![বিষণ্নতা, রোগ নাকি স্বাভাবিক অবস্থা?](uploads/2024/05/16/WhatsApp Image 2024-05-16 at 16.59.03-1715859180.jpg)
বিষণ্নতা সাধারণত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানসিক অবস্থা , যা দৈনন্দিন কার্যকলাপে (যেমন- ঘুম, খাওয়ার, চিন্তা ও আচরণে ) প্রভাব ফেলে। অবস্থা বেধে বিষণ্নতা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। উদাহরণ স্বরূপ, - কোন একজনের নিকট আত্মীয় মারা যাওয়ায় সে বিষণ্ন অথবা কেউ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে বিষণ্ন কিংবা কেউ উদ্দেশ্য বা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বিষণ্ন বা অন্য যেকোনো কারণেই বিষণ্ন , যা কিনা মানুষের আবেগ ও হরমোন জনিত খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। তবে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিষণ্নতার অন্যতম উপসর্গগুলোর উপস্থিতি মানসিক অসুস্থতা বলে গণ্য হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বদৌলতে জানা গেছে, বিশ্বের ২৬৪ মিলিয়ন মানুষ বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত এবং আমাদের দেশে প্রায় ৭% (৬.৭%) মানুষ এ রোগের শিকার (২০১৮ সালের জরিপ ও গবেষণা অনুসারে)।
বিষণ্নতার কারণ
কোন একটি কারণে বিষণ্নতা হবে এমনটা বলা বেশ শক্ত । বরং অনেকগুলো কারণ এর সমন্বয়ে বিষণ্নতা রোগ হতে পারে।মূলত মস্তিষ্কের জৈব-রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতাই বিষণ্নতার মূল কারণ । নানা গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে আমাদের মস্তিষ্কের নানা জৈব-রাসায়নিক পদার্থ যেমন,- এপিনেফ্রিন,নর-এপিনেফ্রিন,গ্লুটামেট, গামা অ্যামাইনোবিউটারিক এসিড ,কর্টিসল,ডোপামিন ইত্যাদির ভাষ্যহীনতা বিষণ্নতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বিভিন্ন এন্ডোক্রাইন রোগ সমূহ, যেমন- থাইরয়েড ,প্যারো-থাইরয়েড ,ডায়াবেটিস কিংবা হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-থাইরয়েড ও হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-অ্যাক্সিস এর ভারসাম্যহীনতা বিষণ্নতার কারণ হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে জিনগত ত্রুটি বিষণ্নতা রোগের অন্যতম কারণ । অর্থাৎ,করো পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়র ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা থাকলে, সেই ব্যক্তির বিষণ্নতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মস্তিষ্কের গঠন জনিত কয়েকটি কারণও বিষণ্নতার জন্য দায়ী হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি বিষণ্নতায় ভুগছেন
DSM-V (মার্কিন চিকিৎসক সমিতি এর পুস্তক) এ বিষণ্নতা যাচাইয়ের একটি মানদণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। যেটির মাধ্যমে আপনিও আপনার বিষণ্নতা যাচাই করতে পারবেন। নিচের প্রশ্নগুলি পড়ুন এবং হ্যাঁ /না এ উত্তর করুন।
১.আপনার কি ইদানিং খুব বেশি মন খারাপ থাকে?
২. আপনার ভেতর কি নেতিবাচক চিন্তা আসে ?
যেমন -
*আমার দ্বারা কিছুই হবে না
*আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে
*আমার বেঁচে থাকার কোন অর্থ নেই
*আমার মরে গেলেই বুঝি ভালো হতো ...ইত্যাদি
৩.আপনি আগে যেসব কাজে আনন্দ, উৎসাহ বা আগ্রহ পেতেন /ভাল লাগতো সেগুলো ইদানিং আর ভালো লাগেনা ?
৪.আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম কি ধীরগতিতে চলছে/ব্যাহত হচ্ছে ?
৫.আপনার শরীরের ওজন,খাওয়া বা ঘুম কি অনেকটাই কমে গেছে /বেড়ে গেছে ?
৬.উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য কি আপনার সামাজিক ,পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলির কোন একটির উত্তর যদি হ্যাঁ হয় এবং তা যদি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হয়ে থাকে তবে আপনি বিষণ্নতা রোগে আক্রান্ত।
চিকিৎসা
প্রচলিত চিকিৎসা মতে বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসায় ঔষধ এবং সাইকোথেরাপি দুইটি পদ্ধতির উল্লেখ আছে। বিষণ্নতা চিকিৎসায় দুটি পদ্ধতি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এবং দুটির সমন্বয়েই কেবলমাত্র বিষণ্নতার ইতি টানা সম্ভব।
সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীর নেতিবাচক চিন্তা ও মনোভাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। বিষণ্নতা চিকিৎসায় যেসব ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে আমরা এন্টিডিপ্রেসেন্ট বলি। বাজারের নানা ধরনের এন্টিডিপ্রেসেন্ট পাওয়া যায়। বিষণ্নতা সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য একটি রোগ। আপনার বিষণ্নতা যাচাই করুন । প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। হাসি-খুশিময় সুস্থ জীবন উপভোগ করুন। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবন আপনার অধিকার
ডা: মাহফিজুর রহমান
রেজিস্টার
মনোরোগ বিভাগ
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা।