![দখলে নিয়েই শহর পোড়াল জান্তা, রাখাইনে নিহত ৮০ সেনা](uploads/2024/02/28/1709093540.Myanmar.jpg)
মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের কাওলিন শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়িয়ে দিয়েছে জান্তা বাহিনী। দুই সপ্তাহ আগেই বিরোধীদের কাছ থেকে শহরটির পুনর্দখল করে তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে জান্তা বাহিনীর ধ্বংসলীলার খবর। ড্রোন থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, শহরের প্রায় সব বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
দেশটির বেসামরিক সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) অধীনে থাকা জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী গত বছরের নভেম্বরে শহরটি দখলে নেয়। এর আগে কয়েক দিন ধরে তারা সেখানে আক্রমণ চালিয়েছে। পরে জান্তা বাহিনী বড় মাপের হামলা চালিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আবার কাওলিন নিজেদের দখলে নেয়।
এদিকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রামরি শহরে জান্তা বাহিনীর প্রায় ৮০ জন সেনা নিহত হয়েছে। তিন দিনের লড়াইয়ে এসব সেনা নিহত হয় বলে দাবি করেছে রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
মায়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতির খবর বলছে, শহরটির আট ওয়ার্ডের সব কটিতেই আগুন দিয়েছে জান্তা বাহিনী। শহরের কাছে থাকা অন্তত ১০টি গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরাকান আর্মির হামলায় ৮০ সেনা নিহত
রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য গত শনিবার রামরিতে নতুন করে সেনা পাঠায় জান্তা সরকার। শনিবার চারটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ১২০ জন সেনা আসে রামরিতে। আরাকান আর্মির দাবি, দুই দিনে এসব সেনার তিন ভাগের দুই ভাগ নিহত হয়েছে। গত শনিবার এসব সেনার প্রায় ৬০ জন তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়। এসব সেনার লাশ উদ্ধার করার সময় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে তারা। শনিবারের পর সোমবার রামরি দ্বীপ থেকে পিছু হটার সময় তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জান্তা বাহিনীর আরও ২০ সেনা নিহত হয়। তাদের কাছ থেকেও গোলাবারুদ ও খাদ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়।
রামরি শহরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সশস্ত্র লড়াই শুরু হয় গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। শহরটিতে জান্তা বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে আরাকান আর্মি হামলা করার পর এ লড়াই শুরু হয়।
আরাকান আর্মি বলছে, এর পর থেকে শহরটিতে বিদ্রোহীদের অবস্থান নিশানা করে জল, স্থল ও আকাশপথে বোমা হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। জান্তার হামলায় শহরটির অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এ ছাড়া শহরের একটি হাসপাতাল ও বিপণিবিতানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলের দ্বারপ্রান্তে বিদ্রোহীরা
জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, তারা থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী তানিনথারি অঞ্চলের রাজধানী দাওয়েইর কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহর মিত্তার দখলের দ্বারপ্রান্তে। ওই এলাকায় এক সপ্তাহ আগেই জান্তার বহরে হামলা চালিয়েছিল বাহিনীটি।
পিডিএফের মুখপাত্র রাউঙ নি জানান, দাওয়েইর পূর্বে অবস্থিত মিত্তা শহরের কেন্দ্রীয় পুলিশ স্টেশন এখন তাদের দখলে। ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে শহরটি দখলে নিয়েছে তারা।
তিনি বলেন, ‘আমরা জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি পুলিশ স্টেশনটি দখল করতে পেরেছি। তবে তারা এখনো শহরের প্রবেশমুখে কৌশলগত একটি ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা একবার সেটি পেয়ে গেলে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাব।’
এবার শিক্ষার্থীদের রিজার্ভ সেনা বানাবে জান্তা
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ দলে (ইউটিসি) যোগ দিতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছে মায়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। এই শিক্ষার্থীরা মায়ানমারের রিজার্ভ সেনা হিসেবে কাজ করবে। গতকাল মায়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এ খবর জানিয়েছে।
নিয়োগ আইনের অধীনে শিক্ষার্থীরা চাইলে পরিষেবা থেকে বিরত থাকতে পারে। কিন্তু সামরিক জান্তা চায় শিক্ষার্থীরা ইউটিসিতে যোগদান করুক, যাতে তাদের রিজার্ভ হিসেবে নিয়োগ করা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২২ সালে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ইউটিসি গঠন করা হয়। এটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স প্রশিক্ষণ দলের আদলে তৈরি। এর লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনীতে শিক্ষিত অফিসার নিয়োগ দেওয়া, যা বেসামরিক নাগরিককে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ করে দেবে।
ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটির প্রধান এবং ইউটিসির চেয়ারম্যান ড. টিন মং তুন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ইউটিসিতে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেছেন। প্রয়োজনের সময় তারা যেন মায়ানমারকে সেবা দিতে পারে। ইয়াঙ্গুনের ইউটিসির কমান্ডার ক্যাপ্টেন মিন উইন মন বলেন, জাতীয় জরুরি পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত জনবল হিসেবে নিয়োগের জন্য সংস্থাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পদে সামরিক বাহিনীতে চাকরির সুযোগ দেয়।
জান্তা সরকারের সংবাদপত্রের খবরে জানা যায়, সামরিক জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংসহ অনেক জেনারেলই সাবেক ইউটিসি সদস্য ছিলেন। অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন সংসদের স্পিকার টি খুন মায়াত, সাবেক অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল খিন জাও উ, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেইন উইন, জান্তা শান্তি আলোচক লেফটেন্যান্ট জেনারেল উইন বো শিন এবং আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিন মং উইন।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের হুঁশিয়ারি
জান্তা বাহিনী দেশের কনস্ক্রিপশন আইনের (তরুণদের বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগদান) প্রয়োগ করে বেসামরিকদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। এটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে জান্তাকে কেউ সহায়তা করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে এনইউজির সেন্ট্রাল কমিটি ফর কাউন্টার টেররিজম।
পুরো বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক শ্রম হিসেবে দেখছে এনইউজি। যারা সহায়তা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বেসামরিকদের অপহরণ করে জান্তা বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি বা বেসামরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তার অভিযোগ আনা হবে।
এনইউজি বলছে, জান্তা বাহিনী কনস্ক্রিপশন আইনের প্রয়োগ করছে, যাতে বেসামরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর আগে এনইউজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কনস্ক্রিপশন আইন প্রয়োগের ন্যায্যতা নেই জান্তার। ফলে জনসাধারণের আইন মানার বাধ্যবাধকতাও নেই।
চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কনস্ক্রিপশন আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত জানায় জান্তা বাহিনী। নিয়মানুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ ও ১৮-২৭ বছর বয়সী নারীদের নতুন আইনের অধীনে সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ডাক্তার ও প্রকৌশলীদের মতো বিশেষজ্ঞদের ক্ষেত্রে পুরুষদের বয়সসীমা ধরা হবে ১৮ থেকে ৪৫ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে ধরা হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছর।
কনস্ক্রিপশন এড়ালে সাজার বিধানও রয়েছে। তিন থেকে পাঁচ বছর কারাগারে কাটাতে হতে পারে। এ ছাড়া অসুস্থতা বা অক্ষমতার অজুহাত দেখিয়ে কনস্ক্রিপশন এড়ালে কারাগারে থাকতে হবে পাঁচ বছর। তবে মায়ানমারের অনেক তরুণকে অন্তর্ভুক্তি এড়ানোর আশায় পাসপোর্ট অফিসে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। সূত্র: ইরাবতি