পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ রাজবাড়ীতে উৎপাদিত হয়। তবে সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। কৃষকদের এই সমস্যা সমাধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করে দিচ্ছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজবাড়ী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কালুখালী উপজেলায় ২০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হয়। চলতি অর্থবছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের আরও ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরে কৃষকরা পেঁয়াজ রাখা শুরু করেছেন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণা করে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য মডেল ঘরের নকশা ডিজাইন করেছে। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, লোহা, কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এই ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ছয়টি ফ্যান দেওয়া হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পেঁয়াজ রক্ষা করতে চারপাশে রাখা হয়েছে ত্রিপল। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এসব ঘরে ৬ থেকে ৯ মাস পেঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি ঘরে পাঁচজন কৃষক তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের করমচাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক লুৎফর রহমানের বাড়ির উঠানের একপাশে মডেল ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে তিন স্তরে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে।
কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি এ বছরও ৬০০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছি। সব পেঁয়াজ একসঙ্গে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য নিজেদের মতো করে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এক দেড় মাস পর থেকেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। আমরা টিনের ঘরে মাচা করে রাখি। টিনের গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই মডেল ঘরও টিনের। এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছি। ঘরে আলো বাতাস প্রবেশ করে। আবার ফ্যানের ব্যবস্থা আছে। এজন্য এখনই বোঝা যাচ্ছে পেঁয়াজ পচবে না।
একই গ্রামের কৃষক আলিমুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের প্রধান অর্থকরি ফসলই পেঁয়াজ। পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা নিয়েই চিন্তা। নিজেদের মতো করে রাখি। দেখা যায় ছয় মাস পর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এই মডেল ঘর দেখতে এসেছি। ইচ্ছা আছে আগামী বছর আমি নিজেই পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘর নির্মাণ করব। আমি কালুখালী উপজেলাতেও খবর নিয়েছি। যারা গত বছর এই ঘরে পেঁয়াজ রেখেছিল তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়নি। সাত থেকে আট মাস পেঁয়াজ ভালো ছিল। তবে সরকার যদি গ্রামে গ্রামে আরও বেশি মডেল ঘর তৈরি করে দেয় তাহলে আমাদের বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো না।’
রাজবাড়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা রাজীব খান বলেন, ‘একটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ রাখা যাবে। পাঁচজন কৃষকের জন্য একটি ঘর করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই ঘর দেখে চাষিরা নিজেরা মডেল ঘর নির্মাণ করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করবেন। তাহলে তাদের পেঁয়াজ নষ্ট হবে না। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩০টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেখানে কৃষকরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। বাকি ১৫টি ঘরের কাজ কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। আগামী অর্থবছরে আমরা পাংশা উপজেলায় ৩০টি মডেল ঘর নির্মাণ করব।’