![শবেবরাতে করণীয় ও বর্জনীয়](uploads/2024/02/24/1708831916.1.jpg)
পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে রিজিক সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। এখানে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো—
লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এর চেয়ে বড় সম্পর্ক মানুষের জীবনে আর নেই। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দোয়া। দোয়া গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দোয়া কবুলের জন্য কিছু আমল আছে। যথা—
হালাল উপার্জন
হালাল খাবার সংগ্রহ করা অন্যতম ইবাদত। খাবারের প্রভাব মানুষের আমল-ইবাদতে পড়ে। হালাল খাবার ইবাদতে আগ্রহ সৃষ্টি করে। হারাম খাবারের প্রভাবে মানুষের ইবাদতে অনাগ্রহতা তৈরি হয়। হালাল খাবার দোয়া কবুলের প্রধান শর্ত। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে জীবিকার রূপে যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দিয়েছি, তা থেকে (যা ইচ্ছা) খাও এবং আল্লাহর শুকর আদায় করো। যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাক।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন। সে আকাশের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হতে পারে?’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৯৮৯)
তাড়াহুড়া না করা
মানুষের দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। দোয়া করবার সময় তাড়াহুড়া করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩৪০)
আল্লাহর ওপর আস্থা নিয়ে দোয়া করা
আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দোয়া করতে; পূর্ণ আস্থা নিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই সে দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে দোয়া করো। জেনে রেখো, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)
দোয়ার বেশ কিছু আদব আছে। সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা সেই দোয়া কবুল করবেন। বিনয়ের সঙ্গে দুই হাত তুলে দোয়া করতে হবে। মিনতিভরা কণ্ঠে আল্লাহকে ডাকতে হবে।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর
তওবা শব্দের অর্থ ফিরা, ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি। পরিভাষায় তওবা বলা হয়, শরিয়তবহির্ভূত নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং আল্লাহর বিধানের ওপর অটল-অবিচল থাকা। আল্লাহতায়ালা তওবা করার আদেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, তোমারা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩১)
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো; খাঁটি তওবা।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে মানবজাতি, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭০৩৪)
শয়তান মানুষের আজন্ম শত্রু। সে সব সময় মানুষের পদস্খলন চায়। শয়তানের অভিনব প্রলোভনে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পা দিয়ে ফেলে অনেকেই। তাই বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, সবসময় তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
তওবা যেভাবে করতে হয়
মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তওবা হয়ে যাবে। শর্ত তিনটি হলো—
মানুষের হক বা অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে আরও একটি শর্ত যুক্ত হবে, তা হলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ করলেই তওবা শুদ্ধ হবে। অন্যথায় তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
তওবা জান্নাতপ্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের একটি বড় সুযোগ ও উপায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
লেখক: আলেম ও গবেষক
নানা কারণে অনেক সময় পেট ব্যথা হয়। পেট ব্যথা যে কারণেই হোক তা মানুষের জন্য মারাত্মক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কোনো কারণে যদি মানুষের পেট ব্যথা হয়, তবে তা থেকে মুক্ত থাকতে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশ বিভিন্ন দোয়া ও আমল করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রচুর দোয়া-আমল হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
পেট ব্যথার দোয়া
উসমান ইবনে আবুল আস (রা.) বলেন, ‘একবার তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে পেট ব্যথার কথা বলেন। উসমান (রা.) বলেন, ব্যথায় আমাকে অস্থির করে তুলেছে। নবিজি (সা.) বলেন, তুমি ব্যথার স্থানে সাতবার ডান হাত বুলিয়ে দাও এবং বলো,
أعوذُ باللهِ و قُدرتِه من شرِّ ما أَجِدُ و أُحاذِرُ
বাংলা উচ্চারণ: আউজু বিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।
বাংলা অর্থ: আল্লাহর মর্যাদা ও তার কুদরতের উসিলায় আমি যা অনুভব এবং ভোগ করছি, তা থেকে মুক্তি চাচ্ছি।
উসমান (রা.) বলেন, আমি এমন করার সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহ আমার কষ্ট দূর করে দেন। এরপর থেকে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও অন্যদেরকে এমন করার নির্দেশ দিই। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৫১)
লেখক : আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক
সালাম মুসলিম সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুসলিমরা একে অপরকে অভিবাদন জানায় সালামের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা ঘরে ঢুকবে নিজেদের লোকদের সালাম করবে, কারণ এটা সাক্ষাতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত বরকতপূর্ণ ও পবিত্র দোয়া।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৬১)
সালামের উত্তর কীভাবে দিতে হবে, তা শিখিয়ে দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমাদের কেউ সালাম দেয়, তখন তোমরা (তাকে) তদপেক্ষা উত্তমরূপে সালাম (জবাব) দাও, কিংবা (অন্ততপক্ষে) সে শব্দেই সালামের জবাব দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৮৬)
সালাম দেওয়া ইসলামের সৌন্দর্য। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম দেবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১২; মুসনাদে আহমাদ, ৬৭৬৫)
সালামের সম্পূর্ণ বাক্যটি হলো,
বাংলা উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
বাংলা অর্থ: আপনার ওপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।
কেউ আসসালামু আলাইকুম বললে, উত্তরে ওয়ালাইকুম আস ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলা উচিত। অর্থাৎ সালামদাতার চেয়ে উত্তরদাতা শব্দ বাড়িয়ে বলবেন। মনে রাখবেন, কেউ সালাম দিলে তাকে শুনিয়ে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।
যত কথা ও কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সালাম দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়।
উল্লেখ্য যে, ‘সালামুন আলাইকুম’, ‘সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’, ‘সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ’ ইত্যাদি বাক্য দ্বারাও সালাম দেওয়া জায়েজ আছে। এ বাক্য দ্বারা ফেরেশতারা জান্নাতবাসীদের সম্ভাষণ জানাবেন বলে কোরআনে একাধিক আয়াত রয়েছে। (সুরা জুমার, আয়াত: ৭৩; সুরা নাহল, আয়াত: ৩২)
লেখক: আলেম ও গবেষক