![কোন কোন নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম, কতটুকু হারাম?](uploads/2023/11/08/1699404057.12.-alcohol-ok.jpg)
মাদক হলো নেশা উদ্রেককারী বস্তু, যা মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়, যার প্রভাবে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করে না। গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, ভাং, গুল, জর্দা, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মদ, ইয়াবাসহ সবই মাদকের অন্তর্ভুক্ত। যখন কেউ এসব দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখনই তাকে ‘মাদকাসক্ত’ বলা হয়।
মাদক সব অপরাধের আকর। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বহু অপরাধের জন্ম দেয় মাদকাসক্তি। যা মানুষের জীবন, পরিবার ও সভ্যতার ক্ষতি করে। সমাজ ও সম্পদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে। আল্লাহতায়ালা যেসব জিনিস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো মাদক।
ইসলামপূর্ব যুগে আরবরা মাদক গ্রহণে তীব্রভাবে আসক্ত ও অভ্যস্ত ছিল। মদের জন্য তারা শত শত নাম রেখেছিল। তাদের কবিতায় মদ, মদের পেয়ালা ও মদ্যপানের আসরের বর্ণনা স্থান করে নিয়েছিল বিপুলভাবে। ইসলাম এসে তাদের মাদক গ্রহণের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়েছে। (দৈনন্দিন জীবনে হালাল-হারাম, ড. ইউসুফ আল-কারযাবি, অনুবাদ : আসাদুল্লাহ ফুয়াদ, পৃষ্ঠা: ১৩৪)
মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া ও মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয়ক শরসমূহ তো শুধুই ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯০)
যা পান করলে নেশা তৈরি হয়, তা-ই নেশাজাতীয় দ্রব্য। নেশাজাতীয় দ্রব্যকে যে নামেই ডাকা হোক, যে লেবেলেই তাতে আঁটা হোক এবং যে উপাদান থেকেই তা তৈরি হোক—সব হারাম বা নিষিদ্ধ। এর ওপর ভিত্তি করে; যা কিছু পান বা সেবন করলে নেশা হয়—তাও হারাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক নেশা উদ্রেককারী দ্রব্যই মদ, আর সব ধরনের মদই হারাম।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০০৩)
বুদ্ধি-বিবেককে আচ্ছন্ন করে ফেলে, এমন দ্রব্যও খাওয়া নিষেধ। কারণ তা মদের অন্তর্ভুক্ত। উমর (রা.) একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের সামনে ঘোষণা করেছিলেন, ‘মদ হলো তা, বুদ্ধি-বিবেক আচ্ছন্ন করে ফেলে যা।’ (বুখারি, হাদিস: ৩০৩২)
বাজারে এমন অ্যালকোহল আছে, যা প্রচুর পরিমাণে খেলে নেশার সৃষ্টি হয়, অল্প খেলে হয় না। ইসলাম কম-বেশি পরিমাণের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেনি। প্রচুর পরিমাণে খেলে যা নেশার সৃষ্টি করে, তার অল্পকেও নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যা প্রচুর পানে নেশা হয়, তার সামান্যও হারাম।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৬৮১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে দ্রব্যের এক ফারাক (মশক) পরিমাণ (পানে) নেশা সৃষ্টি করে তার এক আজল পরিমাণও হারাম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮৬৬)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক