![পুরুষের রোগ গাইনেকোমাস্টিয়া](uploads/2024/05/16/nira-mioy-1715859395.jpg)
গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ গাইনেক ও মাস্টস থেকে। এখানে গাইনেক অর্থ হলো মেয়েদের মতো আর মাস্টস অর্থ হলো স্তন। অর্থাৎ মেয়েদের মতো স্তন। গাইনেকোমাস্টিয়া প্রকৃত পক্ষে পুরুষদের স্তন গ্রন্থি টিস্যু বৃদ্ধির সঙ্গে স্তন বৃদ্ধির একটি অবস্থা। রোগটি সব বয়সের পুরুষের মধ্যে দেখা যায়, তবে নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে এবং বৃদ্ধ বয়সে বেশি দেখা যায়। টেস্টোস্টেরন (পুরুষ যৌন হরমোন) এবং ইস্ট্রোজেন (মহিলা যৌন হরমোন) হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হয়। জানাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ
গাইনেকোমাস্টিয়া কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে-
১। সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া
শৈশবে এই সিডো- গাইনেকোমাস্টিয়ার সূত্রপাত ঘটে, স্তনে অতিরিক্ত চর্বি ডিপোজিশনের কারণে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক ব্যায়ামকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সার্জারির প্রয়োজন হয় না।
২। জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়া
বয়ঃসন্ধিকালের ট্রানজিশনাল সময়ে জুভেনাইল গাইনেকোমাস্টিয়ার উদ্ভব ঘটে। এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা সার্জারির মাধ্যমেই করতে হয়। অনেক সময় ছোট হলে সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়।
৩। ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়া
বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে বা খাদ্যশস্য, দুধ বা মাছ-মাংসে পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হরমোনের প্রভাবে এ ধরনের গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যার একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি। যে ওষুধের কারণে এটি হয়েছে সে ওষুধ বন্ধ করে দিলে আর বৃদ্ধি পায় না। তবে যতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে সেটি সার্জারির মাধ্যমেই চিকিৎসা করতে হয়।
গবেষণা বলছে আরও কিছু ওষুধের ব্যবহার ড্রাগ ইন্ডিউসড গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত
অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ: এই ওষুধগুলো বর্ধিত প্রোস্টেট, প্রোস্টেট ক্যানসার এবং অন্য ব্যাধিগুলোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ হলো স্পিরোনোল্যাক্টোন, ফিনাস্টেরাইড এবং ফ্লুটামিড।
অ্যানাবলিক স্টেরয়েড এবং অ্যান্ড্রোজেন: এই ওষুধগুলো বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি, পেশি ক্ষয় এবং অন্য রোগের কারণে হরমোনের ঘাটতির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
এইডসের জন্য ওষুধ: এইচআইভি রোগীদের জন্য কিছু ওষুধ, যেমন এফাভিরেঞ্জ, ইস্ট্রোজেনের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ: ডায়াজেপামের মতো ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) ওষুধ: অ্যাডেরালের মতো ওষুধ যাতে অ্যামফেটামাইন থাকে সেগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্টস স্তনকে বড় করে তুলতে পারে।
কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।কেমোথেরাপির ওষুধ: ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের ফলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে।
আলসারের ওষুধ: সিমেটিডিনের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
পেট খালি করার ওষুধ: মেটোক্লোপ্রামাইডের মতো ওষুধ স্তন বড় করতে পারে।
হার্টের ওষুধ: ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এবং ডিগক্সিনের মতো ওষুধগুলো গাইনেকোমাস্টিয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।
৪। সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া
শারীরিক নানা জটিল অসুখের প্রভাবেও গাইনেকোমাস্টিয়া হয়ে থাকে, যাকে বলা হয় ‘সিস্টেমিক ডিজিজ গাইনেকোমাস্টিয়া’। এ ধরনের রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Cushing’s Syndrome এবং Cirrhosis Liver।
স্তনের সাইজ ও ধরন অনুযায়ী ৪টি গ্রেডে গাইনেকোমাস্টিয়াকে ভাগ করা হয়।
গ্রেড ১ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া স্তনের সামান্য বৃদ্ধি
গ্রেড ২ - অতিরিক্ত ত্বক ছাড়া মাঝারি মাপের বৃদ্ধি
গ্রেড ৩ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত মাঝারি বৃদ্ধি
গ্রেড ৪ - অতিরিক্ত ত্বক সমেত ভালো বৃদ্ধি
গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকির কারণগুলো কী কী?
কিছু কারণ গাইনেকোমাস্টিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই কারণগুলো হলো বার্ধক্য, অ্যাথলেটিক পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করা, লিভারের ব্যাধি, কিডনি ফেইলিওর, থাইরয়েড রোগ, টিউমার, ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমের মতো স্বাস্থ্যের অবস্থা। এ ছাড়া অ্যান্টি-এন্ড্রোজেন, অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, অ্যান্টি-আলসার ওষুধ, এডিএইচডির ওষুধ, এইডসের ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অবৈধ ওষুধের ব্যবহার, ল্যাভেন্ডার তেলের মতো ভেষজ পণ্যের ব্যবহার এবং অ্যালকোহল এবং বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহারও গাইনেকোমাস্টিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এসব ওষুধের মধ্যে আছে মারিজুয়ানা, মদ, অ্যামফিটামাইনস, হেরোইন, অ্যানাবলিক স্টেরয়েড (পেশি নির্মাণ এবং অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত) ও মেথাডোন।
গাইনেকোমাস্টিয়ার লক্ষণ
গাইনেকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত অনেক পুরুষের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাইহোক, তাদের মধ্যে কিছু নিম্নলিখিত উপসর্গ আছে যেমন- ব্যথা, স্তনের টিস্যু ফোলা, স্তনের কোমলতা, স্তনের সংবেদনশীলতা এবং স্তনবৃন্ত স্রাব।
কীভাবে গাইনেকোমাস্টিয়া নির্ণয় করবেন
শারীরিক পরীক্ষা: ডাক্তার প্রথমে রোগীকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা করবেন। রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাসসহ রোগীর লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা: রক্তে হরমোনের মাত্রা এবং অন্তর্নিহিত সংক্রমণের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য একটি রক্ত পরীক্ষা কার্যকর।
স্তন আল্ট্রাসাউন্ড: শব্দ তরঙ্গ স্তন বৃদ্ধির স্পষ্ট ছবি পেতে ব্যবহার করা হয়।
ম্যামোগ্রাম: এটি স্তনের টিস্যুর কোনো পরিবর্তন বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।
কম্পিউটারাইজড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান এবং ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান: এগুলো শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন স্তন টিস্যুর স্পষ্ট ছবি পেতে ইমেজিং পরীক্ষা করা হয়।
টেস্টিকুলার আল্ট্রাসাউন্ড: টেস্টিসের আশপাশের এলাকার স্পষ্ট ছবি তৈরি করতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
টিস্যু বায়োপসি: সন্দেহভাজন টিস্যু বৃদ্ধির একটি ছোট নমুনা এক্সাইজ করা হয় এবং কোনো ক্যানসার কোষের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এই পরীক্ষা সাধারণত স্তন ক্যানসার বাতিল করার জন্য করা হয়।
গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা কী?
সিডো-গাইনেকোমাস্টিয়া ব্যতীত অন্যান্য গাইনেকোমাস্টিয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সার্জারি একমাত্র চিকিৎসা পদ্ধতি। যদিও এটি শারীরিক অসুবিধার থেকে সামাজিক বিড়ম্বনাটাই বেশি। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি করলে সাধারণত দাগ থাকে না।
গাইনেকোমাস্টিয়া কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
গাইনেকোমাস্টিয়া প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে আছে বিনোদনমূলক ওষুধের ব্যবহার এড়িয়ে চলা, অ্যালকোহল সেবন না করা, ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত স্টেরয়েড ব্যবহার এড়িয়ে চলা, বডি বিল্ডিং পরিপূরক এবং ওষুধ এড়ানো, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম খাদ্য খাওয়া এবং ব্যায়াম নিয়মিত করা।
কলি