![মৃত প্রাণী খাওয়া হারাম কেন?](uploads/2023/10/22/1697941398.dead-deer.jpg)
যেসব খাদ্য ইসলামের দৃষ্টিতে খাওয়া বা গ্রহণ করা হারাম, তার প্রথমটি হলো—মৃত জন্তু বা প্রাণী। যে কোনো ধরনের মৃত জন্তু বা প্রাণী অথবা পশু-পাখি খাওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ। আর মৃত বলতে, শিকার করা, জবাই দেওয়া তথা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ৯২)
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জবেহ করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩)
পবিত্র কোরআনে আরও এরশাদ হেয়েছে, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কারও নামে জবেহ করা হয়েছে; গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু, অন্য প্রাণীর শিংয়ের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তুকে হিংস্র প্রাণী খেয়েছে (এগুলো খাওয়া হারাম); তবে যা তোমরা জবেহ করে নিয়েছ (তা বৈধ)। আর যা মূর্তিপূজার বেদিতে বলি দেওয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন করা হয়, এগুলো গুনাহ।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
মৃত জন্তু বা পশু নিষিদ্ধ বা হারাম হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে; সেগুলো হলো—
১. সুস্থ রুচিসম্পন্ন মানুষের কাছে মৃত জন্তু বা প্রাণী ঘৃণ্য ও অপছন্দনীয়। এজন্য প্রায় সব আসমানি গ্রন্থেই মৃত জন্তু বা পশুকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
২. ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। পশু বা প্রাণী জবাই করার ক্ষেত্রে ইসলামের নিয়ত অস্তিত্ব পাওয়া যায় কিন্তু মৃত পশু বা প্রাণীর ক্ষেত্রে নিয়তের বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় একে হারাম ঘোষণা করেছে ইসলাম।
৩. মৃত পশু বা জন্তুটির মৃত্যুর কারণ নানাবিধ হতে পারে। শঙ্কা থেকে যায়- মৃত জন্তু বা পশুটি মানুষের জন্য বিপজ্জনক বা ক্ষতিকর হতে পারে, তাই এটিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
৪. মৃত পশু বা জন্তু সাধারণত অন্য প্রাণী বা পশুর খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। মানুষ এটা খেয়ে ফেললে তারা খাবে কি? এই বিবেচনা থেকেও মৃত জন্তুকে মানুষের জন্য হারাম করা হতে পারে। (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ৯২)
মৃত জীবজন্তুর দেহে ক্ষতিকারক রোগজীবাণু থাকা স্বাভাবিক এবং ভক্ষণকারীর দেহে এসব রোগজীবাণুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অনেক মারাত্মক জীবাণু রয়েছে, মৃত্যুর পর তা প্রাণীর রক্ত মিশ্রিত হয়ে যায়। সুতরাং এসব জীবাণু মানুষের দেহে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মৃত প্রাণীর মাংস হজমে খুব বিঘ্ন ঘটে ফলে পাকস্থলীতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। যদি কোনও ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কোনও জীবজন্তু মারা যায়; তাহলে ওই প্রাণীর মাংস খেলে মানুষের মধ্যে মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।’ (লামাহাত মিনাত তিব্বিল ইসলামী, ড. হায়াত মুহাম্মাদ আলী খাফাজি, পৃষ্ঠা : ৫৮)
যখন কোনও প্রাণী মারা যায়, তখন তার শরীরে প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে যায়। ফলে ধ্বংসাত্মক ক্ষুদ্র জীবাণু শরীরের অভ্যন্তর থেকে শরীরের সর্বস্থলে ছড়িয়ে পরে; এমনকি রক্তেও মিশে যায় এবং অসংখ্য জীবাণুর জন্ম দেয়- যা মানুষের স্বাস্থ্যের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। (ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা : ৫৪-৫৫)
সুতরাং সামাজিক, মানবিক ও শারীরিক বিভিন্ন কারণ বিবেচনায় ইসলামে মৃত জীবজন্তু বা প্রাণী খাওয়াকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাদের দুই ধরনের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও টিড্ডি এবং দুই ধরনের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৯০)
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক