ঢাকা ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১৩ এএম
শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি পুরস্কার

গত সংখ্যার পর

প্রশ্নটি প্রথম কে আবিষ্কার করেছিলেন কবি জানেন না। তবে এটি অনেক পুরোনো দিনের প্রশ্ন। তবে নতুন প্রশ্নকর্তা এখানে বানরের আগে কেন দুষ্ট শব্দ বসালেন আর বিশেষ বাহিনীর তাড়া খাওয়ার প্রসঙ্গই-বা কেন আনলেন বুঝতে পারছেন না তিনি। প্রশ্নকর্তা কি কোনো কারণে বিশেষ বাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ? তিনি কি অপরাধ জগতের কেউ? না না না, তিনি নিশ্চয়ই অঙ্কের শিক্ষক হবেন- কোনো অপরাধী হতে যাবেন কেন? সমাধান বাদ দিয়ে ইত্যাকার হাজারো প্রশ্ন কবি হাসান আলীর মাথায় জট পাকাতে লাগল। 

এদিকে জটলার কেন্দ্রে যিনি বসে আছেন তিনি ততক্ষণে অঙ্কের সমাধানে নেমে পড়েছেন। প্রথম মিনিটে তিন ফুট ওঠে দ্বিতীয় মিনিটে দুই ফুট নেমে গেলে গড়ে দুই মিনিটে এক ফুট মাত্র উঠতে পারে। কিন্তু শেষ তিন ফুট এক লাফে উঠে চূড়ার ওপর উঠে গেলে বানরটির আর নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অতএব, শেষ তিন ফুটের জন্য এক মিনিট আর বাকি ১২ ফুটের জন্য ১২ মিনিট- একুনে ১৩ মিনিট লাগবে তার, এটিই উত্তর।

তবে উত্তরদাতার মাথায় বোধ করি একটু সমস্যা ছিল। কারণ উত্তর শেষ করার পর তিনি বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লিখলেন, বাঁশের উচ্চতা ১৫ না হয়ে সাড়ে ১৪ ফুট হলেও চূড়ায় উঠতে একই সময় অর্থাৎ ১৩ মিনিট লাগত। তিনি যুক্তি দিলেন, প্রচলিত অঙ্কের পদ্ধতি অনুযায়ী শেষের তিন ফুটের জন্য এক মিনিট হিসেবে আর বাকি ১১.৫ ফুটের জন্য ১১.৫ মিনিট- একুনে ১২.৫ মিনিট লাগার কথা সাড়ে ১৪ ফুট বাঁশের মাথায় উঠতে। কিন্তু বানরটির ১১.৫ ফুট উচ্চতায় উঠে থামাটা বাস্তবসম্মত নয়। সে তো পরীক্ষার অঙ্কের জন্য বাঁশ বাইছে না। বিশেষ বাহিনীর ভয়ে জান নিয়ে পালাচ্ছে সে। কাজেই নিচের দিক থেকে তার গতি অনুযায়ী সে হয়তো ১১ ফুট অথবা ১২ ফুটের মার্কে অবস্থান করতে পারবে, ১১.৫ ফুট উচ্চতায় কখনো নয়। পরবর্তী দূরত্ব আড়াই ফুট, তিন ফুট, যা-ই হোক না কেন তার জন্য একটি লাফ অথবা এক মিনিটই যথেষ্ট। সবাই সমস্বরে চিৎকার করে উঠল, আপনি বলতে চাচ্ছেন, বাঁশের উচ্চতা ১৫ ফুট হোক, সাড়ে ১৪ ফুট হোক- একই সময় লাগবে? 
-গণিতের বর্তমান প্রচলিত হিসাবে তো তা-ই মনে হয়।

তবে আড়াই ফুট অতিক্রমণের জন্য তিন ফুটের চেয়ে, গড়ের হিসেবে সময় একটু কম লাগবে তবে তা কোনোমতেই ১২.৫ মিনিট নয়। একইভাবে কম সময় লাগতে পারে, যদি বাঁশের উচ্চতা ১৪.৬ ফুট, ১৪.৪ ফুট ইত্যাদি হয়। এখানে গণিতের এক নতুন ফর্মুলা লুকিয়ে আছে। তবে তা এখনই প্রকাশ করতে চাই নে। তাহলে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে, যাদবের পাটিগণিত থেকে সব পাঠ্যপুস্তক নতুন করে লিখতে হবে।

আমি জানি এ ফর্মুলা, এর নাম দিলাম ফয়েজ ফর্মুলা। গণিতের অমীমাংসিত ফার্মির সূত্রের মতো এটিও গোপনীয় থাক।

অভিভাবকের দল এসময় হইচই করে উঠলেন। তাঁরা সমস্বরে বললেন, আপনি এসব বিশেষ দ্রষ্টব্য বাদ দেন। দশজন যেভাবে অঙ্ক করে সেভাবেই থাক। এত পণ্ডিত হলে আপনি এই আদর্শ স্কুলের মাঠে নকলের উত্তর দিতে এসেছেন কেন, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গণিতের অধ্যাপক হন, তারপর গণিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করুন। এখন আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার গবেষণার অংশ কেটে আসলটুকু দেন, আমরা হলে সাপ্লায়ারের হাতে তুলে দিই। হলের গার্ডরা অস্থির হয়ে পড়েছে।

কিন্তু পরীক্ষার হলের গার্ডদের নকলের অস্থিরতার চেয়েও বড় অস্থিরতা এ সময় দেখা দিল স্কুলের মাঠে। পুলিশ আর বিশেষ বাহিনী নকলের দায়ে যাকে যেখানে পেল গ্রেফতার করতে লাগল। দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ আগের জমজমাট স্কুলের মাঠ জনশূন্য মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হলো। 

কবি হাসান আলী বায়তুল ফালাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে মাদুরের ওপর গা এলিয়ে দিয়েছিলেন। বেশ কিছু মুসল্লি কাজা নামাজ পড়ছেন ইতস্তত। আজ পরীক্ষা উপলক্ষে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে গেছে। দুজন মহিলাও বোরকা গায়ে মসজিদের একপাশে নামাজে দাঁড়িয়ে গেছেন। কবি হাসান আলী অবাক হলেন। এ মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায় এই প্রথম কি না। 

আবার তিনি কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। গঞ্জের পাঞ্জেগানা মসজিদ থেকে ইমাম সাহেব এসে দেখলে বিষয়টা কীভাবে নেবেন। ইত্যাকার হাজারো দ্বন্দ্বে যখন তিনি অবশ বিবশ হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মহিলারা এগিয়ে এসে তাঁকে উঠে মসজিদের বাইরে যেতে বললেন। বললেন, আল্লাহর ঘর ধুলোবালিতে ভরপুর কেন? 

কবি এ প্রশ্নের কী উত্তর দেবেন। তিনি আর হালিম শাহ কখনো কখনো মসজিদ ঝাড় দেন বটে, তবে তা যে সত্যিকারের সাফসুতরো করা বোঝায়, সে দাবি তিনি করেন না; এখনো করলেন না। বাকি আধঘণ্টা সময়ে দুই মহিলা মুসল্লি মসজিদ ঝকঝকে তকতকে করে তুললেন। কবি একবার শুনেছিলেন, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য অনেক দেশে মসজিদের মোতোয়াল্লি হন মহিলারা। ফলে আল্লাহর ঘর থাকে সর্বদা পরিচ্ছন্ন। দেশে বিশেষত গ্রামে মসজিদগুলোর সাফ সুতরো রাখার জিম্মাদারি সব মা-বোনদের হাতে তুলে দেওয়া যায় কি না একবার মনে মনে ভাবলেন তিনি, আবার তৎক্ষণাৎ কী এক অজানিত শঙ্কা কি আশঙ্কায় নিজের ভেতর সেঁটিয়ে গেলেন তিনি। আরও আধাঘণ্টা পর, বহুদিনের অবসানে পবিত্রতার এক অনুভবে পরিচ্ছন্ন বায়তুল ফালাহ মসজিদে তার চোখে ঘুম নেমে আসছিল। এ সময়ে হন্তদন্ত হয়ে হালিম শাহ মসজিদে এসে কবি হাসান আলীর আরামের ঘুম হারাম করে দিলেন। 

-গণক হারাধনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। থানায় যেতে হবে চলুন।

কবি হাসান আলী কোনোদিন থানায় আসেননি। তার ধারণা, থানায় শুধু খারাপ লোকেরাই আসে। তার মতো এক নিরীহ কবিকে কোনোদিন থানায় আসতে হবে- এ ছিল তার কল্পনারও বাইরে। 

থানার বারান্দায় দুই বন্ধু পাশাপাশি বসেছিলেন। থানা চত্বরে বাতিল গাড়ির স্তূপ, বিভিন্ন সময়ে পুলিশ কর্তৃক সিজ করা গাড়িগুলো সময়ের গ্রাসে মাটির খোরাকে পরিণত হচ্ছে। দু-একজন মানুষ ভগ্ন গাড়ির চাকায় বসে গোপন পরামর্শ করছে। দুটি চড়ুইপাখি কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে গাড়ির অবশিষ্টাংশের ওপর বসছে আবার চলে যাচ্ছে। কবির ধারণা, এখানে তারা বাসা বানিয়েছে আর সে বাসায় মনুষ্য সমাজের সদস্যরা কেন বসতে এসেছে তা তারা বুঝে উঠতে পারছে না। যেহেতু কবি, আরও এক ধাপ গিয়ে তার চিন্তারা কথা বলছে, যে পুলিশ স্বয়ং থানার মধ্যে সামান্য চড়ুই পাখির বাসার নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা বাইরে মানুষের কী নিরাপত্তা দেবে। 

চলবে...

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

বই আলোচনা জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক: দিগন্ত উন্মোচনকারী এক গ্রন্থ

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক: দিগন্ত উন্মোচনকারী এক গ্রন্থ

রাজনীতিবিদ, সাংসদ এবং প্রাক্তন মন্ত্রী হায়াকাওয়া তাকাশি জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক কিংবদন্তিতুল্য নাম। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে হায়াকাওয়া তাকাশির ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখে গেছেন। তারই সূত্র ধরে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানামুখী দ্বারও উন্মোচিত হয়েছে। সেসব দুয়ার দিয়ে বিনিয়োগ, কল-কারখানা স্থাপন, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণসহ বহুবিধ খাতে বিশ্বস্ত পার্টনারশিপ অব্যাহত রেখে আসছে বাংলাদেশে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান শক্তিশালী দেশ জাপান।

এসব বিষয়েই বিস্তারিত তথ্য ও ইতিহাস ঘেঁটে জানান দিচ্ছেন চার দশকের মতো জাপান প্রবাসী কথাসাহিত্যিক ও গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার তার ‘বঙ্গবন্ধু এবং জাপান সম্পর্ক’ নামক সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গ্রন্থে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত তার প্রায় ৩০টি গ্রন্থের বেশির ভাগই জাপান-বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসম্পর্ক নিয়ে রচিত। হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে একটি বই দিল্লি থেকে ২০০৮ সালে। জাপানি ভাষায় প্রকাশিত লেখকের একটি বই আমাজন অনলাইনে বেস্ট সেলার হয়েছে ২০২১ সালে। 

নানা ধরনের পুরনো ও নতুন ইতিহাসসমৃদ্ধ পৃথক পৃথক কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে এতে। সেই সঙ্গে আছে রচনাশৈলীর মাঝে এক ধরনের তীব্র ঝাঁঝও। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে অনেক অতীত থেকে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ- তা জেনেও আগ্রহী পাঠকবৃন্দ তৃপ্ত হতে পারবেন নিঃসন্দেহে এ বইয়ের মাধ্যমে। 

উল্লেখ্য, এশিয়ার এ দুটি অঞ্চলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের শুরু সেই ১৯০২ সাল থেকে। জাপানি মনীষী ওকাকুরা তেনশিন তখন ব্রিটিশ-ভারতের রাজধানী কলকাতায় যান। বইটিতে জানা গেল, ১৯০৮ সালে জাপানি বৌদ্ধভিক্ষু কিমুরা রিউকান পালি ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে আসেন। আরও চমকপ্রদ তথ্য, পুরনো ঢাকার মেয়ে হরিপ্রভা মল্লিকের সঙ্গে বিয়ে হয় জাপানি নাগরিক তাকেদা উয়েমোনের। তারপর তারা একসঙ্গে জাপানে যান ১৯১২ সালের দিকে। 

বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপান যান ১৯১৫, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৬, সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ এবং বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল জাপান গমন করেন ১৯৪৬ সালে টোকিও ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহণের উদ্দেশ্যে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান যান ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রীয় সফরে।

জাপান-বাংলা সম্পর্ক মানেই এক দুর্দান্ত ইতিহাস, জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের পটভূমি, আরও পুরনো সংযোগ, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রভাব, টোকিও ট্রাইব্যুনাল বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল ও তানাকা মাসাআকি, দুটি দলিল এবং বঙ্গবন্ধু শীর্ষক নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধের সমাহার রয়েছে এ বইয়ে। সেই সঙ্গে পরিশিষ্টে সংযুক্ত আছে ১৫ আগস্ট জাপান ও বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ জাপান শাখা ও ‘মানচিত্র’ পত্রিকা ইত্যাদি।

এই লেখকের ভাষ্যে জানা যাচ্ছে, ‘বহু জাপানি আজও মনে করেন জেনারেল তোজো হিদেকিই আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধানোর জন্য দায়ী। তারা যে আসলে অজ্ঞ এবং ইতিহাসকানা- তা আর না বললেও চলে। মার্কিনি, ব্রিটিশ এবং রাশিয়ানদের গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে জাপান, তা আজ দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত করেছে ইহুদি বিশ্ব পুঁজিপতিরা বিশ্বকে তাদের হাতের মুঠোয় রেখে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য’। 

এরকম তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণমূলক পর্যালোচনা রয়েছে এ বইয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠাজুড়ে। উল্লেখ্য, ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল তোজো হিদেকিকে যুদ্ধাপরাধী বলে মনে করা হয়ে থাকে। জাপানিদের উল্লেখযোগ্য অংশও তেমনটি মনে করেন এখনো। 

আর সেই তোজো হিদেকি সম্পর্কে আলোচ্য গ্রন্থকার বলছেন, ‘তার মতো বুদ্ধিমান, সু-সংবেদনশীল এবং দরদি দেশপ্রেমিক জাপানে আজও বিরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রায় চারটি বছর তিনি যেভাবে মিত্রশক্তিকে নাকানি-চোবানি খাইয়ে জাপান ও এশিয়া মহাদেশকে রক্ষা করেছিলেন তার তুলনা নেই বললেই চলে।’... ‘বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও ছিলেন অত্যন্ত উদার মনোভাবাপন্ন কিন্তু খাঁটি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনায়ক। দুজনেই বেঁচে থাকলে সমগ্র এশিয়া এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বহু আগেই অর্জিত হতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’ (পৃষ্ঠা-৯৬; বঙ্গবন্ধু এবং জাপান সম্পর্ক)।

প্রবন্ধগুলোর শেষে জাপানি ভাষায় প্রকাশিত কিছু তথ্যসূত্র রয়েছে। যেমন, পারু হানকেৎসু শো নো শিনজিৎসু / ওয়াতানাবে শোওইচি / পৃ. ৮৮। প্রয়োজনীয় এ সূত্রগুলো ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় হলে খুঁজে দেখার সুবিধে হতো। পরিশিষ্টে অনেকগুলো ছবি আছে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের। ছবিগুলোর গুরুত্ব ঐতিহাসিক। বইয়ের ভেতর ও ছবি পরিচিতিতে আরও সম্পাদনা এবং মুদ্রণ তদারকিতে সতর্কতার অবকাশ লক্ষণীয়। 

এসব মিলিয়ে পরিচ্ছন্ন, আকর্ষণীয়, ঝকঝকে ছাপা, গুণগত মান ও দৃষ্টিনন্দন অঙ্গসৌষ্ঠবসহ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার্স লিমিটেড। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি নিউইয়র্ক-লন্ডন-টরেন্টো-সিডনি-ঢাকা ভিত্তিক। তবে দেশের পাঠকরা সাধারণত যে সাইজের বই হাতে নেড়েচেড়ে ও পড়তে অভ্যস্ত্য এটাতে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। বইটা বের হয়েছে অ্যালবাম সাইজে।

অমিত সুখ

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
অমিত সুখ
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

ভাত দেও না ক্যা?
কী দিয়া দিমু? ঘরে ভাত আর নুন ছাড়া ত খাওনের কিছুই নাই।
একটা ডিমও ভাইজা দিতে পারবা না?
থাকলে ত দিমু।
বেহানবেলা মনডাই খারাপ হইয়া গেল। কী দিয়া যে কী করুম। মাইনষের তে টাকা ধার করতে করতে এহন নতুন কইরা চাইতে শরম করে।
ক্যা, নদীর কামাই নাই? নদীত মাছ পড়ে না?
কামাই আর কই? নদীত যাইয়া কী করুম? মাছ নাই। জালে পড়ব কী? জালে এহন আর মাছ ওডে না।
ঠিকই কইছেন। নদীত মাছের থেইক্কা জাইল্লা বেশি। মাছ বড় না অইতেই বেবাক ধইরা লইয়া আহে। জাইল্লাগো লাইগা মাছ বড় অইতে পারে না।
আইচ্ছা, থাহো দেহি ঘরে। আমি গেলাম। দেহি কিছু করবার পারিনিহি।
আইচ্ছা দেহেন।
কাসু মাঝি ছয় মাস হয় বিয়ে করেছে। বউ এখনো পোয়াতি হয়নি। কী সুন্দর চেহারা। গরিব ঘরের মেয়ে। বিয়ের সময় রহিমার সঙ্গে বেশিকিছু দিতে পারেনি আজগর মাঝি। তবে রহিমার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার অলংকার দিয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র দিয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকার। মোট এক লাখ টাকার বরাদ্দ রেখেছে আজগর মাঝি। মেয়েকে সুখী দেখার জন্য আজগর মাঝি এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ নিয়েছে। ঘরে এখনো বিয়ে দেওয়ার মতো দুই মেয়ে রয়েছে আজগর মাঝির। কোনো ছেলে নেই। তাই কাসুকে নিজের ছেলের মতোই মনে করে সে। আজগর মাঝি দোকানে বসা। পাশ দিয়ে কাসু যেতেই-
বাবা কাসু, কই যাও?
আস্সালামুআলাইকুম। নদীর পাড় যামু।
ক্যা?
কাম আছে।
নদীত জাল বাও না?
না।
ক্যান?
নদীত মাছ থাকলে ত জাল বামু। হারা দিন ভাগিদার লইয়া খাইটা পাঁচ-দশটা মাছ পাইলে নিজে রাখুম কী আর ভাগিদারগোরে দিমু কী। হের পরে মাহাজনের দেনা ত আছেই।
কথা খারাপ কও নাই। হগলেই এই কথা কয়। আমি নদীত জাল বাওয়া ছাইড়া দিছি। তয় আডে-বাজারে গেলে কইতে পারি মাছের কী দাম।
আমি আহি আব্বা।
কাসু নদীর পাড়ে গিয়ে এক ধ্যানে বসে থাকে। নদীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। নদীর মাঝ পথ ধরে তেলের জাহাজ ধীরে ধীরে চলতে থাকে। মাছ ধরার ট্রলার দেখা যায় খুব কম। কাসু হঠাৎ উঠে দাঁড়াতেই বাল্যবন্ধু ফজলু কাসুর সামনে এসে দাঁড়ায়।
কী রে কাসু, এইহানে কী করতাছত?
কী আর করুম। নদীরে ভালা কইরা দেখতাছি। নদী আমাগোরে পেটে লাথি মারছে। খাওন দেয় না।
হেই কথা কইয়া লাভ নাই। নদীত আগে কত রহম মাছ পড়ত। এহন এক ইলিশ মাছ। তাও আবার ছোডখাডো। বাজারে নিলে কয় জাটকা। ধরতে গেলে সরকারি বাহিনীর লগে কত দইছই।
দইছই ত করবই। অগো বাপের টাকা দিয়া জাল কিনি ত। হের লাইগা আমাগো জাল পোড়াইয়া দেয়।
আসলে হালারা বড় ডাকাইত। ফজলু বলে।
ল দেহি, আচমত চাচায় জাল বোনতাছে। হেইয়ানে জামু।
ল যাই।
কাসু ও ফজলু আচমত মাঝির কাছে যায়। আচমত মাঝি তার দুই ছেলে নিয়ে জাল বুনে। সেখানে তারা সুখ-দুখের আলাপ করে। আলাপ করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। কাসুর রহিমার কথা মনে পড়ে। ঘরে কেউ নেই। রহিমা একা ঘরে থাকবে কেমন করে- ভাবতে ভাবতে বলে- ল ফজলু, মেলা বেলা হইয়া গেছে। তর ভাবি ঘরে একলা। যাইতে হইব।
ক্যা, ভাবিরে কী কেউ লইয়া যাইব?
আরে কী কছ!
যা যা হক্কাল কইরা যা।
ফজলু কাসুরে ছাইড়া দে। ঘরে নতুন বউ। আচমত মাঝি বলেন।
কাসু বলে- হ চাচা, বাড়িত যাইতাছি। তয় আপনের লগে একটু কথার কাম আছে।
কও বাবা।
আমারে কয়ডা টাকা দেওন যাইব? নদীত নামলেই টাকা শোধ কইরা দিমু।
আইচ্ছা। তয় কত টাকা লাগব তর?
তিন হাজার টাকা দিলে ভালা অয়।
নেও। তয় সময়মতো শোধ কইরা দিবা, বাবা।
আপনে চিন্তা করবেন না, চাচা। টাকা আপনে পাইয়া যাইবেন।
কাসু টাকা পেয়ে খুশি মনে হাঁটতে থাকে। বাজারে গিয়ে চাল, ডাল, তেল ও গুড়ের জিলাপি ক্রয় করে ইজি বাইকে চড়ে বাড়ি যায়। বাইক থেকে নেমে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ঘরের সামনে গিয়ে বলে, রহিমা দরজা খোল।
ক্যাডা?
আরে তোমার স্বামী কাসু মাঝি।
এমন কইরা কন ক্যা? শরম লাগে না।
এহন আর শরমের কাম কী। তুমি আমার পরান পাখি। কে কী কইব আমার তাতে কী যায় আহে। ব্যাগ ধরো, বাজারে গেছিলাম।
আহেন। ঘরে আইয়া পড়েন।
হোন বউ। বিয়ার আগে বাবার লগে মাছ ধরছি নদীত। কত মাছ যে পাইছি। আর এহন...।
পাইবেন। পাইবেন। আবার মাছে আপনার নাও ভইরা যাইব।
মাছ পামু কইত্তে? মানুষ গেছে হারমাইদ হইয়া। কেউ হাচা কথা কয় না। বুঝলা বউ, বিশ্বাস! বিশ্বাস হারাইয়া গেছে।
তয় যান, মুখ-হাত ধুইয়া আহেন। পাশের ঘরের থেইকা পিডা দিয়া গেছে। খাইতে দিমু।
ক্যাডা দিয়া গ্যাছে?
চাচি আম্মা।
হোন বউ, আইজ রাখছ ভালা কথা। কাইল তনে দিলে আর রাখবা না।
ক্যা?
বোঝবা না। তুমি বোঝবা না। আমি তহন ছোড। আমার মা-বাবায় মরার পরে অরা আমারে অনেক কষ্ট দিছে। চাচি আমারে মাইরা ফালাইতে চাইছে। আল্লায় আমারে বাঁচাইয়া রাখছে।
কী কন?
হ। ঠিকই কইছি। বাপ মরার পরের তন আল্লায় আমারে অনেক টাকা দিছে। নদীত নামলেই মাছ পাইছি। মেলা মাছ। টাকা আর টাকা। আমার টাকা দেইখা চাচির মাইয়া আঞ্জুরে আমার লগে বিয়া দিতে চাইছে।
হের পর?
হের পর আর কী। আমি না কইয়া দিছি। এহনো আমার পিছনে লাইগা রইছে। পারলেই ছোবল দিতে চায়।
আপন চাচিও এমন হয়?
হয়। হয় বউ।
বাদ দেন ওইসব কথা। আপনে পিডা না-খাইলে ঘরে মুড়ি আছে। গুড় দিয়া মাইখা খান।
হ। তাই দেও। হেইডাই ভালা।
রহিমা বাজার থেকে আনা সওদাগুলো একে একে গুছিয়ে রেখে টিনের পাত্র থেকে মুড়ি ও গুড় নিয়ে কাসুর সামনে দেয়। কাসু অপলক দৃষ্টিতে রহিমার দিকে তাকিয়ে থাকে-
বউ তুমি খাইবা না?
আপনে খান।
তুমি কিছু খাইছ?
আপনে খাইলেই ত আমার খাওন। 
এইডা কোনো কথা? তোমার খিদা লাগে নাই বুঝি?
বিনা কামে থাকলে আমাগো খিদা। কামে কামে থাকলে আমাগো খিদা লাগে না।
তোমার কথা হুইনা আমার একটা কথা মনে পইড়া গেল।
কী কথা?
আমার মায়ও এমন আছিল। বাবায় কত কইত খাইয়া লও। হের পরে কাম কইর। কে হোনে কার কথা? মায় না-খাইতে না-খাইতে একদিন ক্যান্সারে মইরা গেল। টাকার অভাবে মায়েরে ভালা ডাক্তার দেখাইতে পারি নাই। আইজ মায়ের কবরের ওপরে কত গাছ। ফলও ধরে। পাখিয়ে খায়। মাইনষেও খায়।
আমার মনে অয় আপনের মায় আপনেরে দোয়া দিয়া গেছে। আবার আপনে আগের দিন ফিরা পাইবেন।
ঠিকই কইছ বউ। হেইডাই যেন অয়। যাও হক্কাল হক্কাল রান্দনবারণ সাইরা লাও।
কাসু মাঝি গুড় দিয়ে মুড়ি মেখে খেয়ে চকির ওপর শুয়ে পড়ে। মাথার ওপর টিনের চালের মাঝে মাঝে ফুটো হয়ে আছে। ফুটো দিয়ে চাঁদের জোছনা চুয়ে চুয়ে পড়ে। ফুটোতে চোখ পড়তেই কাসু মনের সুখে গান ধরে-
টাকা পয়সায় নাইরে সুখ
বুকের মইধ্যে ভীষণ দুখ
সুখপাখিটা উইড়া গেছে দূরে...। কণ্ঠে গান থাকতেই বিল্লাল মাঝি 
ফোন দেয়।
কাসু ফোন ধরে। ফোনে শুধু জে জে করতে থাকে কাসু। কথা শেষে বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে।
রহিমা খাওন হইছে?
আর একটু। অহনেই খাওন দিমু।
দেও। দেও। তয় হোন ভালা খবর আছে।
রহিমা রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে বলে, কী খবর?
খবর আছে বউ। কাইল শ্যামরাজ যামু।
কই যাইবেন?
শ্যামরাজ।
এইডা আবার কোনহানে?
ক্যা, আমাগো ভোলার দক্ষিণে। হেনে অনেক মাছ পাওয়া যায়। আমাগো দিন ফিইরা যাইব।
হ। দেহেন। আল্লায় যেন আমাগো দিন ফিরায়। এহন কি কেউ গরিব আছে। ঘরে ঘরে বড়লোক। সবাইর ঘরেই টাকা। সবারই হাতে হাতে মোবাইল। দেশে চাউল-ডাইলের অভাব নাই।
ঠিকই কইছ বউ। শুধু আমাগো ঘরেই অভাব।
আপনে চিন্তা কইরেন না। আল্লায় দিলে কতক্ষণ। আপনে বহেন। আমি খাওন আনতাছি।
যাও।
কাসু রহিমাকে নিয়ে মনের আনন্দে তৃপ্তিসহকারে রাতের খাবার খায়। খাওয়ার মধ্যেই কাসু রহিমার দিকে থেকে থেকে চেয়ে থাকে। রহিমা কাসুর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়।
খাইতে বইয়া আমার দিকে চাইয়া থাকলে হইব?
না। তয় তোমারে এত সুন্দর লাগতাছে। কইয়া বুঝাইতে পারুম না।
কী যে কন। আগে খাওন শেষ করেন।
রহিমার কথায় কাসুও একটু লজ্জা পায়। তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া শেষ করে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তারপর দুজনেই শুয়ে পড়ে বিছানায়। সুখ-দুখের কথা বলে-
দেহ বউ, বেহানে ঘরে খাওনের কিছু আছিল না। এহন দুজনে পেট ভইরা ভাত খাইছি। সবই আল্লার ইচ্ছা।
ঠিকই কইছেন। হারা দিন টাকা টাকা করলে ঘরে সুখ আহে না।
ঠিক কইছ। তোমারে বিয়াকরণের সময় আমার শ্বশুর তোমার গলায় আর কানে পঞ্চাশ হাজার টাকার স্বর্ণ দিছে। ঘরের মালামাল দিছে। কত টাকা খরচা হইছে। সবই ত বেইচা নাওয়ের পিছনে দিছি। তোমারে স্বর্ণ ফিরাইয়া দিতে পারি নাই।
মাছ বেইচা টাকা অইলে কিন্না দিয়েন।
হ বউ, আমার ইচ্ছা আছে। তয় তুমি ঠিকই কইছ। মাইনষে মাছ ধইরা বেইচা বেইচা কত টাকার মালিক হইয়া যাইতাছে। আমার বেলায় এমন ক্যা?
এই কথা কইয়েন না। আল্লায় ভালা জানে। 
আমাগো ঘরে পোলা-মাইয়া আইব। আমরা বাপ-মা অমু। আমার যে কী খুশি লাগতাছে। 
আপনের মুখে না কিছু আটকায় না।
খারাপ কী কইলাম?
না, ভালাই কইছেন।
জানো বউ, আমি লেদাকালের তন দুঃখে দুঃখে মানুষ অইছি। শান্তি দেহি নাই। চাচার সংসারে বড় অইছি। আমারে ওরা কথায় কথায় মারছে। স্কুলে যাইতে পারি নাই। অনেক কষ্টে থ্রি পর্যন্ত পড়ছি। আমার ইচ্ছা আল্লায় আমারে পোলা দিলে ওরে আমি লেহাপড়া হিগামু।
মানুষ করুম। দেহো বউ, আমাগো বিছানায় চান্দের আলো ঝরতাছে। টিন ফুটা হইয়া গেছে। এইবার নদীত মাছ পাইলে বেইচা চালে নতুন টিন লাগামু।
হ, তাই কইরেন।
তোমার লাইগা একটা লাল শাড়ি আনুম। নতুন শাড়ি পইরা ঠোঁটে রং লাগাইবা। আমি দেহুম। সাজলে যে তোমারে কী সুন্দর লাগে। বিয়ার রাইতে তোমারে কী যে সুন্দর লাগছিল কইয়া বুঝাইতে পারুম না।
আপনের ভালা লাগলে আমি সাজুম। আপনে আমারে মন ভইরা দেখবেন।
হ, এহনই ত আনন্দ। বুকের লগে বুক লাগাইয়া দুজনে এক হইয়া যামু। ভাসতে থাকুম সুখের সাগরে।
আপনেরে এত সুন্দর সুন্দর কথা হিগাইছে ক্যাডা?
হিগান লাগে না। মনের মইধ্যে আগেই জমা আছিল। কইতে পারি নাই। আইজ মনডা ভালা। হের লাইগা তোমার লগে সুখ-দুখের আলাপ করতাছি।
জানেন, বিয়ার আগে আপনে যহন আমাগো বাড়ির পাশে দিয়া যাইতেন তহন আমি আপনেরে চাইয়া চাইয়া দেখতাম। আর মনে মনে কইতাম- আহা রে মানুষডা দেখতে কী সুন্দর! আমি যদি জীবনের লাইগা পাইতাম তারে। ঠিকই আল্লায় আপনেরে আমার লাইগা পাওয়াইয়া দিছে।
আমিও মণ্ডলের দোকানে বইয়া বইয়া যহন টিভি দেখতাম তহন মনে মনে ভাবতাম- আমার যদি সুন্দর একখান বউ হইত। তোমারে পাইয়া আমি খুশি। আমারে ছাইড়া যাইবা না, কও বউ?
যামু না। যামু না। হুনছি গরিবের মাইয়ারা স্বামী ছাইড়া যায় না। গরিবের সংসারে অনেক শান্তি।
ঠিকই কইছ। আমাগো টাকা না থাকতে পারে। সুখের অভাব নাই। আমরা রাইতে ঘুমাইয়া যেই শান্তি পাই, বড়লোকেরা হেই সুখ পায় না।
বউ তুমি আমার আরও কাছে আহো। আমার পরানের মইধ্যে তোমারে আদর কইরা রাহি। রাইতটা বড় সুখের লাগতাছে।
আমি আপনের পরানের মইধ্যে ডুইবা গেছি। আমারে সুখ দেন। সুখের সাগরে ডুইবা যাইতে চাই আমি।
কাসু মাঝি ও রহিমা সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যায় অনেক দূরে। ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে ঝিরঝিরে হাওয়া ঢোকে ঘরের ভেতর। তাদের অন্তরে ঢোকে জোছনাফুলের ঘ্রাণ।

একই ফিতায় মাপে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
একই ফিতায় মাপে

ডান-বুড়ো আঙুলের মাথা দিয়ে ঘষছে 
বাঁ-হাতের তালু,  একটু বেশি মন দিয়ে।
যেন অন্যদিকে তাকানোর 
ফুরসৎ মৃত বা মৃতপ্রায়। 
এ-অবস্থা অবলোকনের সঙ্গে সঙ্গে এক নেশাখোর ভাবছে, 
জিনিসটা বানানোর ওস্তাদির কাছে
আমার নতুন অভিজ্ঞতা হার মানবে- 
যা দিয়ে কল্কিতে মারলে টান 
পাখি হয়ে, ঘুড়ি হয়ে জুড়ি ধরে ঝিঙে মাচা ঘেঁষে 
ওড়া যাবে রোদ মেলে ধরা দ্বিপ্রহরে। 
কেউ তাকে ছুঁতেও পারবে না। 

লোকটির কাছাকাছি হয়ে জানতে চাইল,
এতক্ষণে যা করলেন, নিশ্চয়ই হয়েছে খাসা।
একটু দেবেন আমাকে?  
কী? স্পষ্ট করুন। 
হাতের তালুতে যা ঘঁষলেন-
দেখালেন, চুলকানির দাদ! 
যে যেমন, একই ফিতায় মাপে সে অন্যকেও প্রায়ই।

ছলনা

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৭ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
ছলনা

এই তো সকালে, ঠিক তোমাকেই ফাল্গুনের ফুল
মনে-মনে কত বার, শিহরণে, স্বপ্নের অধিক
বাস্তবতা ভেদ করে স্পর্শাতুর কবিতার নদী
স্তবকে-স্তবকে গেঁথে ভাসিয়েছি হৃদয়ের কূল।
অগ্নিস্পর্শে তুমি পূত৷ অভিভূত৷ মগ্ন দীপাধার।
তোমাতে প্রবেশ করি। নিমীলিত, অনুমতিহীন...
একটি কবিতা-কণা, এই ভাবে প্রায়-প্রতিদিন
স্মরণে-মননে এসে খুলে দেয় চৈতন্যের দ্বার।
ও বঁধুয়া, মধুমাস... আমি কি থাকিতে পারি স্থির!
দিকে-দিকে কৃষ্ণচূড়া, পলাশের লেলিহান শিখা...
পাতার আড়ালে কুহু, ভালোবাসা, যেন আলোলিকা
প্রেমের দুচোখে আজ এঁকে দিল যমুনার তীর।
ছলছল জল ডাকে। নদীবক্ষে কত-শত নায়...
আমি যে নিজেকে ভুলি- তোমারই সে মুগ্ধ-ছলনায়।

আয়না

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
আয়না

আয়নার সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাবতে ভাবতে
আরও কিছু ভাবলাম।
ভাবনার শাখা-প্রশাখায় গজাল পাতা, ফুটল ফুল
ফল।

বহু বাস জীবন
বাস করি, বসবাস করি একা অথবা একসাথে।
বাতাসের ভ্রুণের ভেতর, তোমার চিন্তার ভেতর-
বাস করি আগুনে, আয়নার অভ্যন্তরে।

আয়না আমাদের মা।