![গত ১৪ বছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ গুণ](uploads/2024/04/05/1712295592.Garments-Industry.jpg)
নতুন বাজারগুলোতে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১০ গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। একই সঙ্গে দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ফ্রম শার্ট টু শোরস: অ্যা ব্লুপ্রিন্ট ফর বাংলাদেশ আরএমজি ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। এ সময় বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ-হিল রাকিব, পরিচালক শোভন ইসলাম ও নুসরাত বারী আশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা রপ্তানিখাতে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য বরাবরই বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছি। নতুন বাজারগুলোতে আমাদের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত ১৪ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে। অর্থাৎ ৮৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে ৮৩৭ কোটি (৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন) ডলার হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে নতুন বাজারগুলোতে আমাদের পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।’
বর্তমান সংকটময় সময়ে নতুন বাজারে প্রবৃদ্ধি রপ্তানিতে কিছুটা স্বস্তি এনেছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘বাজার সম্প্রসারণের পাশাপাশি পণ্য বহুমুখীকরণেও ইতিবাচক অগ্রগতি এসেছে। বেশকিছু নতুন পণ্য, যেমন- আউটারওয়্যার ও অ্যাকটিভ ওয়্যারে বিনিয়োগ আসছে। স্যুট, লঞ্জারি ও ওয়ার্ক-ওয়্যারের মতো পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। এসব পণ্যের কাঁচামাল ও টেকনোলজির সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বিশেষ নীতি সহায়তা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সম্ভাবনাময় বাজারগুলোতে এসব উচ্চ মূল্যের পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে কাজ করতে হবে।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘পোশাক রপ্তানি ও বিশ্ব বাজারের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ২০২৪ নাগাদ পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। করোনা মহামারি, যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফিতি ইত্যাদি কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। তবে ২০২৪-এর মধ্যে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।’
ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানির ইতিবাচক ধারার কথা উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসা এবং পোশাকের খুচরা বিক্রিতে কিছুটা গতি সঞ্চার হওয়ায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’
পোশাক শিল্পে আশার কথা জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, “বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকটে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একই সময় বেশকিছু নতুন কারখানা ও নতুন বিনিয়োগ এসেছে। আমরা বিজিএমইএর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৩৯৩টি নতুন কারখানা বিজিএমইএর সদস্যপদ গ্রহণ করেছি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় প্রেরণা। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের শিল্পের মূল্য সংযোজন সক্ষমতা বেড়েছে। এর ফলে একদিকে আমাদের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ছে, ক্রেতাদের আমরা ‘ফুল প্যাকেজ’ সুবিধা দিতে পারছি, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থান বাড়ছে।”
সবুজ শিল্পায়নের চিত্র তুলে ধরে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, “জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সবুজ শিল্পায়নে আমাদের অগ্রগতি চলমান রয়েছে। আমাদের ‘লিড’ (এলইইডি) সনদপ্রাপ্ত গ্রিন কারখানার সংখ্যা বেড়ে ২১৪টিতে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্রিন কারখানার সংখ্যা ছিল ১২৮টি। গত ৩ বছর ৩ মাসে নতুন ৮৬টি কারখানা যোগ হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত মোট আটটি পোশাক কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশ্বের প্রথম স্থান অর্জন করেছে।”