![রাশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত বাড়বে](uploads/2024/04/18/1713426039.Russia-Economy-Moscow.jpg)
প্রভাবশালী বৈশ্বিক সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব উন্নত অর্থনীতির দেশের চেয়ে রাশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত বাড়বে। আইএমএফ আশা করছে, চলতি বছর রাশিয়ার অর্থনীতি ৩ দশমিক ২০ শতাংশ বাড়বে, যা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। খবর বিবিসির।
রাশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত বাড়ার কারণ উল্লেখ করে আইএমএফ বলছে, দেশটির তেল রপ্তানি এখনো স্থির রয়েছে এবং সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। সংস্থাটি বলছে, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বিশ্ব অর্থনীতিও উল্লেখযোগ্যভাবে স্থিতিশীল ছিল।
আইএমএফ বলছে, অনেক মন খারাপ ভবিষ্যদ্বাণী সত্ত্বেও মন্দা এড়িয়ে গেছে বিশ্ব, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেকাংশে স্থিতিশীল প্রমাণিত হয়েছে এবং বড় উদীয়মান বাজার অর্থনীতিগুলো হঠাৎ করে থেমে যাওয়ার ভোগান্তিতে পড়েনি।
আইএমএফ হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার ১৯০টি সদস্য দেশ রয়েছে। কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে তার পরিকল্পনা করতে বা ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সদস্য দেশ ও তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আইএমএফের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে। যেমন- ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার নির্ধারণ করতে আইএমএফের নির্দেশনা মেনে থাকে।
এই গোষ্ঠীটি বলেছে, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই পরের বছরের বৃদ্ধির ব্যাপারে আইএমএফ যে পূর্বাভাস দেয়, প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে সাধারণত সেটির তারতম্য হয়ে থাকে দেড় শতাংশের মতো। সংস্থাটি বলেছে, আইএমএফ পরের বছরের প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়, বেশির ভাগ উন্নত অর্থনীতির দেশের ক্ষেত্রে সচরাচর বাস্তবে যা ঘটে তার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্টের ব্যবধান হয়।
ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য ক্রেমলিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সত্ত্বেও, আইএমএফ এই বছর রাশিয়ান অর্থনীতির জন্য তার জানুয়ারির পূর্বাভাসকে হালনাগাদ করেছে এবং সংস্থাটি বলেছে যে, ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি কম হবে। তবে আগে প্রত্যাশিত ১ দশমিক ৮০ শতাংশের থেকে প্রবৃদ্ধি এখন আরও বেশি হবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির অর্থনীতিবিদরা।
আইএমএফের ডেপুটি ডিরেক্টর পেটিয়া কোয়েভা ব্রুকসের মতে, করপোরেট ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের বিনিয়োগ এবং রাশিয়ার মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের জ্বালানি তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি- দেশটির জ্বালানি তেলের শক্তিশালী রপ্তানির পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিকেও উন্নীত করেছে।
রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকদের মধ্যে একটি। ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি প্রকাশ করেছে যে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার তেল থেকে তৈরি কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি আমদানি করা হচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার কথা বাদ দিলেও, আইএমএফ চলতি বছর গোটা ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের জন্য তার দেওয়া পূর্বাভাস কমিয়েছে। এ বছর আইএমএফ যুক্তরাজ্যের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা জি৭-ভুক্ত উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে জার্মানির পরে যুক্তরাজ্যকে দ্বিতীয় দুর্বলতম পারফরমার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জি৭-এ ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।
আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, জি৭ভুক্ত দেশগুলোকে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ ছাড়া জি৭-এর শীর্ষ তিন সেরা পারফরমারদের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
আইএমএফ বলেছে, যুক্তরাজ্যে সুদের হার অন্য উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বেশি থাকবে। দেশটির সুদহার ২০২৯ সাল পর্যন্ত ৪ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলেও জানানো হয়।
এর আগে সংস্থাটি আশা করেছে যে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যেকোনো জি৭ অর্থনীতির মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি হবে ইউকেতে।
চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট বলেন, আইএমএফের পরিসংখ্যান দেখায় যে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি পূর্বের তুলনায় ১ দশমিক ২০ শতাংশ কম হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী ছয় বছরে জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো বৃহৎ ইউরোপীয় অর্থনীতির তুলনায় আমাদের অর্থনীতি দ্রুত বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে দুটি দেশেরই অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি বৃদ্ধির তুলনায় ইউকের থেকেও উল্লেখযোগ্যভাবে বড় ধরতের পতন হয়েছে।