জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির বলতে হয়। একে তাকবিরে তাশরিক বলে। এ সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার বলা ওয়াজিব। তিনবার বললে সুন্নতের সওয়াব পাওয়া যায়। পুরুষরা উচ্চৈঃস্বরে এবং নারীরা নিচুস্বরে বলবে। (হেদায়া, ১/২৭৫)
ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের—সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। (দুররে মুখতার, ২/১৮০)
তাকবিরে তাশরিকের বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
তাকবিরে তাশরিকের বাংলা অর্থ
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোনো উপাসক নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য। (দারু কুতনি, ১৭৫৬)
যেভাবে এলো তাকবিরে তাশরিক
তখন ইবরাহিম (আ.) ছেলে ইসমাইল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য পরীক্ষা। তিনি এ পরীক্ষায় পাস করলেন। আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে একটি দুম্বা নিয়ে ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। জিবরাইল (আ.) ছুটলেন দুনিয়ার দিকে। জিবরাইল (আ.) আশঙ্কা করছিলেন, তিনি যেতে যেতেই ইবরাহিম (আ.) ছেলেকে জবাই করে বসবেন। তিনি আসমান থেকে আওয়াজ করে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।’ ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে তাকালেন। দেখলেন জিবরাইল আসছেন দুম্বা নিয়ে। তিনি আনন্দে আওয়াজে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ পিতার কণ্ঠে এ কথা শুনে ইসমাইল (আ.) উচ্চারণ করলেন, ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ তাদের এ কথা আল্লাহর পছন্দ হয়। তিনি মুসলিমদের জন্য এই বাক্যমালা আইয়ামে তাশরিকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়াকে আবশ্যক করে দেন। এটি পড়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ২/১৭৮, ইনায়া শরহুল হিদায়া, ১/৪৬৪)
তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ২৮)। বিখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়...। ’ (বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক