেট করে এসএমএস দিয়ে ডিমের বাজার অস্থির করা যাবে না। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সময় বিভিন্ন ফার্মের মালিক, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলম/সালমান/

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে। দেশটিতে গৃহস্থালির গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, তবে অক্টোবরে আবার খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেমের নতুন নির্ধারিত এই দাম, ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের জন্য গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এই পদক্ষেপের অর্থ হলো, এর মধ্য দিয়ে একটি সাধারণ পরিবারের জ্বালানি বিল বছরে ১২২ পাউন্ড কমবে। সেই সঙ্গে সাধারণ পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে- এমন একটি পরিবারের জন্য বছরে ১ হাজার ৫৬৮ ডলার বিল সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসবে।

তবে পূর্বাভাসকারীরা প্রত্যাশা করছেন যে, শীতের মৌসুমে জ্বালানির দাম আবার বাড়বে। এই সময়ে জ্বালানির দাম সর্বশেষ হ্রাস হওয়ার হারের চেয়েও বেশি হবে।

শীর্ষস্থানীয় পরামর্শদাতা কর্নওয়াল ইনসাইট ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, একটি সাধারণ পরিবারের বার্ষিক জ্বালানির বিল আগামী অক্টোবর মাসে বেড়ে ১ হাজার ৭২৩ পাউন্ডে দাঁড়াবে, যা এখনকার বিলের থেকেও ১৫৫ পাউন্ড বা ১০ শতাংশ বেশি।

দাতব্য সংস্থা ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাকশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডাম স্কোরার বলেছেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ বিলের হ্রাস শীতকালে বেশি পরিমাণে বৃদ্ধির দ্বারা মিলিয়ে যাবে। তখন, গরমে লোকরা বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় বিল বাড়বে।

অ্যাডাম স্কোরার আরও বলেন, জ্বালানির খরচ একটি সাধ্যাতীত বিলাসিতা হিসেবে রয়ে গেছে, যেটির ব্যয় বহন করা অনেক দরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।

যদিও দাম প্রতি তিন মাস পরপর পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিসংখ্যানটি অফজেমের দ্বারা একটি সাধারণ পরিমাণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী পরিবারের বার্ষিক বিলের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে।

কারণ, অঢেল সম্পত্তির মালিকরা অধিক পরিমাণে জ্বালানি ব্যবহারের কারণে সামগ্রিকভাবে তারা বেশি বিল দেবে এবং এর বিপরীতে ছোট সম্পত্তির মালিকরা জ্বালানি বাবদ কম বিল পরিশোধ করবে। 

যুক্তরাজ্যের গ্যাস ও বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম নির্ধারিত এই মূল্যসীমা, প্রতি ইউনিট গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য সর্বোচ্চ দামকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তবে এটি গ্রাহকের সম্পূর্ণ ব্যবহারের ওপর যে বিল আসবে সেটি কমাবে না।

খবরে বলা হয়, এই পদক্ষেপটি ২৮ মিলিয়ন গৃহস্থের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলকে প্রভাবিত করে। তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের গ্রাহকদের প্রভাবিত করে না। কারণ সেখানে এই খাতটি ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে সেখানেও জ্বালানির দাম কমছে।

খবরে বলা হয়, সর্বশেষ এই জ্বালানির দাম কমানোর হারটি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর, সরকার যখন বিল বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়, তখন জ্বালানির বিল যতটা শীর্ষে পৗঁছায়, সে তুলনায় এটি যথেষ্ট কম। এই পদক্ষেপটি মূল্যবৃদ্ধির সাধারণ হার, যা মুদ্রাস্ফীতি নামে পরিচিত, সেই হার কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

তবে, সাধারণ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল গত তিন বছর আগের তুলনায় এখনো প্রায় ৪০০ পাউন্ড বেশি রয়ে গেছে, যা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনি প্রচারণায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সর্বোপরি পরিবারগুলো উচ্চ মূল্যের চাপের কারণে, সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) পাউন্ডে সম্মিলিত ঋণ করেছে।

বিবিসি বলছে, যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তারা সাধারণত শীতকালে, যখন দিনের আলো কম থাকে এবং তাপমাত্রাও কম থাকে, তখন তাদের মিটার রিচার্জ করেন। এ ছাড়া এই গ্রাহকগুলো প্রায়ই আর্থিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই, গ্রীষ্মকালে জ্বালানির এই দাম কমানোর প্রভাব তাদের ক্ষেত্রে ততটা দ্রুত অনুভূত হবে না।

বেশির ভাগ পরিবার সরাসরি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে এবং তাদের পেমেন্ট সারা বছর ধরে সমানভাবে ভাগ করা হয়। এ কারণে সর্বশেষ দাম পরিবর্তন সম্পর্কে সরবরাহকারীদের উচিত, তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মিটার রিডিং নেওয়া একটি ভালো ধারণা, যাতে গ্রাহকদের সঠিক হারে চার্জ করা হয়।

এদিকে অফজেম মূল্যসীমা নির্ধারণের পদ্ধতি পর্যালোচনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী চার্জের বিষয়ে পাওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করা।

সিরাজগঞ্জে বোরা ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয়

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
সিরাজগঞ্জে বোরা ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয়
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি খাদ্যগুদামে ট্রাকে চাল লোড-আনলোড করা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

আমনের পর এবার সিরাজগঞ্জের খাদ্যগুদামগুলোতে বোরো ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২৬ জুন পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭২০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও জেলার ৯টি উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯১৬ টন। গত দুই বছরের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ৭ মে থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্টের মধ্যে এই মৌসুমের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। এদিকে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন ও হয়রানির কারণে সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচার-প্রচারণারও অভাব রয়েছে। এসব কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, ধান সংগ্রহের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করবেন তারা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৭ মে থেকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়। এতে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা এবং প্রতি কেজি বোরো চালের দাম ৪৫ টাকা করে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেই আলোকে সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার খাদ্যগুদামগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু গত দুই মাসে কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধান সংগ্রহ করতে পারেনি সিরাজগঞ্জের খাদ্যগুদামগুলো। এখন পর্যন্ত ৯টি খাদ্যগুদামে মাত্র ১ হাজার ৭২০ টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার যতসামান্য। 

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ জেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৮ হাজার ৯১৬ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৮ টন নির্ধারণ করে দিলেও এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ১১৯ টন, উল্লাপাড়া উপজেলার ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১৮ টন, এখন পর্যন্ত তাদের ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ৩৯৬ টন। তাড়াশ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪১১ টন, এখন পর্যন্ত গুদামের ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ৭২ টন, রায়গঞ্জ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২৫২ টন হলেও এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৮৭ টন, শাহজাদপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩০ টন, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র্ ৬০ টন, কাজীপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১৯ টন, এর মধ্যে ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ২১ টন, কামারখন্দ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ৪৪১ টন, তার বিপরীতে সংগ্রহের পরিমাণ ৩৪৫ টন। অন্যদিকে বেলকুচি উপজেলায় ৫১৯ ও চৌহালী উপজেলায় ৩৪৫ টন ধান সংগ্রহ করেতে পেরেছে গুদামগুলো।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৭৫ হেক্টর বেশি। এতে প্রায় ৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৩ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

অন্যদিকে এ অর্থবছরে জেলার চালকল মালিকদের কাছ থেকে ২৪ হাজার ২৮২ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে চাল দিতে ৪১৯ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। গত দুই মাসে ১২ হাজার ৪৯০ টন চালও সংগ্রহ করতে পেরেছে উপজেলার গুদামগুলো।

সরেজমিনে জেলার সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার খাদ্যগুদামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গুদামগুলোতে কোনো বোরো ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের শুধু ট্রাকের চাল লোড-আনলোড করতে দেখা যায়। 

তবে স্থানীয় বাজার ঘুরে জানা গেছে, কৃষকরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। এদিকে বাজারের চেয়ে সরকার-নির্ধারিত মূল্যে ধানের দাম বেশি হলেও কিছু ভোগান্তির কারণে সরকারি গুদামগুলোতে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ বছর সাত বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে মূল্য তুলনামূলক কম হলেও কিছু ভোগান্তির কারণে গুদামে ধান দেওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই ধান হাট-বাজারে বিক্রি করছি।’

উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষক রহমান আলী বলেন, ‘গুদামে ধান দিলে পরিবহন খরচ আছে। তা ছাড়া টাকা পেতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, অনেক দেরিও হয়। আর এসব সমস্যা বা ঝামেলার কারণে বাজারে ধান বিক্রি করে থাকি।’

আর চালকল মালিকরা জানান, এ বছর সব খরচ বেড়ে গেছে, কিন্তু চালের দাম বাড়েনি। তাই লোকসান গুনলেও মিলের লাইসেন্স রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে খাদ্যগুদামগুলোতে চাল দিতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) আশরাফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪৩০ মেট্রিন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিলেও এখনোও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। কৃষকরা গুদামে ধান দিতে চান না, তাদের কাছে থেকে জোর করে ধান নেওয়ার অধিকারও আমাদের নেই। তা ছাড়া তারা বাজারে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন, এ জন্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নয়।’

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৮ মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র ১১৯ টন বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে। ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয় থাকলেও চাল সংগ্রহ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সরকারের উদ্দেশ্য, কৃষক যেন ধানের ন্যায্যমূল্য পান। সে হিসাবে কৃষক বাজারে বিক্রি করলে তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।’

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম মোটামুটি ভালো রয়েছে। এ জন্য গুদামগুলোতে ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার চারটি উপজেলায় কৃষকের অ্যাপস ও বাকি পাঁচ উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে বিগত বছরের চেয়ে এবার ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে করছি।’

দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান হারাতে পারে সাতক্ষীরা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান হারাতে পারে সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামে দুগ্ধ খামারে কাজ করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: খবরের কাগজ

সাতক্ষীরায় উৎপাদিত তরল দুধে চাহিদা মিটছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। প্রতিদিন গড়ে এক লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হচ্ছে উপকূলীয় এই জেলায়। তবে গো-খাদ্যের দামের তুলনায় দুধের দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন এখানকার খামারিরা। তারা বলছেন, আগের মতো দুধের চাহিদা নেই। মূলত চিনির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে। আগের দিনে দুধ-চিনির মিশ্রণে নানা রকমের মিষ্টি তৈরি হলেও এখন সেটা হয় না। চিনির মূল্যবৃদ্ধির ফলে মিষ্টির কারখানায় দুধের চাহিদাও কমেছে।

তাদের দাবি, দুধের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বর্তমানে অনেক খামারি পশুর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে দেশে তরল দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থান হারাতে পারে সাতক্ষীরা বলে শঙ্কা তাদের।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলার সাতটি উপজেলায় গরুর দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টন। প্রতিদিন এক লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয় এ জেলায়। যার স্থানীয় চাহিদা ১৪ হাজার লিটার। বাকি দুধ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যার গড় বাজারমূল্য ৯১২ কোটি টাকারও বেশি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, সাতক্ষীরায় তিন হাজারের বেশি ছোট-বড় দুধের খামার রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিবন্ধিত খামার ২ হাজার ৫০০টি। এসব খামারের উৎপাদিত দুধ দিয়ে ঘি, মাঠা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি হয়। আর এই ডেইরি শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে জেলার কমপক্ষে ৭০ হাজার মানুষের। 

সাতক্ষীরা সদরের ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা উত্তম ঘোষ জানান, গত বছর তার খামারে গরু ছিল ২০টি। বর্তমানে গরু আছে মাত্র ৯টি। গরু কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে গো-খাদ্যর মূল্যবৃদ্ধি ও দুধের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াকে দায়ী করেন তিনি। 

উত্তম ঘোষের ভাষ্য, ‘এখানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। কিন্তু আমরা খামার থেকে বিক্রি করছি মাত্র ৪২ টাকায়। বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করলে তারা দাম দেয় ৪৬-৪৮ টাকা। প্রতিদিন যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়, তা দিয়ে খামার পরিচালনা করা কঠিন।’

পুরোনো সাতক্ষীরা এলাকার খামারি ওমর আলী জানান, তার খামারে পাঁচটি বিদেশি জাতের গরু রয়েছে। তবে বর্তমানে যেভাবে গো-খাদ্যের (খৈল, ভুসি ও বিচলি) দাম বেড়েছে, তাতে খামার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পান না তিনি। তার ওপর গো-খাদ্যের দামের তুলনায় দুধের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াতে এখন খামার বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের দুগ্ধ খামারি সমিতির সভাপতি দিবস চন্দ্র জানান, ৩৫ বছর ধরে গরু লালন-পালন করছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও হাইয়াল জাতের গাভি রয়েছে ৪৫টি, যা থেকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। তবে বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামার পরিচালনা করতে গিয়ে লোকসান দিতে হচ্ছে তাকে।

খামারি দিবস চন্দ্র বলেন, ‘বর্তমানে এক কেজি সয়াবিন খৈল কিনতে খরচ হয় ৮০-১০০ টাকা। এ ছাড়া ভুট্টা বা গমের ভুসি কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। এতে কোনো রকম খরচটা উঠলেও পরিশ্রমটা ব্যর্থ।’

দুধের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, করোনার আগে মিষ্টির কারখানায় দুধের চাহিদা ছিল। কিন্তু চিনির দাম বাড়ায় সেটি এখন কমেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে দুধ কিনে শুধু ঘি তৈরি করছেন। এতে করে অনেক খামারি দুধের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে পশুর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। আর এভাবে চলতে থাকলে সাতক্ষীরা দেশের তরল দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানও হারাতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

সাতক্ষীরা বিসিক এলাকায় মিল্ক ভিটার চিলিং সেন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নভেল আক্তার বলেন, ‘সাতক্ষীরায় মিল্ক ভিটার তিনটি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার লিটার তরল দুধ কেনা হয়। যার প্রতি লিটার ৪৮-৫০ টাকা দাম নির্ধারণ করা রয়েছে।’ 

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সাতক্ষীরা দুধ উৎপাদনে সম্ভাবনাময় জেলা। বর্তমানে জেলায় দৈনিক প্রায় ১ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে, যা দেশের তরল দুধ উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। তবে এখন গো-খাদ্যের মূল্য বাড়ায় অনেকে খামার করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

মাগুরায় ৬২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
মাগুরায় ৬২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মাধবপুরে খেত থেকে বাদাম তুলছেন কৃষক। ছবি: খবরের কাগজ

কেউ তুলছেন গাছ, কেউবা বঁটি দিয়ে গাছ থেকে বাদাম কেটে করছেন আলাদা, কেউবা আবার সেগুলো বস্তায় বা ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। বর্তমানে মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতী নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে প্রতিদিনের চিত্র এটি। জেলায় এ বছর ৬২ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হলেও এর মধ্যে ৬০ হেক্টর চাষ হয়েছে শুধু মহম্মদপুর উপজেলায়। বাকি দুই হেক্টর চাষ হয়েছে জেলার শ্রীপুর উপজেলায়।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মাগুরায় এ বছর ৬৫ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে তিন হেক্টর কম জমিতে চাষ হলেও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হবেন, এমনটাই আশা করছে জেলা কৃষি বিভাগ। 

সম্প্রতি মহম্মদপুর উপজেলার মাধবপুর, চরমাধবপুর, গয়েশপুর ও বাহিরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ সবাই মিলে বাদাম তুলছেন। আর সেটি তদারকি করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বাবুখালী ব্লক) প্রণব কুমার রায় বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মহম্মদপুর উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। তবে এর ৭০ শতাংশই আবাদ হয়েছে বাবুখালী অঞ্চলে। এবার বাদামের গড় ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হবে ৮ থেকে ১০ মণ। ভালো দাম পেয়ে কৃষকও খুশি। বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই উপজেলার চরাঞ্চলে এ ফসলের চাষ বাড়ছে।’

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা মহম্মদপুর সদর এবং পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের নদীপারের সহস্রাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে উচ্চফলনশীল বারী বিনা- ৫.৮, ৯ ও বিনা-৪ জাতের বাদাম চাষ করেছেন। বাদাম চাষে খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে চাষির সংখ্যা। এরই মধ্যে নতুন বাদাম তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে। উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমির মধ্যে ৭০ শতাংশ বাদাম চাষ হয়েছে ওই ইউনিয়নে। এবার স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে ৫০ জন কৃষককে ৫০ বিঘা জমিতে চাষের জন্য বাদামের বীজ দেওয়া হয়। অন্যরা নিজেদের মতো করে বাদাম আবাদ করেছেন। এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজারে নতুন বাদাম উঠতে শুরু করেছে। মানভেদে প্রতি মণ বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা দরে। ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। 

জানা যায়, উপজেলার চরসেলামতপুর, হরিণাডাঙ্গা, রায়পুর, পাল্লা চরপাল্লা শিরগ্রাম, জাঙ্গালিয়া, ধূপুড়িয়া রায়পাশ চরপাচুড়িয়া আড়মাঝি, চরঝামা ঝামা দেউলি, কালীশংকরপুরসহ মধুমতীর চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বাদাম চাষ হয়েছে। 

বাদামচাষি মো. তুষার মোল্লা বলেন, ‘এ বছর প্রায় তিন একর জমিতে বাদামের চাষ করেছি। প্রতি একরে ১২ থেকে ১৪ মণ বাদাম পাব বলে আশা করছি। এ ছাড়া বাজারে দাম ভালো থাকায় অনেকটা লাভবান হব বলে মনে হচ্ছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘চিনাবাদাম একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার। মাগুরা জেলায় এ বছর খরিফ এক মৌসুমে ৬৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬২ হেক্টর জমিতে চিনাবাদামের চাষ হয়েছে। যার মধ্যে মহম্মদপুর উপজেলাতেই চাষ হয়েছে ৬০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে আবাদ হয়েছে, তবে যেটুকু চাষ হয়েছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দাম ভালো পাব এবং আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’