পুরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার হবিগঞ্জে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শ্রমিকসংকটের কারণে সময়মতো ধান কাটা ও মাড়াই করা নিয়ে শঙ্কায় আছেন চাষিরা।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চলতি বছর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে বাম্পার ফলন হওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটা ও ঘরে তোলার কর্মযজ্ঞ চলছে। নানা বয়সী মানুষের কর্মব্যস্ততায় মুখর চারপাশ। প্রচণ্ড দাবদাহেও হাসিমুখেই কাজ করছেন সবাই। অন্য বছর এই সময়টাতে হাওরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে যায়। তবে এবার সেখানে ২০ শতাংশও কাটা হয়নি। মৌসুমের শুরুতে নানা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চাষাবাদ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। যে কারণে ধান পাকতে সময় লেগেছে।
এদিকে, প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে হাওরজুড়ে দেখা দিয়েছে শ্রমিকসংকট। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিকসংকট আরও বাড়ার শঙ্কা করছেন চাষিরা। অতিরিক্ত মজুরি দিয়েও শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে হারভেস্টার মেশিনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে কৃষকদের।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লোকড়া এলাকার কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ‘হাওরে আমার অনেক জমির ধান পেকে আছে। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছি না। যে কারণে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। তবে হারভেস্টার মেশিনও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আরও কিছু মেশিন দরকার। কখন যে আবার বৃষ্টিপাত হয়ে ধান নষ্ট হয় তার ঠিক নেই।’
বানিয়াচং উপজেলার দৌড়া এলাকার কৃষক ভবনা শংকর দাস বলেন, ‘গরমের কারণে কেউ ধান কাটতে চায় না। অন্য বছর ৭০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যেত। এবার ১ হাজার টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। যারা ধান কাটছেন তারাও মজুরি নিচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, কিন্তু ধান কাটছে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।’
একই উপজেলার সাঙ্গর গ্রামের কৃষক ময়না মিয়া বলেন, ‘শ্রমিক পাওয়া যায় না, এমনকি হারভেস্টার মেশিনও পাওয়া যায় না। যাদেরকে পাওয়া যায়, তারাও বেশি টাকা মজুরি চান। হারভেস্টার মেশিনের মালিকদের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই জীবন শেষ। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে ধান ঘরে তুলতে পারব না।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এবার পুরো মৌসুম আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। যেমন খরার প্রভাব পড়েনি, তেমনি অতিবৃষ্টিও হয়নি। তবে এখন যেহেতু গরম পড়েছে, তাই শ্রমিকরা ধান কাটতে চাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত জেলায় ৪৭৯টি হারভেস্টার মেশিন কাজ করছে। এ ছাড়া আরও কিছু হারভেস্টার মেশিনের চাহিদা দিয়ে নামের তালিকা প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যেই সেগুলোও বরাদ্দ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক ভাইয়েরা যেন নির্বিঘ্নে ধান ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। শ্রমিকসংকট দূর করতে হারভেস্টার মেশিনের সঙ্গে বাইরের শ্রমিক আনাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক জিলাফা সুলতানা বলেন, ‘শ্রমিকসংকট দূর করতে হারভেস্টার মেশিনগুলো পুরোদমে কাজ করছে। এ ছাড়া বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যেহেতু প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তাই কৃষকদের সতর্কতার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরপর ছায়াতে বিশ্রাম নিতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’