![পেঁয়াজ ডিম আদার দাম পাইকারিতে কমলেও খুচরায় সুফল নেই](uploads/2024/03/31/1711868613.onion.jpg)
পেঁয়াজ, ডিম ও আদার দাম কমতির দিকে রয়েছে পাইকারি বাজারে। ফলে খুচরা বাজারেও এসব পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন এসব ভোগ্যপণ্য। ফলে পাইকারি বাজারে দাম কমার সুফল মিলছে না ভোক্তা পর্যায়ে।
চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় ডিমের আড়ত নগরের পাহাড়তলী বাজারে। টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে আনা হয় ডিম। প্রতিটি ট্রাকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ডিম থাকে। রোজায় ডিমের চাহিদা কম থাকায় পাইকারি বাজারে কমেছে বেচাকেনা। ফলে পাইকারি বাজারে দফায় দফায় কমছে দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে প্রতিটি লাল ডিম ১০ টাকা ৫০ পয়সা করে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। মার্চ মাসের শুরুতে পাইকারিতে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ৩০ পয়সায়। গতকাল বিক্রি হয় ৯ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩২ টাকায়। সে হিসাবে খুচরায় প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১১ টাকা।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘রোজায় ডিমের চাহিদা কম থাকায় পাইকারিতে বেচাকেনা একেবারেই কম। ফলে দাম কমতির দিকে রয়েছে। সামনে আরও কমবে। তাই খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমার কথা। কিন্তু তা কমেনি।’
নগরের হালিশহর এলাকার আল মক্কা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, ‘পাহাড়তলী বা রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ডিম কিনে নিয়ে আসি। পরিবহন খরচ, শ্রমিকের মজুরি আছে। সবমিলিয়ে প্রতিটি ডিম ১১ টাকায় ডিম বিক্রি না করলে লোকসান হয়।’
এদিকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে আরও কমেছে পেঁয়াজের বাজার। এক সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৬০ টাকা, মেহেরপুরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ও চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত মাসে প্রতি কেজি চায়না আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম আরও কমে প্রতি কেজি মেহেরপুরের পেঁয়াজ মানভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, ফরিদপুরের মানভেদে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা ও চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। অন্যদিকে প্রতি কেজি চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪৭ টাকায়। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের আফরা ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। দামও কমতির দিকে রয়েছে। আমরা আশাবাদী পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না।’
হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘একদিকে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশ ভালো, তার ওপর বেচাকেনা আগের তুলনায় কম। তাই পাইকারি বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ না আনলেও চলবে। আমাদের দেশি পেঁয়াজের ওপর আগামী দুই মাস নির্ভর করা যাবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা হয়তো বাড়তি দরে বিক্রি করছেন।’
নগরের ঈদগাঁ এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখেছি পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু আমরা তো এর সুফল পাচ্ছি না। আমাদের বাড়তি দরেই কিনে খেতে হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে। এটা খুব দুঃখজনক।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সব সময় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াতে সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা অল্প করে পণ্য আনেন এবং বাড়তি দরে বিক্রি করেন। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরাও অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সরকারের সংস্থাগুলোর উচিত পাইকারি, খুচরা সব জায়গায় সমানভাবে মনিটরিং করা।’