চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের মতো সরকার নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গত মে মাসে এটি প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছে। এটা কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, ‘তারপরও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে। এ জন্য সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। এ মুহূর্তে বড় প্রকল্প বাদ দিতে হবে। দেখেশুনে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’
শনিবার (৮ জুন) ২০২৪-২৫-এর প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানী মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এই রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার জরুরি। সে সঙ্গে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বাড়াতে করের আওতা বাড়াতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস বিস্তৃত করা প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের আকার বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য। কারণ আগে বাজেটের আকার ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও এবার মাত্র ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন ও যথাযথ মনিটরিং। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি বাজেট মোকাবিলায় ব্যাংকব্যবস্থা থেকে অধিকমাত্রায় সরকারের ঋণ বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগে ও কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। তাই স্থানীয় ব্যাংকব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে ও সতর্কতার সঙ্গে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নে নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আয়কর আইন ও কাস্টমস আইন যুগোপযোগী করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলছি। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব আগেও করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ জন্য আবারও সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। রাজস্বসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল নিয়োগ দরকার।’
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনুৎপাদনশীল ও অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ কমানোর পাশাপাশি বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে ব্যয় সংকোচন নীতি আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। এ মুহূর্তে বড় প্রকল্প না নিয়ে দেখেশুনে প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার। অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, আগামী ৬ মাসে মূল্যস্ফীতি কমবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় সৎ ব্যবসায়ীদের পক্ষে, যা বাস্তব তাই বলা হয়েছে বাজেটের ব্যাপারে। উন্নয়নের জন্য সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা বেসরকারি খাত সরকারের পক্ষে নয়, বিপক্ষেও নয়। বাজেটের আকার বাড়ানো হয়নি। এ জন্য বাস্তবভিত্তিক বলা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কালোটাকা সাদা আর অপ্রদর্শিত টাকা এক কথা নয়। আমরা অপ্রদর্শিত টাকার কথা বলেছি। কারণ অনেকে বিভিন্ন কারণে রিটার্নে সবকিছু দেখাতে পারেননি। তাই ১৫ শতাংশ কর দেওয়ার কথা বলেছি। তবে অপরাধমূলক টাকা যাতে না ঢোকে সেটাও আমরা চাই।’