![ইসলামে ঘুষ হারাম](uploads/2024/02/22/1708595986.gush.jpg)
বর্তমান সমাজে ঘুষ একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুষ অত্যন্ত নিন্দনীয় অপরাধ—যা সমাজ, রাষ্ট্র ও গণজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়। ঘুষের কারণে আল্লাহর ওপর মানুষের নির্ভরতা ও বিশ্বাস হ্রাস পায়। ঘুষ অন্তরকে অপবিত্র করে, আত্মার মৃত্যু ঘটায় এবং আলোকিত হৃদয়কে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুষদাতা এবং গ্রহীতার ওপর অভিসম্পাত করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, ২৩১৩)
অন্যায় সুবিধা গ্রহণের জন্য যেকোনো ধরনের সুবিধা ও আর্থিক লেনদেনকেই ঘুষের অন্তর্ভুক্ত করে ইসলাম। তা যে নামেই প্রচলিত থাকুক না কেন। হাদিয়া, বখশিশ, উপরি আয়, অফিস খরচ, চা-নাশতার খরচ—যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ইসলামে তা ঘুষ হিসেবেই গণ্য হবে। ঘুষ আদান-প্রদানকারী জাহান্নামে যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঘুষ আদান-প্রদানকারী উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’ (তাবরানি) ঘুষ মানুষকে শয়তানের অনুগামী করে। ভালো-মন্দের অনুভূতি বিনষ্ট করে। ঈমান দুর্বল করে। ঘুষখোর অন্যায়ের পক্ষে কাজ করে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধনসম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না।’ (সুরা বাকারা, ১৮৮)
ঘুষখোর, ঘুষদাতা ও ঘুষের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অভিশপ্ত করেছে ইসলাম। ঘুষ খাওয়ার পরিণতি কঠিন ও ভয়ঙ্কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দেহের গোশত হারাম উপার্জনে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম ধনসম্পদে গঠিত ও লালিত-পালিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী।’ (মেশকাত, ২৭৭২) আল্লাহতায়ালা মানুষকে হালাল উপায়ে রোজগারের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ! জমিনের মধ্যে যা হালাল ও পবিত্র, তা থেকে ভক্ষণ করো।’ (সুরা আরাফ, ১৬৮)
হাদিয়া তথা উপহার-উপঢৌকন প্রদান করা ও গ্রহণ করা ইসলামের অন্যতম ঐতিহ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরের মধ্যে উপহার বিনিময় করবে, এতে করে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (হাদিস) ঘুষ ও হাদিয়ার মধ্যে পার্থক্য হলো, হাদিয়ায় আর্থিক কোনো লাভের উদ্দেশ্য থাকে না, কিন্তু ঘুষে আর্থিক লাভের আশা থাকে।
বিচার-আচারের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করে রায় প্রদান গর্হিত কাজ। বিচারের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণকারীর ওপর অভিসম্পাত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিচার-আচারের ক্ষেত্রে ঘুষ প্রদানকারী ও ঘুষ গ্রহণকারীকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, ৯০১১)
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, কিশোরগঞ্জ