![পেঁয়াজের বীজ চাষে নতুন দিনের আশা](uploads/2024/04/03/1712133732.----.jpg)
ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। চলতি বছর জেলায় ২৩ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে বলে জানায় জেলা কৃষি বিভাগ। এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন। চলতি মৌসুমে জেলায় ১১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে।
জেলার সদর, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলি মাঠে সাদা কালো রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে পেঁয়াজ বীজের জমি। আর কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের ফুল পরাগায়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পেঁয়াজের বীজ চাষ করে শুধু কৃষকরাই লাভবান হননি স্থানীয় বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। পেঁয়াজ খেতে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন স্থানীয় যুবকরা।
সকাল হলেই বীজ খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষক ও শ্রমিকরা। কেউ সেচ, আবার কেউ পোকা দমনের কীটনাশক স্প্রে করেন, আবার কেউবা হাতের আলতো ছোঁয়ায় পরাগায়ন করতে ব্যস্ত সময় পার করেন। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এবং অনেক কিশোর-কিশোরীও এসব কাজ করছেন।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত নভেম্বরে পেঁয়াজ বীজ বপনের সময় থেকে বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে ১৩০ দিন। পরাগায়ন না হলে পেঁয়াজ ফুলে পরিপক্বতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। তবে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা খেতে কীটনাশক স্প্রে করেন, এতে উপকারী পোকা ও মৌমাছি মারা যায়। তাই ঝাড়ু ও হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের চেষ্টা চলছে। এ বীজ চাষে উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ।
সদর উপজেলার আখানগর বাজার এলাকায় প্রায় সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন রহমত আলী। তিনি বলেন, ‘এ বছর বিঘা প্রতি বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরি ও চাষাবাদসহ খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ৮ বিঘা জমি থেকে ৫০ মণ বীজ উৎপাদন করে প্রায় ১ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি করতে পারব।’
একই উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের চাষি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘এ বছর আমি ৩ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছি। সব মিলিয়ে ১০০ শতাংশ জমিতে আমার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি প্রায় ১০০ কেজি বীজ পাব বলে আশা করছি। গত বছর মানভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম।’
হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী এলাকার পেঁয়াজ চাষি স্বপন কুমার বলেন, ‘অন্য কোনো ফসলে এমন লাভ করা যায় না। পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার কালো সোনা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে পরিমাণ দাম পাওয়া যাচ্ছে এতে এ পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মতোই মূল্যবান।’
স্বপন কুমারের জমিতে বীজ পরিচর্যায় নিয়োজিত শ্রমিক হরপা রায় বলেন, ‘পেঁয়াজ বীজ পরাগায়ন থেকে শুরু করে সংগ্রহ পর্যন্ত প্রচুর কাজ থাকে। এ সময় আমরা বিভিন্ন বীজ খেতে কাজ করি। ভালো মজুরি পাই।’
পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বীজ চাষ করেছি। আমার উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। ফলন ভালো হওয়ায় প্রায় ৪ লাখ টাকা মুনাফার আশা করছি।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবির বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় ১১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে। এ বীজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। প্রতি হেক্টরে ৯০০ কেজি বীজ হলেন বাজারমূল্য হবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা।’
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (শস্য) ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩ কোটি টাকার ‘কালো সোনা’ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে কারণেই পেঁয়াজের বীজ চাষে স্বপ্ন বুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষকরা। এ পেঁয়াজের বীজ চাষে একদিকে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে বিকল্প কৃষি কর্মসংস্থান।’ সূত্র: বাসস