কোন পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে
গৃহপালিত সব ধরনের পশু তথা—ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ এবং উট দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু (যেমন—হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি) দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। তেমনিভাবে হাঁস-মুরগি বা কোনো পাখি দিয়েও কোরবানি জায়েজ নয়। যে পশু কোরবানি করা হবে, তার ওপর কোরবানিদাতার পূর্ণ মালিকানা থাকতে হবে। বন্ধকি পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দিয়ে কোরবানি আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২০৫)
কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে
গরু ও মহিষের দুই বছর এবং উটের পাঁচ বছর পূর্ণ হলে কোরবানি করা জায়েজ। ছাগল, দুম্বা ও ভেড়া এক বছর পূর্ণ হতে হবে। দুম্বা ও ভেড়া যদি এক বছর পূর্ণ না হয়, তবে স্বাস্থ্যগতভাবে এক বছরের বাচ্চার মতো মনে হয়, তা হলে এমন দুম্বা ও ভেড়া দিয়েও কোরবানি করা জায়েজ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কোরবানি এবং হজ-ওমরার পশুর ক্ষেত্রে উটের মাঝে পাঁচ বছর বয়স অতিক্রমকারী, গরু-মহিষের ক্ষেত্রে দুই বছর অতিক্রমকারী এবং বকরি ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছর অতিক্রমকারী পশুর কথা বলতেন। (মুয়াত্তায়ে মালেক, ৭৫৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মুসিন্নাহ ছাড়া জবাই করো না। (মুসিন্নাহ হলো পাঁচ বছর বয়সী উট, দুই বছরের গরু ও ছাগলের ক্ষেত্রে এক বছর)। যদি সম্ভব না হয়, তা হলে ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা।’ (মুসলিম, ১৯৬৩)
কোরবানির পশুর নর-মাদা হওয়ার শর্ত আছে কি
যেসব পশু কোরবানি জায়েজ, সেগুলোর নর-মাদা কোরবানি করা যায়। (ফতোয়ায়ে কাজিখান, ৩/৩৪৮)
খাসিকৃত পশু দিয়ে কোরবানি করা যাবে
খাসিকৃত পশু দিয়ে কোরবানি করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরবানির ইচ্ছে করতেন, তখন দুটি বড় মোটা তাজা শিং ও সুন্দর রঙবিশিষ্ট মেষ কিনতেন। (ইবনে মাজাহ, ৩১১৩)। আবু রাফে (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি মোটা তাজা খাসিকৃত ভেড়া কোরবানি করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, ২৬৬৪৯)
গর্ভবতী পশু কোরবানি করা যাবে কি
গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরুহ। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়, তা হলে সেটাও জবাই করতে হবে এবং কেউ চাইলে এর গোশতও খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে কাজিখান, ৩/৩৫০)
বন্ধ্যা ও পাগল পশু দিয়ে কোরবানি হবে
বন্ধ্যা পশুর কোরবানি জায়েজ। (রদ্দুল মুহতার, ৬/৩২৫)। হাসান (রা.) বলেন, ‘পাগল পশুর কোরবানি জায়েজ। তবে যদি এমন পাগল হয়, যে ঘাস-পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না, তা হলে তার কোরবানি জায়েজ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে, ৪/২১৬)
যে পশুর জন্মগত শিং নেই বা ভাঙা
যে পশুর জন্মগত শিং নেই বা মাঝখানে ভেঙে গেছে, তা দিয়েও কোরবানি জায়েজ। আলি (রা.) বলেন, ‘একটি গাভী সাতজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যায়।’ (বর্ণনাকারী বলেন) বললাম, ‘যদি গাভী বাচ্চা দেয়, তা হলে কী করব?’ বললেন, ‘বাচ্চাকেও গাভীর সঙ্গে জবাই করে দাও।’ বললাম, ‘খোঁড়া পশু!’ বললেন, ‘যদি কোরবানির স্থানে হেঁটে যেতে পারে, তা হলে কোরবানি করবে।’ বললাম, ‘শিংভাঙা পশু!’ বললেন, ‘এমন পশু দিয়ে কোরবানি করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির পশুর চোখ-কান ভালোভাবে দেখে নেওয়ার আদেশ করেছেন।’ (তিরমিজি, ১৪২৩)
লেখক: খতিব, বনানী মসজিদ আত-তাকওয়া