![‘হারাম’ খাদ্য গ্রহণ করা ‘হালাল’ হয় কখন?](uploads/2023/10/29/1698553900.halal-haram.jpg)
ইসলাম যেসব খাদ্য বা খাবারকে হারাম ঘোষণা করেছে, দুটি পরিস্থিতিতে সেসব খাদ্য বা খাবার গ্রহণ করা হালাল হয়। প্রথমত, হারাম খাদ্য বা খাবার বিশেষ পরিস্থিতিতে হালাল হয়। কী সেই বিশেষ পরিস্থিতি? আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘আর আল্লাহ সেসব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। তবে যদি তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও; তাহলে ভিন্ন কথা (সুরা আনআম, আয়াত : ১১৯) অর্থাৎ নিরুপায় হলে বিশেষ পরিস্থিতিতে হারাম খাদ্য বা খাবার ততটুকু পরিমাণ খাওয়া হালাল হবে; যতটুকু খেলে প্রাণে বাঁচা যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, নিরুপায় হওয়া বা বিশেষ পরিস্থিতি বলতে কী বোঝায়? কোন পরিস্থিতিকে বিশেষ পরিস্থিতি বলা হবে। অধিকাংশ ফকিহর মতে, ‘কারও কাছে যদি এক দিন ও এক রাত মানে ২৪ ঘণ্টা খাওয়ার মতো কিছু না থাকে; তাহলে সে হারাম খাদ্য বা খাবার খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারবে।’
ইমাম মালেক (রহ.) বলেছেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রয়োজন পরিমাণের সীমা হলো, তৃপ্তিসহ খাওয়া এবং হালাল বিকল্প পাওয়া পর্যন্ত হারাম খাবার সংরক্ষণ করে রাখা।’
কতক ফকিহ বলেছেন, ‘ক্ষুধা নিবারণের অতিরিক্ত হারাম কাবার গ্রহণ করা বৈধ নয়।’ (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ১০২)
বিশেষ পরিস্থিতির সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অতএব যে ব্যক্তি পাপ করার প্রবণতা ছাড়া (হারাম বস্তু খেতে) বাধ্য হয়, তাহলে (তার জন্য) আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
দ্বিতীয়ত, বিকল্প চিকিৎসা উপাদান না থাকলে নিষিদ্ধ বস্তুর ব্যবহার হালাল। এ ব্যাপারে ফকিহদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। এক দল ফকিহদের মতামত হলো, ‘চিকিৎসা খাদ্যের মতো অপরিহার্য কোনও বিষয় না। সুতরাং চিকিৎসার জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম বস্তুর ব্যবহার বৈধ নয়।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা হারাম জিনিসের মধ্যে তোমাদের আরোগ্য রাখেননি।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৩৯১; মুসনাদু আবি ইয়ালা, হাদিস : ৬৯৬৬)
আরেকদল ফকিহদের মতামত হলো, ‘চিকিৎসা গ্রহণ করার বিষয়টি খাদ্য গ্রহণ করার মতো অপরিহার্য বিষয়। সুতরাং চিকিৎসার জন্য হারামের বিকল্প কোনও উপাদান না পাওয়া গেলে, তার ব্যবহার বৈধ হবে।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) চর্মরোগ জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য আব্দুর রহমান ইবনে আউফ ও জুবায়ের ইবনুল আওয়ামকে (রা.) রেশমি কাপড় পরিধান করার অনুমতি দিয়েছিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৩৯; মুসলিম হাদিস : ২০৭৬)
ইসলাম ধর্মের প্রতিটি বিধান বা আইন-কানুন অথবা নিয়ম-নীতিতে মানুষের জীবনে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। সেই হিসাব মতে, দ্বিতীয় মতামতটি ইসলামের বিধানের মূলনীতির সঙ্গে অধিক জুতসই বা সমীচীন। তবে, নিষিদ্ধ বা হারাম বস্তুর বিশ্রণে তৈরি ওষুধ খাওয়া বা গ্রহণ করার বৈধতার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত অনুসরণ করতে হবে, তা হলো—
১. নিষিদ্ধ বা হারাম বস্তু দ্বারা তৈরি ওষুধ গ্রহণ করলে শারীরিক কোনও ক্ষতি সাধিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
২. কোনওভাবেই কোনও হালাল ওষুধ পাওয়া যাবে না বা কোনও হালাল ওষুধ নেই, পরিস্থিতি এমন হতে হবে।
৩. চিকিৎসাবিষয়ক অভিজ্ঞ এবং দ্বীনদার চিকিৎসকের পরামর্শে এমন পরিস্থিতিতে হারাম বা নিষিদ্ধ বস্তু দ্বারা তৈরি ওষুধ গ্রহণ করা বৈধ হবে। (হালাল-হারামের বিধান, ড. ইউসুফ আল-কারজাভি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুআদ, সমকালীন প্রকাশন, পৃষ্ঠা : ১০৪)
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক