![মুরগির বাজার চড়া, ৭০ টাকার কমে মিলছে না সবজি](uploads/2024/05/10/Bazardor-1715316336.jpg)
এপ্রিলজুড়ে প্রচণ্ড গরমে উৎপাদন কমে যাওয়ার অজুহাতে কয়েক দিনের ব্যবধানে পোলট্রি মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। সোনালি মুরগির দামও বাড়তি। ডিমের দাম বেড়ে কোনো কোনো বাজার থেকে ১৪০ টাকা ডজন কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গ্রামাঞ্চলে খুবই কম দামে প্রায় সবজি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু রাজধানীতে ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না।
বোরো ধান উঠলেও কমছে না চালের দাম। কোরবানির ঈদ আসতে এখনো এক মাসের বেশি বাকি। এরই মধ্যে গরুর মাংসের দাম কোনো কোনো জায়গায় বাড়তে শুরু করেছে। মাছের কেজিও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। বেশির ভাগ জিনিসের দামই ঊর্ধ্বমুখী। ক্রেতাদের কষ্ট বাড়ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গোড়াতে দাম বেশি। তাই কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পোলট্রির দাম বেড়েছে
মুরগির দামের ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, দেশে চলমান দাবদাহে খামারের মুরগি মরে যাচ্ছে। তার পরও পোলট্রি মুরগির দাম আড়তে বাড়েনি। ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি। সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, ‘তাপে অনেক খামারের মুরগি মরে গেছে। এ জন্য সরবরাহ কমে গেছে। তার পরও দাম তেমন বাড়েনি। ১৬০-১৬৫ টাকা কেজি।’ কিন্তু সেই মুরগি রাজধানীতে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে পোলট্রি মুরগি ২০০-২১০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ১০ টাকা বেড়ে ২১০-২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
টাউনহল বাজারের ব্রয়লার হাউসের বেল্লাল হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে পোলট্রির দাম কিছু কম ছিল। ২০০ টাকা কেজি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। তবে সোনালি মুরগির দাম বাড়েনি।
অন্যান্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও বলেন, তাপের কারণে কয়েক দিন থেকে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম বাড়ছে। ঈদের পর ডিমের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকা ডজন। কয়েক দিন থেকে ১০-২০ টাকা বেড়ে ১৩০-১৪০ টাকা হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। তবে বাজারে কম হলেও ভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে।
বেশি দামেই পেঁয়াজ ও আলু বিক্রি
ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তার পরও দেশে পেঁয়াজের দাম তেমন কমেনি। পাইকারিতে একটু কমলেও আগের মতোই খুচরা বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। কারওয়ান বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ের খলিল বলেন, ‘ভারতের ঘোষণায় কমবে না পেঁয়াজের দাম। কারণ মৌসুম শেষ। বেপারিরা আস্তে আস্তে ছাড়বেন বাজারে।’
আগের মতোই পাইকারিতে ৫৫-৬০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজই বিভিন্ন বাজারে ৬৫-৭০ টাকা কেজি। টাউনহল বাজারের খুচরা বিক্রেতা রফিক বলেন, পেঁয়াজের কেজি ৬৫-৭০ টাকা। তবে ভালোটার দাম একটু বেশি, ৭৫ টাকা কেজি। অন্য খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, কমবে না পেঁয়াজের দাম।
সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কমেনি। তবে বাড়েনি। টাউনহল বাজারের বিক্রেতা রফিক বলেন, বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। আড়তেই বেশি দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আদা-রসুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি বলে জানান এই বিক্রেতা। আগের সপ্তাহে আদা ২০০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ২২০-২৩০ টাকা। রসুনের দামও বাড়তি। আগের সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বেড়ে ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ধান উঠলেও বেশি দাম চালের
হাওরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। তার পরও চালের দাম কমছে না। আগের মতোই প্রতি কেজি নাজিরশাইল মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, মিনিকেট ৭২-৭৫, আটাশ চাল ৫৫-৬০ ও মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৭০-১৮০ টাকা কেজি ও বস্তার পোলাওয়ের চাল ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আলাউদ্দিন বলেন, ‘ধান উঠে গেছে। তার পরও মিলে কমছে না চালের দাম। আমাদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। এ জন্য আগের মতোই বিক্রি করতে হচ্ছে চাল।’
কমে না ডাল-ছোলার দাম
বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১০-৮১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ বলেন, রমজানে চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ে। কিন্তু এক মাসেরও বেশি আগে ঈদ হয়েছে। তার পরও আগের মতো ছোলা ১১০ টাকা কেজি, বেসন ১২০, খোলা চিনি ১৪০, প্যাকেট চিনি ১৪৫, দুই কেজি আটা ১১০-১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মসলার দামও কমেনি বলে বিক্রেতারা জানান।
৬০ টাকার নিচে মেলে না সবজি
দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে কম দামে বিক্রি হলেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তীব্র তাপের অজুহাতে বেশি দামেই ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে সবজি। বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে বেগুন ৫০-৮০ টাকা। টমেটোর কেজি ৪০-৫০ টাকা, করলা ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়স ৪০, শিম ৪০, পেঁপে ৪০-৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, শসা ৪০-৬০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৬০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটোল ৫০-৬০, গাজর ৫০, কাঁচামরিচ ১২০-১৪০, বরবটি ৫০ টাকা কেজি।
টাউনহল বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম বলেন, ‘আমরাও শুনি গ্রামে কম দামে সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু কিনতে তো পারি না। তাই কম দামে বিক্রি করা যায় না।’
গরুর মাংসের দামও চড়া
রোজার ঈদে হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম ৮০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ঈদের পর আবার প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় নামে। খরার কারণে কোনো কোনো বাজারে আবার বাড়তে শুরু করেছে। সেগুনবাগিচা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মোরতজা মন্টু বলেন, দাম বেড়ে হয়েছে ৭৮০-৮০০ টাকা কেজি। তবে কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের মাংস বিক্রেতারা জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কিছুটা দাম বাড়তে শুরু করেছে। কমবে না দাম।
বিভিন্ন পণ্যের মতো মাছের বাজারেও তাপ কিছুটা বেড়েছে। টাউনহল বাজারের আবু তাহেরসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, রুই ও কাতল ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০, পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২৫০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।