![দুর্বল কোম্পানি ও আইপিওর বিষয়ে ডিএসই ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে](uploads/2024/05/30/dse]-1717060073.jpg)
বিশ্বব্যাপী স্টক এক্সচেঞ্জকে পুঁজিবাজারের প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলা হয়। বাংলাদেশের আইনেও অনিয়ম প্রতিরোধ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া আছে। বাস্তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছিল না স্টক এক্সচেঞ্জ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একের পর এক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি দুর্বল কোম্পানিগুলোকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পনিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া হবে বলে জানায় বিএসইসি।
২০১৮ সাল পর্যন্ত ডিএসই যেকোনো আইপিওর (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) প্রসপেক্টাস পর্যালোচনার পাশাপাশি সুপারিশ করতে পারত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে সেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুধু পর্যবেক্ষণ পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে করে অনেক আইপিওতে স্টক এক্সচেঞ্জের নানা ধরনের আপত্তি সত্ত্বেও বিএসইসি সেগুলোর অনুমোদন দিয়েছিল। অবশ্য ডিএসইর সুপারিশ না থাকা সত্ত্বেও কিছু আইপিওর অনুমোদন বিএসইসি দিয়েছিল। ফলস্বরূপ বাজারে অনেক দুর্বল কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয় বিএসইসি এবং তাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সূচক বাড়া-কমা দেখার কাজ বিএসইসির না। আর কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনাও বিএসইসির কাজ না। কিন্তু পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এই দুটি কাজ করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছি। এখন থেকে আইপিও ও সূচকের উন্নয়ন স্টক এক্সচেঞ্জ দেখবে।
আইপিও কার্যক্রম এবং সূচকের ব্যাপারে কথা হলেও কোম্পানি পরিদর্শন, শেয়ারদর কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হাতেই রয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ডিএসইর কর্মকর্তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানি তাৎক্ষণিক পরিদর্শন করতে পারতেন। এ বিষয়ে আইনে বিএসইসির সম্মতি নেওয়ার কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না। কিন্তু সে সময় একটি কোম্পানি ডিএসইর তাৎক্ষণিক পরিদর্শন নিয়ে আপত্তি তুললে আইন পরিবর্তন করে কমিশনের সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়।
পাশাপাশি কোনো কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে ডিএসইসংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার লেনদেন সময়ে সময়ে সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ দিতে পারত। তবে বর্তমানে এই ক্ষমতা ডিএসই প্রয়োগ করতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক খবরের কাগজকে জানান, শেয়ার কারসাজি হচ্ছে দেখেও স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থা নিতে পারে না। কেবল অনলাইন সার্ভিল্যান্সের তথ্য বিএসইসিতে পাঠাতে পারে।
পাশাপাশি পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির পর কোম্পানি অনিয়ম করলে, আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের তথ্য না দিলে লেনদেন স্থগিত করে দেওয়া বা তালিকাচ্যুত করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু এ ক্ষমতাও ব্যবহার করতে পারে না। কোনো কোম্পানির অফিস বা কার্যালয় পরিদর্শনে যেতেও অনুমতি নিতে হয়। আবার অনুমতি চেয়েও মাসের পর মাস এমনকি বছরও অপেক্ষায় থাকার নজির আছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারদর কারসাজি প্রতিরোধ এবং তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি পরিদর্শনে আরও ক্ষমতা চায় প্রতিষ্ঠানটি।
কোনো শেয়ারের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সে ক্ষেত্রেও নির্দেশনা নিয়ে পূর্বানুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল বিএসইসি। সমালোচনার মুখে এজিএম না করা কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত করতে অনুমতি দিলেও বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানির ক্ষেত্রে তা কার্যকর করতে দেয়নি।
চলতি মে মাসের ২০ তারিখে বিএসইসি এ-সংক্রান্ত একটি নতুন নির্দেশনা জারি করে। বিএসইসির নির্দেশনায় বেশ কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার যেকোনো একটি শর্ত লঙ্ঘন করলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারবে। এ নির্দেশনা জুনের ২ তারিখ থেকে কার্যকর হবে। নিদের্শনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠাতে বিএসইসির অনুমোদন লাগবে না।
বিএসইসির নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেষ ডিভিডেন্ড ঘোষণার তারিখ থেকে বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে পরপর দুই বছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।
এর পাশাপাশি আইন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ব্যর্থ হলেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে কোনো রিট পিটিশন বা আদালতে বিচারাধীন কোনো আইনি প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থাৎ উপবিচারের বিষয় বা জোরপূর্বক ঘটনা ঘটলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বছর সময় পর্যন্ত বিবেচনা করা যেতে পারে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যদি তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংস্কার বা বিএমআরইর (ভারসাম্য, আধুনিকীকরণ, পুনর্বাসন এবং সম্প্রসারণ) জন্য এই ধরনের কোনো সময় ছাড়া ন্যূনতম ছয় মাস ধরে একটানা উৎপাদনে না থাকলে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে।
এ ছাড়া পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা যাবে।
এ ছাড়া কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত বা অনুমোদিত ডিভিডেন্ডের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ পরিশোধ বা বিতরণ করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ তা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করতে পারে।
ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান ছাড়া ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত অন্য কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-শেয়ারহোল্ডার ও পরিচালকদের শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।