মৌলভীবাজারে এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর জেলার প্রায় ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬০০ টন।
চায়ের মতোই জেলার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুরের পাহাড়ি টিলায় আনারস বাগান গড়ে উঠছে। আর এ বাগান এখানে গড়ে তুলেছেন আবদুল মান্নান। গত রবিবার আবদুল মান্নানের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, টিলাজুড়ে দেশি-বিদেশি নানান জাতের গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ তার বাগান। সেখানেই তিনি বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন আনারস বাগান।
আবদুল মান্নান জানান, গত মাসের ১৫ তারিখ থেকে আনারস বিক্রি শুরু হয়েছে। ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার আনারস পাইকারি বিক্রি করেছেন। আরও ৩ হাজার আনারস বিক্রি করতে পারবেন। তবে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে আনারস ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতো এবারও লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক আনারস পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আনারসের জন্য জেলায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
এদিকে জেলার বিভিন্ন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, গরমের কারণে আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে। বাজারে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার আনারস কেনাবেচা হয়। আকার অনুযায়ী প্রতিটি বড় আনারস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ছোট আকারের আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।
শ্রীমঙ্গলের আনারস চাষি মো. ইউনুস খান বলেন, ‘এ মৌসুমে আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিটি বড় আনারস ৫০ টাকায় এবং ছোট আনারস ২০ টাকায় বিক্রি করেছি। ন্যায্য দামে আনারস বিক্রি করে লাভবান হয়েছি।’
অপর চাষি বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘যখন আনারস একসঙ্গে পাকতে শুরু করে তখন সংরক্ষণের অভাবে অনেক আনারস পচে নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য এখানে একটি হিমাগার বানানো দরকার।’
চাষি ইরেশ পাল জানান, ‘এবার আনারসের ফলন ভালো হওয়ায় আমরা চাষিরা অনেক খুশি। তবে আনারস সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগারের খুব প্রয়োজন।’ চলতি মৌসুমে চাষিরা আনারসের ভালো মূল্য পেয়েছেন। বর্তমানে বাগানগুলোতে একসঙ্গে আনারস পরিপক্ব হওয়ায় বেশির ভাগ বাগান মালিক আনারস সংগ্রহ করে আড়তদারের কাছে নিয়ে যান। ওই সময়ে প্রতিদিন আড়তে কয়েক লাখ আনারস ওঠে।
শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমাদের আড়তে কম হলেও প্রায় কোটি টাকার আনারস কেনাবেচা হয়েছে। এতে আড়তদাররা যেমন খুশি, তেমনি চাষিরাও ভালো দাম পেয়ে লাভবান হন। চলতি মৌসুমে আরও কোটি টাকার কেনাবেচা হতে পারে।’
মৌলভীবাজারের আড়তদার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আনারস সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাগান থেকে সংগ্রহের এক দিনের মধ্যে চাষিদের বিক্রি করে দিতে হয়। আনারস পচনশীল হওয়ায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ আনারস প্রতি মৌসুমে নষ্ট হয়ে যায়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, ‘অনেক কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, আনারস পচে নষ্ট হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আনারস সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরি। কৃষকদের আমরা বলেছি, উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ বলেন, মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। এ বছর জেলার প্রায় ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আনারসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।