ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

পুরুষের রোগ গাইনেকোমাস্টিয়া

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম
আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম
পুরুষের রোগ গাইনেকোমাস্টিয়া

গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ গাইনেক ও মাস্টস থেকে। এখানে গাইনেক অর্থ হলো মেয়েদের মতো আর মাস্টস অর্থ হলো স্তন। অর্থাৎ মেয়েদের মতো স্তন। গাইনেকোমাস্টিয়া প্রকৃত পক্ষে পুরুষদের স্তন গ্রন্থি টিস্যু বৃদ্ধির সঙ্গে স্তন বৃদ্ধির একটি অবস্থা। রোগটি সব বয়সের পুরুষের মধ্যে দেখা যায়, তবে নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে এবং বৃদ্ধ বয়সে বেশি দেখা যায়। টেস্টোস্টেরন (পুরুষ যৌন হরমোন) এবং ইস্ট্রোজেন (মহিলা যৌন হরমোন) হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হয়। জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ

গাইনেকোমাস্টিয়া কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে-

১। সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া  
শৈশবে এই সিডো- গাইনেকোমাস্টিয়ার সূত্রপাত ঘটে, স্তনে অতিরিক্ত চর্বি ডিপোজিশনের কারণে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়ামকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সার্জারির প্রয়োজন হয় না।

২। জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়া
বয়ঃসন্ধিকালের ট্রানজিশনাল সময়ে জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়ার উদ্ভব ঘটে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা সার্জারির মাধ্যমেই করতে হয়। অনেক সময় ছোট হলে সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়।

৩। ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়া
বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে বা খাদ্যশস্য, দুধ বা মাছ-মাংসে পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হরমোনের প্রভাবে এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যার একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি। যে ওষুধের কারণে এটি হয়েছে সে ওষুধ বন্ধ করে দিলে আর বৃদ্ধি পায় না। তবে যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি সার্জারির মাধ্যমেই চিকিৎসা করতে হয়।
গবেষণা বলছে আরও কিছু ওষুধের ব্যবহার ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত
অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ: এই ওষুধগুলো বর্ধিত প্রোস্টেট, প্রোস্টেট ক্যানসার এবং অন্য ব্যাধিগুলোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ হলো স্পিরোনোল্যাক্টোন, ফিনাস্টেরাইড এবং ফ্লুটামিড।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড এবং অ্যান্ড্রোজেন: এই ওষুধগুলো বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, পেশি ক্ষয় এবং অন্য রোগের কারণে হরমোনের ঘাটতির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এইডসের জন্য ওষুধ: এইচআইভি রোগীদের জন্য কিছু ওষুধ, যেমন এফাভিরেঞ্জ, ইস্ট্রোজেনের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ: ডায়াজেপামের মতো ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) ওষুধ: অ্যাডেরালের মতো ওষুধ যাতে অ্যামফেটামাইন থাকে সেগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্টস স্তনকে বড় করে তুলতে পারে।
কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।

৪। সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া
শারীরিক নানা জটিল অসুখের প্রভাবেও গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যাকে বলা হয় ‘সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া’। এ ধরনের রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Cushing’s Syndrome এবং Cirrhosis Liver।
স্তনের সাইজ ও ধরন অনুযায়ী ৪টি গ্রেডে গাইনেকোমাস্টিয়াকে ভাগ করা হয়।
গ্রেড ১ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া স্তনের সামান্য বৃদ্ধি
গ্রেড ২ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া মাঝারি মাপের বৃদ্ধি
গ্রেড ৩ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত মাঝারি বৃদ্ধি
গ্রেড ৪ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত ভালো বৃদ্ধি

গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকির কারণগুলো কী কী? 
কিছু কারণ গাইনেকোমাস্টিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই কারণগুলো হলো বার্ধক্য, অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করা, লিভারের ব্যাধি, কিডনি ফেইলিওর, থাইরয়েড রোগ, টিউমার, ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের মতো স্বাস্থ্যের অবস্থা। এ ছাড়া অ্যান্টি-এন্ড্রোজেন, অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টি-আলসার ওষুধ, এডিএইচডির ওষুধ, এইডসের ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অবৈধ ওষুধের ব্যবহার, ল্যাভেন্ডার তেলের মতো ভেষজ পণ্যের ব্যবহার এবং অ্যালকোহল এবং বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহারও গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এসব ওষুধের মধ্যে আছে মারিজুয়ানা, মদ, অ্যামফিটামাইনস, হেরোইন, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড (পেশি নির্মাণ এবং অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত) ও মেথাডোন।

গাইনেকোমাস্টিয়ার লক্ষণ
গাইনেকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত অনেক পুরুষের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাইহোক, তাদের মধ্যে কিছু নিম্নলিখিত উপসর্গ আছে যেমন- ব্যথা, স্তনের টিস্যু ফোলা, স্তনের কোমলতা, স্তনের সংবেদনশীলতা এবং স্তনবৃন্ত স্রাব।

কীভাবে গাইনেকোমাস্টিয়া নির্ণয় করবেন
শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার প্রথমে রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন। রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাসসহ রোগীর লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা: রক্তে হরমোনের মাত্রা এবং অন্তর্নিহিত সংক্রমণের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা কার্যকর।
স্তন আল্ট্রাসাউন্ড: শব্দ তরঙ্গ স্তন বৃদ্ধির স্পষ্ট ছবি পেতে ব্যবহার করা হয়।
ম্যামোগ্রাম: এটি স্তনের টিস্যুর কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।
কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান: এগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন স্তন টিস্যুর স্পষ্ট ছবি পেতে ইমেজিং পরীক্ষা করা হয়।
টেস্টিকুলার আল্ট্রাসাউন্ড: টেস্টিসের আশপাশের এলাকার স্পষ্ট ছবি তৈরি করতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
টিস্যু বায়োপসি: সন্দেহভাজন টিস্যু বৃদ্ধির একটি ছোট নমুনা এক্সাইজ করা হয় এবং কোনো ক্যানসার কোষের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এই পরীক্ষা সাধারণত স্তন ক্যানসার বাতিল করার জন্য করা হয়।

গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা কী?
সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া ব্যতীত অন্যান্য গাইনেকোমাস্টিয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার্জারি একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও এটি শারীরিক অসুবিধার থেকে সামাজিক বিড়ম্বনাটাই বেশি। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি করলে সাধারণত দাগ থাকে না।

গাইনেকোমাস্টিয়া কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
গাইনেকোমাস্টিয়া প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে আছে বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এড়িয়ে চলা, অ্যালকোহল সেবন না করা, ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত স্টেরয়েড ব্যবহার এড়িয়ে চলা, বডি বিল্ডিং পরিপূরক এবং ওষুধ এড়ানো, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম খাদ্য খাওয়া এবং ব্যায়াম নিয়মিত করা।

কলি

ঘুম ও ক্যানসার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
ঘুম ও ক্যানসার

টিউমারের কোষগুলো যখন রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে শরীরের নতুন কোনো জায়গায় বাসা বাঁধতে শুরু করে, তখন ক্যানসারের অবস্থা হয় সবচেয়ে গুরুতর। ক্যানসার ছড়ানোর এই প্রক্রিয়াটি মেটাস্ট্যাসিস নামে পরিচিত। লিখেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের দেহে সিটিসি বা সার্কুলেটিং টিউমার সেলস নামের এই খারাপ কোষগুলোর দিনের তুলনায় রাতে রক্তে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। সম্প্রতি ন্যাচার জার্নালে ‘দ্য মেটাস্ট্যাটিক স্প্রেড অব ব্রেস্ট ক্যানসার এক্সিলারেটস ডিউরিং স্লিপ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য প্রকাশিত হয়।

ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ঘুমিয়ে পড়লেই তার টিউমারগুলো জেগে ওঠে- বলেন জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ক্যানসার বায়োলজিস্ট ও গবেষণাপত্রের সহলেখক নিকোলা অ্যাসিটো।

তিনি আরও বলেন, মেটাস্ট্যাটিসকে বোঝার ক্ষেত্রে আমরা আরেকটি ধাপ অতিক্রম করলাম। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য এটি একটি সুখবর।

দেহঘড়ির সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র
২০০৭ সালে সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হওয়াকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার ক্যানসারের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করে। গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, যারা রাত জেগে বা অসময়ে কাজ করে যেমন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্টস, রাতে কাজ করা নার্স ইত্যাদি পেশার মানুষদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে কেন এমন ঘটে সেই প্রশ্ন এতদিন জানা যায়নি। 

মানুষের সারকাডিয়ান ঘড়ি সাধারণত তাদের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা ২৪ ঘণ্টার সময়সূচিতে ঘুম ও পরিপাকব্যবস্থার মতো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। অধিকাংশ গবেষকই আগে ভাবতেন, ক্যানসার কোষগুলো এতটাই অবাধ্য যে তারা দেহঘড়ির মতো সময়সূচির কোনো তোয়াক্কাই করে, বলেন অ্যাসিটো।

যেসব ইঁদুরের টিউমার আছে, তাদের সিটিসির মাত্রা দিনের কোন সময় রক্ত নেওয়া হয় তার ওপর নির্ভর করে। সেখান থেকেই অ্যাসিটো দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রক্ত পরীক্ষার পরিকল্পনা করেন। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন নারীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ভোর ৪টা এবং রাত ১০টা- এই দুটি ভিন্ন সময়ে তিনি রক্ত সংগ্রহ করেন।

গবেষকরা দেখেন, ভোর ৪টায় সংগৃহীত নমুনায় শনাক্তকৃত সিটিসির হার প্রায় ৮০ শতাংশ। সে সময় রোগীরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।গবেষকরা দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা হলো, এই গুটিকয়েক আক্রান্তদের বাইরে অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে কি-না তা খুঁজে বের করা। এর জন্য গবেষকরা স্তন ক্যানসারের টিউমার ইঁদুরে প্রতিস্থাপিত করে সারাদিন তাদের সিটিসির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন।

মানুষের তুলনায় ইঁদুরের সারকাডিয়ান রিদম সম্পূর্ণ ভিন্ন, অর্থাৎ তারা রাতে বেশি সক্রিয় থাকে এবং দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয়। গবেষক দল দেখেন, ইঁদুরগুলোর সিটিসি স্তর দিনের বেলায় সর্বোচ্চ ছিল। এ সময় তাদের সিটিসির হার স্বাভাবিকের তুলনায় ৮৮ গুণ পর্যন্ত বেশি দেখা যায়।

ঘুম আসল শত্রু নয়
গবেষক দলটি দেখেন, টেস্টোস্টেরন বা ইনসুলিনের মতো হরমোনের ব্যবহার ইঁদুরের সিটিসি স্তরের ওপর প্রভাব ফেলে। কখন কোনো সময় হরমোনগুলো বাড়ানো বা কমানো হয়েছিল, তারও প্রভাব পড়েছিল সিটিসি স্তরে।

তবে এর মধ্যে কেউ যেন ঘুমকেই স্তন ক্যানসার রোগীদের শত্রু ভেবে না বসেন, সেই বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসার রোগীরা দিনে সাত ঘণ্টার কম ঘুমালে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সারকাডিয়ান রিদম ব্যাহত হলে ক্যানসার দ্রুত ছড়াচ্ছে।

অনুলিখন: নিশু ইসলাম

 কলি

পায়ের আঙুলের রোগ বুনিয়ন

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
পায়ের আঙুলের রোগ বুনিয়ন

বুনিয়ন হলো পায়ের বুড়ো আঙুলের গোড়ায় মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা। পায়ের বুড়ো আঙুল বেশি করে দ্বিতীয় আঙুলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ফলে মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা অংশটি হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বুনিয়ন কোনো অস্বস্তি সৃষ্টি করে না, আবার অন্যদের জন্য প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক হয়। হেলথ লাইন ওয়েবসাইট অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

বুনিয়ন লক্ষ করা খুবই সহজ। এগুলো সহজেই দেখা যায়। এ সময় বুড়ো আঙুলের গাঁটে প্রদাহ এবং লালচে ভাব থাকে। একনাগাড়ে অথবা থেকে থেকে ব্যথা হয়। বুড়ো আঙুলের বাইরের দিকে ফোলা থাকে। যাদের পায়ের বুড়ো আঙুলে বুনিয়ন রয়েছে, সাধারণত তাদের পায়ের কড়ে আঙুলের গোড়াতেও একই রকম ফোলা অংশ দেখা যায়।

কারণগুলো কী কী?
বুনিয়ন হওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে পায়ের পাতায় আঘাত। এ ছাড়া বংশগত অঙ্গবিকৃতি। জন্মের সময় অন্যান্য অঙ্গবিকৃতি। খুব আঁটসাঁট জুতা পরা বা উঁচু হিল (যদিও এটা নিয়ে তর্কবিতর্ক আছে)। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটাস থেকেও এটা হতে পারে।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
বুনিয়ন নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের আপনার পায়ের পাতার পরীক্ষাই যথেষ্ট। তবে চিকিৎসক বুনিয়নের ক্ষতির পরিমাণ এবং কারণ মূল্যায়নের জন্য কখনো কখনো পায়ের পাতার এক্স-রে করাতে পারেন।

বুনিয়নের চিকিৎসা প্রথাগত পদ্ধতি থেকে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত হতে পারে। আর তা অবস্থার প্রবলতা এবং ব্যথা উপলব্ধির ধরনের ওপর নির্ভর করে। এর নানা রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- পরার জন্য বেশি আরামদায়ক জুতা বেছে নেওয়া। ব্যথা থেকে আরাম পেতে সাপোর্ট প্যাড, টেপ অথবা স্প্লিন্ট ব্যবহার করা। আক্রান্ত অংশে চাপ কমাতে জুতায় ইনসার্ট ব্যবহার করা। ফোলা ও লালচে ভাবের উপশমে প্রভাবিত অংশে বরফ ঘষা।
অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন হাড়ের একটা অংশ সরানোর পর বুড়ো আঙুলের গাঁট সোজা করতে এবং আগের মতো করতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। বুড়ো আঙুলের গাঁটের চারপাশে ফোলা টিসু সরাতে এবং আক্রান্ত গাঁটের হাড়গুলো মেলানোর জন্যও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

বুনিয়ন সারানোর ঘরোয়া উপায়
১. নিয়মিত পায়ের ম্যাসাজ করুন। এতে পেশি শিথিল ও আরও শক্তিশালী হয়। এমনকি পায়ের আকৃতিও সঠিক থাকে। পায়ের ম্যাসাজের জন্য একটি টেনিস বল পায়ের নিচে রেখে রোল করুন। নিয়মিত এই অনুশীলন করুন।

২. পায়ের বুনিয়ন সারাতে একটি রাবার ব্যান্ড পায়ে বেঁধে নিন। এরপর আঙুলের শক্তি দিয়ে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করুন। অন্তত ১০ মিনিট এই অনুশীলন করুন দৈনিক।

৩. মেঝের ওপর কয়েকটি পাথর বা মার্বেল রেখে তা বুড়ো আঙুল ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝে নিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। বুনিয়ন সারাতে এটিও বেশ কার্যকর এক অনুশীলন।

 কলি

দাঁতের ব্যথা ভালো হয়

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
দাঁতের ব্যথা ভালো হয়

সারা বিশ্বে দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ পরিস্থিতি। দাঁতব্যথা একটি অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা। কোনো একটি উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে এসে ব্যথা শুরু হয়। তারপর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বেশি বা কম অস্বস্তিকর, দুর্দশা এবং যন্ত্রণার একটি সংবেদন। মাই উপচার অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম

দাঁতের ব্যথার কারণ হলো দাঁতের রোগ, দাঁতে গর্ত অথবা দাঁতে আঘাত লাগা। দাঁতের চিকিৎসার দুটি পর্যায় আছে- প্রথমটি হলো কারণ নির্ণয় এবং দ্বিতীয়টি হলো এর চিকিৎসা। সঠিকভাবে দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এবং চিকিৎসা ও ওষুধ পেলে দাঁতের ব্যথা সাধারণত ২-৩ দিনে সেরে যায়।

দাঁতের ব্যথা হওয়ার কারণ
দাঁতের ব্যথার অনেকগুলো কারণ আছে। যেমন- গর্ত হওয়ার জন্য ব্যথা হতে পারে। আঘাত, দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে গেলে, দাঁতের গ্রাইন্ডিং, দাঁতের এবসেস, দাঁতের সংবেদনশীলতা, দাঁত ফেটে যাওয়া, ফিলিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মাড়ির রোগ থেকেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে। তবে নিজে নিজে রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দাঁতের ব্যথার আসল কারণ জেনে নিন।

দাঁতের ব্যথার প্রকারভেদ
পুলপাল দাঁতের ব্যথা: পুলপাল টিস্যু যখন লালা বা বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখন এই ব্যথা হয়। এর কারণ হলো গভীর ক্যারিজ, ক্ষয়, ফেটে যাওয়া বা দাঁত ভাগ হয়ে যাওয়া। পুলপাল দাঁতের ব্যথার তীব্রতা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে। যেমন- মিষ্টি, গরম বা ঠাণ্ডার প্রতি অতি-সংবেদনশীলতা থাকলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথা: দাঁতের আশপাশে আঘাত লাগা দাঁতের ব্যথার মূল কারণ। এতে ট্রমা হতে পারে, অক্লুসাল চাপ হতে পারে, পাশের দাঁতের সঙ্গে ঘর্ষণ হতে পারে। অন্যান্য কারণ হলো দাঁতের চিকিৎসা যেমন দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁতের ইন্টারফিয়ারেন্স, উঁচু ফিলিং বা গভীর ফিলিং, দাঁতের স্পর্শের এলাকার ভেতরে ফাঁকা ইত্যাদি। দাঁতের আশপাশ এলাকার সংক্রমণ কিংবা পাশের দাঁতের সরাসরি ফুলে যাওয়া, সাইনাসের গর্ত এবং ছড়িয়ে পড়া হাড়ের সংক্রমণ। যখন দেখা যায় যে, পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথায় বেশ কয়েকটি দাঁত প্রভাবিত হয়েছে, তখন ব্রাসিজম বা নাইট বাইটিং বা ক্লেঞ্চিংকে কারণ বলে মনে করা হয়। হাড়ের বিকৃতির জন্য পেছনের দাঁতে অত্যধিক চাপ পড়ে এবং টি-এম-জে’তে ক্ষয়ের কারণে পরিবর্তন আসতে পারে। টি-এম-জে হলো টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টস, যা নিচের চোয়ালকে মুখের বাকি অংশের সঙ্গে জুড়ে 
রাখে। টি-এম-জে’তে আঘাত লাগলেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে।

ফাটা দাঁত: ফাটল দাঁতের সব ক’টি স্তর ভেদ করতে পারে। স্তরগুলো হলো এনামেল, ডেন্টিন বা পাল্প। উপসর্গগুলোও সেই অনুসারে ভিন্ন হতে পারে। ডেন্টিনের ভেতরে রয়েছে ডেন্টিনাল ট্যুবুল, আর তার ভেতরে যে তরল পদার্থ আছে, তার চলাচলের ফলে দাঁত ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা যখন দাঁত দিয়ে খাবার চিবাই, তখন চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তরলের চলাচল শুরু হয়।

দাঁতের ব্যথা এর প্রতিরোধ
ডেন্টাল ক্যারিজ, পুলপাল, পেরিয়োডন্টাল রোগ ইত্যাদি হ্রাস করতে পারলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। নিচের উপদেশগুলো পালন করলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

দৈনন্দিন খাদ্যে চিনির পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখুন। হাল্কা এবং ভারী ভোজনের মধ্যে সময়সীমা হ্রাস করুন। দিনে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন। ক্লোরহেক্সিডিনের মতো ব্যাকটেরিয়া নাশক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন। ফ্লোরাইড-যুক্ত টুথপেস্ট এবং জেল ব্যবহার করুন। খাবার গিলবার আগে ভালো করে চিবিয়ে নিন। চিনিবিহীন চিউইংগাম ব্যবহার করুন। দাঁতের পৃষ্ঠতল মসৃণ করুন। সমস্ত ক্যাভিটি ফিল করুন।

দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা
দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যা নির্ণয়ের ওপরে। দাঁত ব্যথার কারণ জানার পর ডেন্টিস্ট এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেন- 

পুঁজ বের করা: ডেন্টিস্ট পুঁজ এবং রস বের করে দেবেন।

সরাসরি পাল্পের ক্যাপিং: আরাম দেওয়ার জন্য সাধারণত ক্যালসিয়ামের একটি দ্রবণ লাগানো হয়, যাতে পাল্পের পুনরুদ্ধার হয়। সাধারণত আয়োডোফর্ম ক্যালসিয়াম পেস্ট এই কাজের জন্য ব্যবহার করে হয়।

রুট ক্যানাল চিকিৎসা: এটি খুবই সাধারণ এবং পরিচিত একটি পদ্ধতি। রুট ক্যানাল চিকিৎসা অথবা আরসিটি পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সংক্রমিত পাল্পকে বের করে নেওয়া হয় এবং গাট্টা-পারচার শঙ্কু পাল্পের গর্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। গর্তটি ভর্তি হয়ে গেলে এর ওপরে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটিই দাঁত বাঁচিয়ে রাখার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এবং ডেন্টিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

দাঁত নিষ্কাশন: দাঁত তুলে ফেলা হলো সবচেয়ে কম পছন্দের চিকিৎসা। ডেন্টিস্টদের মতে, দাঁত বাঁচানোর সব চিকিৎসা বিফল হলে তবেই দাঁত তুলে ফেলার কথা ভাববেন। মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গেরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে। অতএব, মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

 কলি 

হাইপারমোবিলিটি এক ধরনের বাত রোগ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
হাইপারমোবিলিটি এক ধরনের বাত রোগ

হাইপারমোবিলিটি একটি স্বল্প পরিচিত শব্দ, যা একটি রিউম্যাটিক উপসর্গ। আমাদের শরীরে অনেক জয়েন্ট বা গিঁট আছে। হাত-পা, মুখমণ্ডল এমনকি মেরুদণ্ড নড়াচড়ার সময় এক ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়, এই সমস্যাকেই হাইপারমোবিলিটি বলে। লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহিম চৌধুরী

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সর্বশেষ রিউম্যাটোলজি বা বাত রোগের যে শ্রেণিবিন্যাস করেছে, সে অনুযায়ী ৬৯৩ রকম রোগ আছে এই বিভাগের অধীনে। তার মধ্যে একটি অবস্থা হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি। সুতরাং এটি এক ধরনের বাত রোগ। প্রায় ১০ থেকে ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে হাইপারমোবিলিটি থাকতে পারে। এর কারণে জয়েন্টে ব্যথা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশু ও কিশোর বয়সে সমস্যা শুরু হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর প্রকোপ কমতে থাকে।

শিশুদের জয়েন্ট ব্যথাকে অনেক অভিভাবক বাত জ্বর বা রিউমেটিক ফিভার হয়েছে ভেবে চিন্তিত হন এবং চিকিৎসকদের কাছে আসেন। হাইপারমোবিলিটি নিয়ে তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ সারা বিশ্বে এই রোগ নির্ণয় হতে দেরি হয়।

কেন হয়?
হাইপারমোবিলিটি কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। কারও জয়েন্ট বা গিঁটগুলোয় ব্যথা কেন হয়, নড়াচড়া বেশি কেন হয়, লুজ বা ঢিলেঢালা কেন হয়ে যায় তাও সঠিকভাবে জানা যায়নি এখনো। মানবদেহে হাড়, হাড়ের সঙ্গে তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল যা গিঁট বা জয়েন্টগুলোকে শক্তিশালী করে। এগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রোটিন থাকে, যাকে কোলাজেন বলে। হাড়ের বড় অংশে কোলাজেন থাকে। ধারণা করা হয়, কোলাজেনের ত্রুটির কারণে হাইপারমোবিলিটি হতে পারে এবং জিনগত ত্রুটি এ জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হয়। যদিও ঠিক কোন জায়গায় এই ত্রুটি হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।

যত বয়স বাড়তে থাকে হাইপারমোবিলিটি তত কমতে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ইউরোপ, আমেরিকার তুলনায় এশিয়ান এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় হাইপারমোবিলিটির প্রকোপ বেশি।

লক্ষণ
হাইপারমোবিলিটির অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে জয়েন্টে বা গিঁটে ব্যথা। এর বাইরে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন- কারও কারও মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, হঠাৎ করে চোখে অন্ধকার দেখা ইত্যাদি হতে পারে।

কারও পেটের সমস্যা যেমন- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস দেখা দেয়। কারও কারও ত্বক ঢিলে হয়ে যায়। কোনো কোনো রোগীর মলদ্বার নিচের দিকে নেমে যায় এবং নারীদের ক্ষেত্রে মলদ্বারের পাশাপাশি জরায়ু নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। তবে এই উপসর্গগুলো অনেক কম দেখা যায়।

রোগটি দ্রুত শনাক্ত করুন  
মূলত হাইপারমোবিলিটির জন্য যে ব্যথাগুলো হয় সেগুলো আর্থ্রালজিয়া বা বাত ব্যথা। অনেকেই মনে করেন, বাত ব্যথা বয়সকালের রোগ। এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। বেশির ভাগ বাত ব্যথা কম বয়সেই হয়, আর এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে হাইপারমোবিলিটি।
যখন কোনো রোগীর জয়েন্টে বা গিঁটে অথবা মাংসপেশিতে ব্যথা হবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে যদি নিরাময় না হয় তাহলে অবশ্যই একজন রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। প্রায়ই দেখা যায়, হাইপারমোবিলিটি শনাক্ত হতে অনেক দেরি হয়। প্রথমেই রোগটি শনাক্ত হলে ভুল চিকিৎসার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

চিকিৎসা
গিঁটে ব্যথা নিয়ে যখন কোনো রোগী রিউম্যাটোলজি বিশেষজ্ঞের কাছে বা অন্য কোনো চিকিৎসকের কাছে যান, তখন এই ব্যথার অন্য কোনো কারণ আছে কি না সেটি শনাক্ত করা প্রয়োজন। ব্যথার অপরাপর কারণগুলো জানার জন্য চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা করতে পারেন।

রিউম্যাটোলজিস্টরা হাইপারমোবিলিটি নির্ণয়ের জন্য বেইটন স্কোর নামক একটি মানদণ্ড ব্যবহার করেন। বেইটন স্কোর শূন্য থেকে ৯ পর্যন্ত হয়। হাইপারমোবিলিটির কারণে জয়েন্ট বা গিঁটে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া একটু বেশি হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে বেইটন স্কোর ৯ পয়েন্টের মধ্যে কেউ যদি ৪ বা তার বেশি পান তাহলে বলা যাবে যে তার হাইপারমোবিলিটি আছে।

প্রথমত এর চিকিৎসা হিসেবে রোগী, রোগীর বাবা-মা, অভিভাবক কিংবা কেয়ার গিভারদের কাউন্সিলিং করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, হাইপারমোবিলিটি গুরুতর কোনো রোগ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জীবনের ওপর কোনো আঘাত আসবে না। তাই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। খুব বড় ধরনের চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে না।

অনেক ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল থেরাপির প্রয়োজন হয়। যেমন- গিঁটগুলোর নড়াচড়া স্বাভাবিক করার জন্য কিছু ব্যায়াম শেখানোর প্রয়োজন হয়। এর বাইরে উপসর্গভিত্তিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওষুধ হিসেবে কিছু ব্যথানাশক দেওয়া যেতে পারে। যেসব রোগীর উদ্বেগ, হতাশা, আইবিএস বা অন্যান্য উপসর্গ আছে, তাদের সেই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে।

অনুলিখন: হৃদয় জাহান

 কলি

পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
পায়ে ব্যথা যা জানতে ও করতে হবে

পা হলো হাঁটাচলা করা এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। হাঁটা এবং দাঁড়িয়ে থাকার সময় শরীরের ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পায়ের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমেরিকান পেডিয়াট্রিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণাতে জানা গেছে, ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের এক জোড়া পা গড়ে ৭৫ হাজার মাইল অতিক্রম করে। ফলে পায়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়ক্ষতি হয়, আঘাত পায় এবং শারীরিক চাপ সহ্য করে, যেগুলো পায়ের ব্যথার মূল কারণ। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব

নারীদের চেয়ে পুরুষদের পা ব্যথা বেশি হয়। পায়ের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় গোড়ালি এবং মেটাটারসালস (গোড়ালি এবং পায়ের আঙুলের মাঝের হাড়)। কারণ এরাই শরীরের ওজন সবচেয়ে বেশি বহনকারী পায়ের অংশ। ঘরোয়া চিকিৎসা করতে চাইলে বরফের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া সঠিক মাপের জুতা, যা ধাক্কা সামলাতে পারে। চাইলে গোড়ালির নিচে প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। করতে পারেন স্ট্রেচিং ব্যায়াম। এগুলো পায়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

বিভিন্ন রকম পায়ের ব্যথা
একজন ব্যক্তির পায়ের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে। যেমন-
গোড়ালি ব্যথা: গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত সরু এবং লম্বা লিগামেন্টটির প্রদাহকে প্ল্যানটার ফ্যাসাইটিস বলা হয়। গোড়ালির বৃদ্ধি (ক্যালসিয়াম জমে গিয়ে হাড় বড় হয়ে যাওয়া) হলে অথবা লিগামেন্টগুলোয় অতিরিক্ত চাপ পড়লে লিগামেন্টগুলোয় টান পড়ে এবং আঘাত লাগে, ফলে গোড়ালি ব্যথা হয়।

গোড়ালি বা পায়ের পাতার মাঝখানে ব্যথা: অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর (ঘুম থেকে ওঠার পর) বা বসে থাকার পর উঠে দাঁড়িয়ে প্রথম কয়েকটি পদক্ষেপের ফেলার সময় গোড়ালিতে অসহ্য ব্যথা লাগে। কয়েক পা চলার পর ব্যথা কমতে থাকে। ব্যায়াম করার পর বা অনেক্ষণ হাঁটার পর বা ওই রকমের কোনো কাজের পর ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথার সঙ্গে শিরশিরানি বা অসাড়তাও বোধ হতে পারে।

আচিলিস টেনডিনাইটাস: যে টেনডনটি গোড়ালি আর পায়ের মধ্যে সংযোগ রাখে, তার প্রদাহকে আচিলেস টেনডিনাইটিস বলা হয়। পায়ের পেশির শেষ প্রান্ত উপরের দিকে উঠে গিয়ে আচিলেস টেনডন তৈরি হয়। হাঁটা, লাফানো এবং দৌড়ানোর সময়ে পা নিচের দিকে নামাতে আচিলেস টেনডন সাহায্য করে। অত্যধিক হাঁটা বা দৌড়ানো, পায়ের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, শক্ত জমির উপরে দৌড়ানো, লাফানো এবং এই রকমের অন্যান্য কার্যক্রমের ফলে টেনডনের প্রদাহ হয়। ফ্ল্যাট ফিট, জুতার নাল এবং আর্থ্রাইটাস আচিলেস টেনডনের প্রদাহ হয়।

মধ্য পাতায় ব্যথা: পায়ের পাতার মধ্যবর্তী স্থানের ব্যথাকে মেটাটারসালজিয়া বলা হয়। সঠিক জুতা না পরা, আর্থ্রাইটাস এবং অত্যধিক খেলাধুলার কারণে গোড়ালি আর আঙুলের মধ্যবর্তী জায়গার হাড়ে ব্যথা হয়। স্থূলতা, চ্যাপটা পায়ের পাতা, ধনুকাকৃতির পায়ের পাতা, আর্থ্রাইটাস, বাত, বুনিয়নস (পায়ের বুড়ো আঙুলের প্রথম গাঁটে বেদনাদায়ক ফোলা), হ্যামারটো (পায়ের পাতা স্থায়ীভাবে নিচের দিকে বেঁকে থাকা), মর্টনের নিউরোমা (ক্যানসার নয় এমন একটি ফোলা যা নার্ভকে চাপ দেয়), ফেটে যাওয়া এবং বয়স্কদের ডায়াবেটিস থেকে মেটাটারসালজিয়া হয়।

পাতার সামনের দিকে ব্যথা: কতগুলো সাধারণ সমস্যা যেমন- বাড়তে থাকা পায়ের নখ, ভেরুসে বা আব, নখে ও ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ, (অ্যাথলেটস ফুট), কড়া পড়া এবং ক্যালোসাইটস (মোটা ও শক্ত চামড়া), বুনিয়নস, হ্যামার টো, ক্ল ফুট এবং বাত পায়ের পাতের সামনের অংশকে প্রভাবিত করে। সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, সেগুলো হল, প্রভাবিত জায়গা ফুলে যাওয়া, খসখসে হয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে ধক ধক করা ব্যথা হয়। ব্যথাটা তখন হয় যখন পায়ের নখ ভেতর দিকে বাড়তে থাকে এবং বাত থাকে। বাত হচ্ছে হাড়ের প্রদাহ, বিশেষত পায়ের বুড়ো আঙুলের।
পায়ের পাতার বিকৃতি থেকেও ব্যথা হতে পারে যেমন-
হ্যামার টো: পায়ের পাতা হাতুড়ির মতো দেখতে হয়।

ক্ল ফুট: পায়ের বিকৃতির জন্য পায়ের পাতাকে থাবার মতো দেখতে মনে হয়।

বুনিয়ন: হাড়ে একটি শক্ত পিণ্ড হওয়ার কারণে পায়ের বুড়ো আঙুল ডান দিকের আঙুলের দিকে বেঁকে যায়।

স্নায়ু জড়িয়ে যাওয়া: পায়ের পাতার পেশির সংকোচন হওয়াতে স্নায়ুগুলো জড়িয়ে যায়। ফলে পাতার সামনের দিকে জ্বালা ও ব্যথা হয়। যখন স্নায়ুগুলো জড়িত থাকে তখন পায়ে শিরশির করা এবং অসাড়তা বোধ হয়।

ছত্রাকের সংক্রমণ: ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ব্যথার সঙ্গে ফোড়া হয় এবং ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। নখগুলো ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং তাদের রং সাধারণত বদলে যায়।

পায়ের সাধারণ ব্যথা
ইডিমা, হাড়ের ফাটল এবং পাদস্ফোট (দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপমাত্রাতে থাকার কারণে ফোলা) পায়ের ব্যথার কারণ। ভেরুসে বা আব, কড়া এবং কলুষতার জন্য পায়ে তীক্ষ্ণ ব্যথা হয়। পাদস্ফোট হলে পায়ে তীব্র ব্যথা হয়। চামড়া ফুলে যায় এবং রং বদলে গাঢ় লাল বা নীল হয়ে যায়।
পায়ের ফাটল এবং প্রদাহ যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটাস, বাত, অস্টিওআর্থ্রাইটাস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটাস এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলে অসহ্য ব্যথা হতে থাকে। ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে পা ফুলে যায়, ফলে পা নাড়াচাড়া করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

পায়ের পাতার ব্যথার চিকিৎসা
বিভিন্ন প্রকার ওষুধ এবং শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পায়ের ব্যথার নিরাময় করা যায়। প্যারাসিটামল জাতীয় ব্যথা কমানোর ওষুধগুলো অল্প ব্যথায় আরাম দেয়। প্রদাহ কমানোর ওষুধগুলো প্রদাহ হ্রাস করে ব্যথা কমায়। যখন অন্য কিছু আর কাজ না করে তখন কর্টিকোস্টেরইড ওষুধ সেবন করলে এবং ব্যথার জায়গায় ইনজেকশান দিলে পা ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ দিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়।

এদিকে পায়ের বিকৃতি ঠিক করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির অস্ত্রোপচার করা হয়। ফলে যে স্নায়ুগুলো অবরুদ্ধ অবস্থাতে শিরশির করা এবং অসাড়তার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার কারণ থাকে, সেগুলো মুক্তি পায়। পায়ের ব্যথাও ঠিক হয়ে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াতে চাপ সৃষ্টিকারী শক্ত হয়ে যাওয়া পা, যেগুলো স্ট্রেচিং ব্যায়ামে সাড়া দেয় না, সেই পেশিগুলো গ্যাসট্রোনেমাস রিসেশান পদ্ধতিতে টানটান করা হয়। তাতে ব্যথা কমে যায়। প্ল্যানটার ফাসিয়াকে ছাড়াতে একটা ছোট অপারেশন করা হয়, যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া প্ল্যানটার ফাসিয়ার টেনশন কমে ব্যথা নিরাময় হয়।

কলি