ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

চুল পড়লে কী করবেন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম
আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম
চুল পড়লে কী করবেন

সাধারণত দিনে আমাদের ১০০টা চুল পড়ে, কিন্তু যদি আপনি তার চেয়ে বেশি চুল পড়তে দেখেন (১২০-১৫০ বা আরও বেশি) বা মাথার ত্বকের কোনো জায়গা খালি হয়ে যেতে দেখেন, তবে আপনার তখনই চুলের ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অলিভা ক্লিনিক অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম

চুল পড়ার শ্রেণিভেদ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চুল পড়াকে নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করেন।

অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া: এটি খুব সাধারণ সমস্যা। মহিলা ও পুরুষ উভয়েই এই রোগের শিকার হতে পারেন। এটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে পারে যেমন টিনএজ বয়সে এবং বয়সের সঙ্গে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস: একটি বিশেষ বিন্যাস অনুযায়ী চুল পড়া শুরু হয়। প্রথমে কপালের দুই পাশ থেকে। সময়ের সঙ্গে হেয়ারলাইন পিছিয়ে ‘M’ আকৃতি ধারণ করে। ব্রহ্মতালুর চুলও পাতলা হয়ে আংশিক বা পুরো ফাঁকা হয়ে যেতে পারে।
ফিমেল প্যাটার্ন বল্ডনেস: এতে চুল মাথার ওপরের দিক থেকে ফাঁকা হওয়া শুরু হয় এবং মাঝখানের সিঁথি ক্রমশ চওড়া হয়ে যায়। তবে হেয়ারলাইন পেছায় না। কখনো কখনো পুরো মাথায় টাক পড়ে যেতে পারে।

টেলোজেন এফ্লুভিয়াম: এটি সারা মাথায় চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কোনো একটি ঘটনার ফলে তিন মাস পরে শুরু হয় এবং মাস ছয়েকের মধ্যে সাধারণত নিজেই কমে যায়।

অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা: এ ধরনের চুল পড়াতে মাথার ত্বকের কিছু বিক্ষিপ্ত জায়গায় গোল করে টাক পড়ে যায়। তবে বাকি চুল স্বাভাবিক থাকে। অনেক সময় পুরো মাথাতেই টাক পড়ে যেতে পারে। এতে শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি দেহের সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি করে তাকে নষ্ট করে দেয়।

ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া: এই রোগে বারবার চুল ধরে টানার ফলে চুল পড়ে যায়। ডাক্তাররা এই রোগকে ঝোঁক নিয়ন্ত্রণ রোগের তালিকায় ফেলেন।

ইনভল্যুশনাল অ্যালোপেশিয়া: স্বাভাবিক বয়স বৃদ্ধির জন্য যে চুল পড়া। এর মূল কারণ হলো চুলের বৃদ্ধির অ্যানাজেন পর্বটির সময় হ্রাস পাওয়া। এতে যত তাড়াতাড়ি চুল পড়ে, অত তাড়াতাড়ি নতুন চুল গজিয়ে উঠতে পারে না।

স্কারিং অ্যালোপেশিয়া: একে সিকাট্রিশিয়াল অ্যালোপেশিয়াও বলা হয়। এটি খুব বেশি দেখা যায় না। এতে বিভিন্ন অসুখের ফলে মাথার ত্বকে প্রদাহ বা ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়ে নতুন চুল গজানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

চুল পড়ার কারণ
চুল পড়া শুরু হওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন-

বংশগত: পরিবারে কারও চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে। ফলে পুরুষরা টাক পড়া বা হেয়ারলাইন পিছিয়ে যাওয়া লক্ষ করতে পারেন এবং মহিলারা সিঁথি চওড়া হয়ে যাওয়া ও চুলের ফাঁক দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

হরমোনের সমস্যা: গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনের তারতম্যর ফলে চুল পড়া শুরু করতে পারে। এ ছাড়া গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে, প্রসবের পরে বা হিস্টারেক্টমি (গর্ভাশয় কেটে বাদ দেওয়া) হলে অ্যানাজেন পর্যায়টি ছোট হয়ে গিয়ে চুল পড়তে পারে। ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স আরেকটি কারণ। পুরুষদের ক্ষেত্রেও চুল পড়ার পেছনে হরমোনের তারতম্য থাকতে পারে।

ভুল জীবনশৈলী: স্ট্রেস, বাজে খাদ্যাভ্যাস, অপুষ্টি এবং ভুল জীবনশৈলী অনুসরণের কারণে চুল পড়তে পারে।

ওষুধ: ক্যানসারের কেমোথেরাপি চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়তে পারে।

টেনে চুল বাঁধা ও চুলে রাসায়নিক চিকিৎসা করানো: টেনে চুল বাঁধা যেমন ঝুঁটি বাঁধার ফলে হেয়ার ফলিকলে টান পড়ে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। ব্লিচ, রং দিয়ে চুলের রাসায়নিক চিকিৎসা করালে চুল সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে যেতে পারে।

অন্যান্য কারণ: অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কারণের মধ্যে পড়ে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন- থাইরয়েডের রোগ, লুপাস এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ। ক্র্যাশ ডায়েট, চিন্তায় নিয়মিত চুল টানা বা মাথা চুলকানোর অভ্যাস, দ্রুত ওজন কমানো, ইনফেকশন, চুলের রঙে অ্যালার্জি, চুলের কসমেটিক্স, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস জাতীয় রোগের কারণে হঠাৎ করে চুল পড়া শুরু হতে পারে।

লক্ষণ ও উপসর্গ
ক্রমাগত অতিরিক্ত চুল পড়া।

ব্রহ্মতালুর চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।

গোলাকৃতি আকারে বিভিন্ন জায়গায় টাক পড়া।

ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য হঠাৎ করে চুল উঠে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা বা চুলকানি।

 বিক্ষিপ্তভাবে চুল গজানো।

‘M’ আকারে হেয়ারলাইন ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়া।

রোগ নির্ণয়
বিশেষজ্ঞরা চুল পড়ার কারণ চিহ্নিত করতে মেডিকেল হিস্ট্রি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ এবং ট্রাইকোস্কোপির সাহায্য নেন। খুব বেশি চুল পড়ার কারণে নিয়ে সন্দেহ থাকলে ডাক্তার বায়োপসি করার পরামর্শ দিতে পারেন যাতে একটি উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি নির্দিষ্ট করা যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
চুল পড়া থামাতে এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

উগ্র রাসায়নিক দেওয়া সামগ্রী চুলে লাগাবেন না। তাপ দিয়ে চুল স্টাইল করার সরঞ্জাম যেরকম স্ট্রেটনার বা পার্মিং আয়রন ব্যবহার করবেন না।

 সুস্থ চুল পরিচর্যার রুটিন মেনে চলুন এবং হালকা শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার চুল পরিষ্কার করুন। কতবার শ্যাম্পু করা উচিত তা আপনার চুলের প্রকৃতি ও ময়লা এবং পলিউশন চুলে কতটা প্রভাব ফেলছে তার উপর নির্ভর করে।

প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট ও ভিটামিন যেমন আয়রন, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন আর ভিটামিন ই সহ একটি ব্যালান্সড ডায়েট খান।

সুস্থ জীবনশৈলী মেনে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগাসন এবং মেডিটেশন করে চাপমুক্ত জীবন উপভোগ করুন।

এমনভাবে চুল বাঁধবেন না যাতে চুলের গোড়ায় বেশি টান পড়ে।

ঘরোয়া সমাধান

দই: ২ চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ চামচ মধু এবং ১ চামচ লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রনটা ভালো করে চুলে লাগিয়ে কম করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। চুলটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে একবার করলে চুল পড়ার হার কমতে শুরু করবে।

নারকেল দুধ: এক কাপ নারকেল দুধ নিয়ে ধীরে ধীরে স্কাল্পে লাগান। টাওয়াল দিয়ে মাথাটা ঢেকে ২০ মিনিট রেখে ভালো করে চুলটা ধুয়ে ফেলুন। এমনটা সপ্তাহে কয়েকবার করলেই দেখবেন চুল পড়া কমতে শুরু করবে।

পেঁয়াজের রস: একটা পেঁয়াজ থেকে রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর সেই রস সরাসরি মাথায় লাগিয়ে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করে নিন। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে ২-৩ বার এই পদ্ধতিতে চুলের পরিচর্যা করলে ফল পাবেন একেবারে হাতে-নাতে।

বিটরুট: পরিমাণ মতো বিটরুট পাতা নিয়ে পানিতে সেদ্ধ করে নিন। তারপর পাতাগুলো গুঁড়ো করে নিয়ে মেথির সঙ্গে মিশিয়ে স্কাল্পে লাগান। এই মিশ্রনটি ২০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখলে চুল পড়ার হার একেবারে কমে যায়। 

মেথি: মেথি বীজ নিয়ে এক গ্লাস পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন বীজগুলো বেটে পেস্ট বানান। সেই পেস্টটা ভালো করে মাথায় লাগিয়ে ৪০ মিনিট রেখে দিয়ে ধুয়ে নিন।

নিম পাতা: ১০-১২টা নিম পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন। সেই পানি দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিন। এমনটা করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে।

অ্যালোভেরা: পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল নিয়ে স্কাস্পে লাগিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে মাথাটা ধুয়ে নিন।

কলি 

ঘুম ও ক্যানসার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ঘুম ও ক্যানসার

টিউমারের কোষগুলো যখন রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শরীরের নতুন কোনো জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করে, তখন ক্যানসারের অবস্থা হয় সবচেয়ে গুরুতর। ক্যানসার ছড়ানোর এই প্রক্রিয়াটি মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত। লিখেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের দেহে সিটিসি বা সার্কুলেটিং টিউমার সেলস নামের এই খারাপ কোষগুলোর দিনের তুলনায় রাতে রক্তে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে ‘দ্য মেটাস্ট্যাটিক স্প্রেড অব ব্রেস্ট ক্যানসার এক্সিলারেটস ডিউরিং স্লিপ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য প্রকাশিত হয়।

ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ঘুমিয়ে পড়লেই তার টিউমারগুলো জেগে ওঠে- বলেন জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ক্যানসার বায়োলজিস্ট ও গবেষণাপত্রের সহলেখক নিকোলা অ্যাসিটো।

তিনি আরও বলেন, মেটাস্ট্যাটিসকে বোঝার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি ধাপ অতিক্রম করলাম। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য এটি একটি সুখবর।

দেহঘড়ির সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র
২০০৭ সালে সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হওয়াকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার ক্যানসারের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করে। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, যারা রাত জেগে বা অসময়ে কাজ করে যেমন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস, রাতে কাজ করা নার্স ইত্যাদি পেশার মানুষদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে কেন এমন ঘটে সেই প্রশ্ন এতদিন জানা যায়নি। 

মানুষের সারকাডিয়ান ঘড়ি সাধারণত তাদের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা ২৪ ঘণ্টার সময়সূচিতে ঘুম ও পরিপাকব্যবস্থার মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। অধিকাংশ গবেষকই আগে ভাবতেন, ক্যানসার কোষগুলো এতটাই অবাধ্য যে তারা দেহঘড়ির মতো সময়সূচির কোনো তোয়াক্কাই করে, বলেন অ্যাসিটো।

যেসব ইঁদুরের টিউমার আছে, তাদের সিটিসির মাত্রা দিনের কোন সময় রক্ত নেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে। সেখান থেকেই অ্যাসিটো দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রক্ত পরীক্ষার পরিকল্পনা করেন। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন নারীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ভোর ৪টা এবং রাত ১০টা- এই দুটি ভিন্ন সময়ে তিনি রক্ত সংগ্রহ করেন।

গবেষকরা দেখেন, ভোর ৪টায় সংগৃহীত নমুনায় শনাক্তকৃত সিটিসির হার প্রায় ৮০ শতাংশ। সে সময় রোগীরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।গবেষকরা দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা হলো, এই গুটিকয়েক আক্রান্তদের বাইরে অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে কি-না তা খুঁজে বের করা। এর জন্য গবেষকরা স্তন ক্যানসারের টিউমার ইঁদুরে প্রতিস্থাপিত করে সারাদিন তাদের সিটিসির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।

মানুষের তুলনায় ইঁদুরের সারকাডিয়ান রিদম সম্পূর্ণ ভিন্ন, অর্থাৎ তারা রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয়। গবেষক দল দেখেন, ইঁদুরগুলোর সিটিসি স্তর দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ছিল। এ সময় তাদের সিটিসির হার স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৮ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা যায়।

ঘুম আসল শত্রু নয়
গবেষক দলটি দেখেন, টেস্টোস্টেরন বা ইনসুলিনের মতো হরমোনের ব্যবহার ইঁদুরের সিটিসি স্তরের ওপর প্রভাব ফেলে। কখন কোনো সময় হরমোনগুলো বাড়ানো বা কমানো হয়েছিল, তারও প্রভাব পড়েছিল সিটিসি স্তরে।

তবে এর মধ্যে কেউ যেন ঘুমকেই স্তন ক্যানসার রোগীদের শত্রু ভেবে না বসেন, সেই বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার রোগীরা দিনে সাত ঘণ্টার কম ঘুমালে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হলে ক্যানসার দ্রুত ছড়াচ্ছে।

অনুলিখন: নিশু ইসলাম

 কলি

পায়ের আঙুলের রোগ বুনিয়ন

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
পায়ের আঙুলের রোগ বুনিয়ন

বুনিয়ন হলো পায়ের বুড়ো আঙুলের গোড়ায় মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা। পায়ের বুড়ো আঙুল বেশি করে দ্বিতীয় আঙুলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ফলে মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা অংশটি হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বুনিয়ন কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি করে না, আবার অন্যদের জন্য প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক হয়। হেলথ লাইন ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

বুনিয়ন লক্ষ করা খুবই সহজ। এগুলো সহজেই দেখা যায়। এ সময় বুড়ো আঙুলের গাঁটে প্রদাহ এবং লালচে ভাব থাকে। একনাগাড়ে অথবা থেকে থেকে ব্যথা হয়। বুড়ো আঙুলের বাইরের দিকে ফোলা থাকে। যাদের পায়ের বুড়ো আঙুলে বুনিয়ন রয়েছে, সাধারণত তাদের পায়ের কড়ে আঙুলের গোড়াতেও একই রকম ফোলা অংশ দেখা যায়।

কারণগুলো কী কী?
বুনিয়ন হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পায়ের পাতায় আঘাত। এ ছাড়া বংশগত অঙ্গবিকৃতি। জন্মের সময় অন্যান্য অঙ্গবিকৃতি। খুব আঁটসাঁট জুতা পরা বা উঁচু হিল (যদিও এটা নিয়ে তর্কবিতর্ক আছে)। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটাস থেকেও এটা হতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
বুনিয়ন নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের আপনার পায়ের পাতার পরীক্ষাই যথেষ্ট। তবে চিকিৎসক বুনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ এবং কারণ মূল্যায়নের জন্য কখনো কখনো পায়ের পাতার এক্স-রে করাতে পারেন।

বুনিয়নের চিকিৎসা প্রথাগত পদ্ধতি থেকে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত হতে পারে। আর তা অবস্থার প্রবলতা এবং ব্যথা উপলব্ধির ধরনের ওপর নির্ভর করে। এর নানা রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- পরার জন্য বেশি আরামদায়ক জুতা বেছে নেওয়া। ব্যথা থেকে আরাম পেতে সাপোর্ট প্যাড, টেপ অথবা স্প্লিন্ট ব্যবহার করা। আক্রান্ত অংশে চাপ কমাতে জুতায় ইনসার্ট ব্যবহার করা। ফোলা ও লালচে ভাবের উপশমে প্রভাবিত অংশে বরফ ঘষা।
অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন হাড়ের একটা অংশ সরানোর পর বুড়ো আঙুলের গাঁট সোজা করতে এবং আগের মতো করতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। বুড়ো আঙুলের গাঁটের চারপাশে ফোলা টিসু সরাতে এবং আক্রান্ত গাঁটের হাড়গুলো মেলানোর জন্যও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

বুনিয়ন সারানোর ঘরোয়া উপায়
১. নিয়মিত পায়ের ম্যাসাজ করুন। এতে পেশি শিথিল ও আরও শক্তিশালী হয়। এমনকি পায়ের আকৃতিও সঠিক থাকে। পায়ের ম্যাসাজের জন্য একটি টেনিস বল পায়ের নিচে রেখে রোল করুন। নিয়মিত এই অনুশীলন করুন।

২. পায়ের বুনিয়ন সারাতে একটি রাবার ব্যান্ড পায়ে বেঁধে নিন। এরপর আঙুলের শক্তি দিয়ে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করুন। অন্তত ১০ মিনিট এই অনুশীলন করুন দৈনিক।

৩. মেঝের ওপর কয়েকটি পাথর বা মার্বেল রেখে তা বুড়ো আঙুল ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝে নিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। বুনিয়ন সারাতে এটিও বেশ কার্যকর এক অনুশীলন।

 কলি

দাঁতের ব্যথা ভালো হয়

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
দাঁতের ব্যথা ভালো হয়

সারা বিশ্বে দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ পরিস্থিতি। দাঁতব্যথা একটি অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। কোনো একটি উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে এসে ব্যথা শুরু হয়। তারপর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বেশি বা কম অস্বস্তিকর, দুর্দশা এবং যন্ত্রণার একটি সংবেদন। মাই উপচার অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম

দাঁতের ব্যথার কারণ হলো দাঁতের রোগ, দাঁতে গর্ত অথবা দাঁতে আঘাত লাগা। দাঁতের চিকিৎসার দুটি পর্যায় আছে- প্রথমটি হলো কারণ নির্ণয় এবং দ্বিতীয়টি হলো এর চিকিৎসা। সঠিকভাবে দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এবং চিকিৎসা ও ওষুধ পেলে দাঁতের ব্যথা সাধারণত ২-৩ দিনে সেরে যায়।

দাঁতের ব্যথা হওয়ার কারণ
দাঁতের ব্যথার অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন- গর্ত হওয়ার জন্য ব্যথা হতে পারে। আঘাত, দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গেলে, দাঁতের গ্রাইন্ডিং, দাঁতের এবসেস, দাঁতের সংবেদনশীলতা, দাঁত ফেটে যাওয়া, ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মাড়ির রোগ থেকেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে। তবে নিজে নিজে রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দাঁতের ব্যথার আসল কারণ জেনে নিন।

দাঁতের ব্যথার প্রকারভেদ
পুলপাল দাঁতের ব্যথা: পুলপাল টিস্যু যখন লালা বা বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন এই ব্যথা হয়। এর কারণ হলো গভীর ক্যারিজ, ক্ষয়, ফেটে যাওয়া বা দাঁত ভাগ হয়ে যাওয়া। পুলপাল দাঁতের ব্যথার তীব্রতা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে। যেমন- মিষ্টি, গরম বা ঠাণ্ডার প্রতি অতি-সংবেদনশীলতা থাকলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথা: দাঁতের আশপাশে আঘাত লাগা দাঁতের ব্যথার মূল কারণ। এতে ট্রমা হতে পারে, অক্লুসাল চাপ হতে পারে, পাশের দাঁতের সঙ্গে ঘর্ষণ হতে পারে। অন্যান্য কারণ হলো দাঁতের চিকিৎসা যেমন দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁতের ইন্টারফিয়ারেন্স, উঁচু ফিলিং বা গভীর ফিলিং, দাঁতের স্পর্শের এলাকার ভেতরে ফাঁকা ইত্যাদি। দাঁতের আশপাশ এলাকার সংক্রমণ কিংবা পাশের দাঁতের সরাসরি ফুলে যাওয়া, সাইনাসের গর্ত এবং ছড়িয়ে পড়া হাড়ের সংক্রমণ। যখন দেখা যায় যে, পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথায় বেশ কয়েকটি দাঁত প্রভাবিত হয়েছে, তখন ব্রাসিজম বা নাইট বাইটিং বা ক্লেঞ্চিংকে কারণ বলে মনে করা হয়। হাড়ের বিকৃতির জন্য পেছনের দাঁতে অত্যধিক চাপ পড়ে এবং টি-এম-জে’তে ক্ষয়ের কারণে পরিবর্তন আসতে পারে। টি-এম-জে হলো টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টস, যা নিচের চোয়ালকে মুখের বাকি অংশের সঙ্গে জুড়ে 
রাখে। টি-এম-জে’তে আঘাত লাগলেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে।

ফাটা দাঁত: ফাটল দাঁতের সব ক’টি স্তর ভেদ করতে পারে। স্তরগুলো হলো এনামেল, ডেন্টিন বা পাল্প। উপসর্গগুলোও সেই অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। ডেন্টিনের ভেতরে রয়েছে ডেন্টিনাল ট্যুবুল, আর তার ভেতরে যে তরল পদার্থ আছে, তার চলাচলের ফলে দাঁত ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা যখন দাঁত দিয়ে খাবার চিবাই, তখন চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তরলের চলাচল শুরু হয়।

দাঁতের ব্যথা এর প্রতিরোধ
ডেন্টাল ক্যারিজ, পুলপাল, পেরিয়োডন্টাল রোগ ইত্যাদি হ্রাস করতে পারলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। নিচের উপদেশগুলো পালন করলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দৈনন্দিন খাদ্যে চিনির পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখুন। হাল্কা এবং ভারী ভোজনের মধ্যে সময়সীমা হ্রাস করুন। দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন। ক্লোরহেক্সিডিনের মতো ব্যাকটেরিয়া নাশক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন। ফ্লোরাইড-যুক্ত টুথপেস্ট এবং জেল ব্যবহার করুন। খাবার গিলবার আগে ভালো করে চিবিয়ে নিন। চিনিবিহীন চিউইংগাম ব্যবহার করুন। দাঁতের পৃষ্ঠতল মসৃণ করুন। সমস্ত ক্যাভিটি ফিল করুন।

দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা
দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা নির্ণয়ের ওপরে। দাঁত ব্যথার কারণ জানার পর ডেন্টিস্ট এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেন- 

পুঁজ বের করা: ডেন্টিস্ট পুঁজ এবং রস বের করে দেবেন।

সরাসরি পাল্পের ক্যাপিং: আরাম দেওয়ার জন্য সাধারণত ক্যালসিয়ামের একটি দ্রবণ লাগানো হয়, যাতে পাল্পের পুনরুদ্ধার হয়। সাধারণত আয়োডোফর্ম ক্যালসিয়াম পেস্ট এই কাজের জন্য ব্যবহার করে হয়।

রুট ক্যানাল চিকিৎসা: এটি খুবই সাধারণ এবং পরিচিত একটি পদ্ধতি। রুট ক্যানাল চিকিৎসা অথবা আরসিটি পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সংক্রমিত পাল্পকে বের করে নেওয়া হয় এবং গাট্টা-পারচার শঙ্কু পাল্পের গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। গর্তটি ভর্তি হয়ে গেলে এর ওপরে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটিই দাঁত বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এবং ডেন্টিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

দাঁত নিষ্কাশন: দাঁত তুলে ফেলা হলো সবচেয়ে কম পছন্দের চিকিৎসা। ডেন্টিস্টদের মতে, দাঁত বাঁচানোর সব চিকিৎসা বিফল হলে তবেই দাঁত তুলে ফেলার কথা ভাববেন। মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গেরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে। অতএব, মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

 কলি 

হাইপারমোবিলিটি এক ধরনের বাত রোগ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
হাইপারমোবিলিটি এক ধরনের বাত রোগ

হাইপারমোবিলিটি একটি স্বল্প পরিচিত শব্দ, যা একটি রিউম্যাটিক উপসর্গ। আমাদের শরীরে অনেক জয়েন্ট বা গিঁট আছে। হাত-পা, মুখমণ্ডল এমনকি মেরুদণ্ড নড়াচড়ার সময় এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়, এই সমস্যাকেই হাইপারমোবিলিটি বলে। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বশেষ রিউম্যাটোলজি বা বাত রোগের যে শ্রেণিবিন্যাস করেছে, সে অনুযায়ী ৬৯৩ রকম রোগ আছে এই বিভাগের অধীনে। তার মধ্যে একটি অবস্থা হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি। সুতরাং এটি এক ধরনের বাত রোগ। প্রায় ১০ থেকে ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে হাইপারমোবিলিটি থাকতে পারে। এর কারণে জয়েন্টে ব্যথা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু ও কিশোর বয়সে সমস্যা শুরু হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ কমতে থাকে।

শিশুদের জয়েন্ট ব্যথাকে অনেক অভিভাবক বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হয়েছে ভেবে চিন্তিত হন এবং চিকিৎসকদের কাছে আসেন। হাইপারমোবিলিটি নিয়ে তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ সারা বিশ্বে এই রোগ নির্ণয় হতে দেরি হয়।

কেন হয়?
হাইপারমোবিলিটি কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। কারও জয়েন্ট বা গিঁটগুলোয় ব্যথা কেন হয়, নড়াচড়া বেশি কেন হয়, লুজ বা ঢিলেঢালা কেন হয়ে যায় তাও সঠিকভাবে জানা যায়নি এখনো। মানবদেহে হাড়, হাড়ের সঙ্গে তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল যা গিঁট বা জয়েন্টগুলোকে শক্তিশালী করে। এগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যাকে কোলাজেন বলে। হাড়ের বড় অংশে কোলাজেন থাকে। ধারণা করা হয়, কোলাজেনের ত্রুটির কারণে হাইপারমোবিলিটি হতে পারে এবং জিনগত ত্রুটি এ জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হয়। যদিও ঠিক কোন জায়গায় এই ত্রুটি হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।

যত বয়স বাড়তে থাকে হাইপারমোবিলিটি তত কমতে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় এশিয়ান এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় হাইপারমোবিলিটির প্রকোপ বেশি।

লক্ষণ
হাইপারমোবিলিটির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে জয়েন্টে বা গিঁটে ব্যথা। এর বাইরে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন- কারও কারও মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, হঠাৎ করে চোখে অন্ধকার দেখা ইত্যাদি হতে পারে।

কারও পেটের সমস্যা যেমন- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস দেখা দেয়। কারও কারও ত্বক ঢিলে হয়ে যায়। কোনো কোনো রোগীর মলদ্বার নিচের দিকে নেমে যায় এবং নারীদের ক্ষেত্রে মলদ্বারের পাশাপাশি জরায়ু নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। তবে এই উপসর্গগুলো অনেক কম দেখা যায়।

রোগটি দ্রুত শনাক্ত করুন  
মূলত হাইপারমোবিলিটির জন্য যে ব্যথাগুলো হয় সেগুলো আর্থ্রালজিয়া বা বাত ব্যথা। অনেকেই মনে করেন, বাত ব্যথা বয়সকালের রোগ। এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। বেশির ভাগ বাত ব্যথা কম বয়সেই হয়, আর এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি।
যখন কোনো রোগীর জয়েন্টে বা গিঁটে অথবা মাংসপেশিতে ব্যথা হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে যদি নিরাময় না হয় তাহলে অবশ্যই একজন রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যায়, হাইপারমোবিলিটি শনাক্ত হতে অনেক দেরি হয়। প্রথমেই রোগটি শনাক্ত হলে ভুল চিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

চিকিৎসা
গিঁটে ব্যথা নিয়ে যখন কোনো রোগী রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে বা অন্য কোনো চিকিৎসকের কাছে যান, তখন এই ব্যথার অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটি শনাক্ত করা প্রয়োজন। ব্যথার অপরাপর কারণগুলো জানার জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করতে পারেন।

রিউম্যাটোলজিস্টরা হাইপারমোবিলিটি নির্ণয়ের জন্য বেইটন স্কোর নামক একটি মানদণ্ড ব্যবহার করেন। বেইটন স্কোর শূন্য থেকে ৯ পর্যন্ত হয়। হাইপারমোবিলিটির কারণে জয়েন্ট বা গিঁটে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া একটু বেশি হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে বেইটন স্কোর ৯ পয়েন্টের মধ্যে কেউ যদি ৪ বা তার বেশি পান তাহলে বলা যাবে যে তার হাইপারমোবিলিটি আছে।

প্রথমত এর চিকিৎসা হিসেবে রোগী, রোগীর বাবা-মা, অভিভাবক কিংবা কেয়ার গিভারদের কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, হাইপারমোবিলিটি গুরুতর কোনো রোগ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জীবনের ওপর কোনো আঘাত আসবে না। তাই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। খুব বড় ধরনের চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।

অনেক ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল থেরাপির প্রয়োজন হয়। যেমন- গিঁটগুলোর নড়াচড়া স্বাভাবিক করার জন্য কিছু ব্যায়াম শেখানোর প্রয়োজন হয়। এর বাইরে উপসর্গভিত্তিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওষুধ হিসেবে কিছু ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। যেসব রোগীর উদ্বেগ, হতাশা, আইবিএস বা অন্যান্য উপসর্গ আছে, তাদের সেই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে।

অনুলিখন: হৃদয় জাহান

 কলি

পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

পা হলো হাঁটাচলা করা এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাঁটা এবং দাঁড়িয়ে থাকার সময় শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পায়ের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান পেডিয়াট্রিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণাতে জানা গেছে, ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের এক জোড়া পা গড়ে ৭৫ হাজার মাইল অতিক্রম করে। ফলে পায়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ক্ষতি হয়, আঘাত পায় এবং শারীরিক চাপ সহ্য করে, যেগুলো পায়ের ব্যথার মূল কারণ। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

নারীদের চেয়ে পুরুষদের পা ব্যথা বেশি হয়। পায়ের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় গোড়ালি এবং মেটাটারসালস (গোড়ালি এবং পায়ের আঙুলের মাঝের হাড়)। কারণ এরাই শরীরের ওজন সবচেয়ে বেশি বহনকারী পায়ের অংশ। ঘরোয়া চিকিৎসা করতে চাইলে বরফের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া সঠিক মাপের জুতা, যা ধাক্কা সামলাতে পারে। চাইলে গোড়ালির নিচে প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। করতে পারেন স্ট্রেচিং ব্যায়াম। এগুলো পায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন রকম পায়ের ব্যথা
একজন ব্যক্তির পায়ের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে। যেমন-
গোড়ালি ব্যথা: গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সরু এবং লম্বা লিগামেন্টটির প্রদাহকে প্ল্যানটার ফ্যাসাইটিস বলা হয়। গোড়ালির বৃদ্ধি (ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে হাড় বড় হয়ে যাওয়া) হলে অথবা লিগামেন্টগুলোয় অতিরিক্ত চাপ পড়লে লিগামেন্টগুলোয় টান পড়ে এবং আঘাত লাগে, ফলে গোড়ালি ব্যথা হয়।

গোড়ালি বা পায়ের পাতার মাঝখানে ব্যথা: অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর (ঘুম থেকে ওঠার পর) বা বসে থাকার পর উঠে দাঁড়িয়ে প্রথম কয়েকটি পদক্ষেপের ফেলার সময় গোড়ালিতে অসহ্য ব্যথা লাগে। কয়েক পা চলার পর ব্যথা কমতে থাকে। ব্যায়াম করার পর বা অনেক্ষণ হাঁটার পর বা ওই রকমের কোনো কাজের পর ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথার সঙ্গে শিরশিরানি বা অসাড়তাও বোধ হতে পারে।

আচিলিস টেনডিনাইটাস: যে টেনডনটি গোড়ালি আর পায়ের মধ্যে সংযোগ রাখে, তার প্রদাহকে আচিলেস টেনডিনাইটিস বলা হয়। পায়ের পেশির শেষ প্রান্ত উপরের দিকে উঠে গিয়ে আচিলেস টেনডন তৈরি হয়। হাঁটা, লাফানো এবং দৌড়ানোর সময়ে পা নিচের দিকে নামাতে আচিলেস টেনডন সাহায্য করে। অত্যধিক হাঁটা বা দৌড়ানো, পায়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, শক্ত জমির উপরে দৌড়ানো, লাফানো এবং এই রকমের অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে টেনডনের প্রদাহ হয়। ফ্ল্যাট ফিট, জুতার নাল এবং আর্থ্রাইটাস আচিলেস টেনডনের প্রদাহ হয়।

মধ্য পাতায় ব্যথা: পায়ের পাতার মধ্যবর্তী স্থানের ব্যথাকে মেটাটারসালজিয়া বলা হয়। সঠিক জুতা না পরা, আর্থ্রাইটাস এবং অত্যধিক খেলাধুলার কারণে গোড়ালি আর আঙুলের মধ্যবর্তী জায়গার হাড়ে ব্যথা হয়। স্থূলতা, চ্যাপটা পায়ের পাতা, ধনুকাকৃতির পায়ের পাতা, আর্থ্রাইটাস, বাত, বুনিয়নস (পায়ের বুড়ো আঙুলের প্রথম গাঁটে বেদনাদায়ক ফোলা), হ্যামারটো (পায়ের পাতা স্থায়ীভাবে নিচের দিকে বেঁকে থাকা), মর্টনের নিউরোমা (ক্যানসার নয় এমন একটি ফোলা যা নার্ভকে চাপ দেয়), ফেটে যাওয়া এবং বয়স্কদের ডায়াবেটিস থেকে মেটাটারসালজিয়া হয়।

পাতার সামনের দিকে ব্যথা: কতগুলো সাধারণ সমস্যা যেমন- বাড়তে থাকা পায়ের নখ, ভেরুসে বা আব, নখে ও ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ, (অ্যাথলেটস ফুট), কড়া পড়া এবং ক্যালোসাইটস (মোটা ও শক্ত চামড়া), বুনিয়নস, হ্যামার টো, ক্ল ফুট এবং বাত পায়ের পাতের সামনের অংশকে প্রভাবিত করে। সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হল, প্রভাবিত জায়গা ফুলে যাওয়া, খসখসে হয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে ধক ধক করা ব্যথা হয়। ব্যথাটা তখন হয় যখন পায়ের নখ ভেতর দিকে বাড়তে থাকে এবং বাত থাকে। বাত হচ্ছে হাড়ের প্রদাহ, বিশেষত পায়ের বুড়ো আঙুলের।
পায়ের পাতার বিকৃতি থেকেও ব্যথা হতে পারে যেমন-
হ্যামার টো: পায়ের পাতা হাতুড়ির মতো দেখতে হয়।

ক্ল ফুট: পায়ের বিকৃতির জন্য পায়ের পাতাকে থাবার মতো দেখতে মনে হয়।

বুনিয়ন: হাড়ে একটি শক্ত পিণ্ড হওয়ার কারণে পায়ের বুড়ো আঙুল ডান দিকের আঙুলের দিকে বেঁকে যায়।

স্নায়ু জড়িয়ে যাওয়া: পায়ের পাতার পেশির সংকোচন হওয়াতে স্নায়ুগুলো জড়িয়ে যায়। ফলে পাতার সামনের দিকে জ্বালা ও ব্যথা হয়। যখন স্নায়ুগুলো জড়িত থাকে তখন পায়ে শিরশির করা এবং অসাড়তা বোধ হয়।

ছত্রাকের সংক্রমণ: ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ব্যথার সঙ্গে ফোড়া হয় এবং ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। নখগুলো ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং তাদের রং সাধারণত বদলে যায়।

পায়ের সাধারণ ব্যথা
ইডিমা, হাড়ের ফাটল এবং পাদস্ফোট (দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপমাত্রাতে থাকার কারণে ফোলা) পায়ের ব্যথার কারণ। ভেরুসে বা আব, কড়া এবং কলুষতার জন্য পায়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়। পাদস্ফোট হলে পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। চামড়া ফুলে যায় এবং রং বদলে গাঢ় লাল বা নীল হয়ে যায়।
পায়ের ফাটল এবং প্রদাহ যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটাস, বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটাস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটাস এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলে অসহ্য ব্যথা হতে থাকে। ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে পা ফুলে যায়, ফলে পা নাড়াচাড়া করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

পায়ের পাতার ব্যথার চিকিৎসা
বিভিন্ন প্রকার ওষুধ এবং শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পায়ের ব্যথার নিরাময় করা যায়। প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথা কমানোর ওষুধগুলো অল্প ব্যথায় আরাম দেয়। প্রদাহ কমানোর ওষুধগুলো প্রদাহ হ্রাস করে ব্যথা কমায়। যখন অন্য কিছু আর কাজ না করে তখন কর্টিকোস্টেরইড ওষুধ সেবন করলে এবং ব্যথার জায়গায় ইনজেকশান দিলে পা ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ দিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়।

এদিকে পায়ের বিকৃতি ঠিক করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির অস্ত্রোপচার করা হয়। ফলে যে স্নায়ুগুলো অবরুদ্ধ অবস্থাতে শিরশির করা এবং অসাড়তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার কারণ থাকে, সেগুলো মুক্তি পায়। পায়ের ব্যথাও ঠিক হয়ে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াতে চাপ সৃষ্টিকারী শক্ত হয়ে যাওয়া পা, যেগুলো স্ট্রেচিং ব্যায়ামে সাড়া দেয় না, সেই পেশিগুলো গ্যাসট্রোনেমাস রিসেশান পদ্ধতিতে টানটান করা হয়। তাতে ব্যথা কমে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াকে ছাড়াতে একটা ছোট অপারেশন করা হয়, যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া প্ল্যানটার ফাসিয়ার টেনশন কমে ব্যথা নিরাময় হয়।

কলি