![চাল আলু চড়া, কমেছে পেঁয়াজের দাম](uploads/2024/03/20/1710913996.cal.jpg)
সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি কমায় মিলমালিকরা রোজার মাসে প্রতিবস্তা চালে ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়েছেন। তার প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে মিনিকেট ৭০ টাকা, ২৮ চাল ৬০ টাকা ও মোটা গুটিস্বর্ণা ৫৬ টাকা কেজি হয়েছে। দাম বাড়লেও বেচা-বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। রাজশাহীতে ৩০ টাকা কেজি আলু বিক্রি হলেও রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ক্রেতাদের ৪০ টাকা কেজি গুনতে হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ২০-৩০ টাকা কমে পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। তবে পাইকারিতে আরও কমে ৪০-৪৭ টাকা হয়েছে। বেগুনের দাম অর্ধেকে নেমে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানা গেছে।
হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? জানতে চাইলে রাজধানীর কৃষিপণ্যের বাজার কৃষিমার্কেটের শাপলা রাইস এজেন্সির মাঈনুদ্দিনসহ অন্য পাইকারি বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ভরা মৌসুমে মিলমালিকরা চালের দাম ৫-৬ টাকা বাড়িয়ে দেন। সরকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে নামলে ২-৩ টাকা কমেছিল। কিন্তু রমজান মাসে সেই অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। সেই সুযোগে রশিদ, সাগর কোম্পানি বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়েছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে কম দামে বিক্রি করলেও এখন মিনিকেট ৬৫-৬৮ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫১-৫৩ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা ও গুটিস্বর্ণা ৪৭ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
সেই চালই একটু দূরের খুচরা বাজারসহ অন্য বাজারে কেজিতে ৪-৫ টাকা বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারের অহিদুল রাইস স্টোরের অহিদুল বলেন, অন্য জিনিসের মতো রমজান মাসেও চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। তাই মিনিকেট ৭০ টাকা, ২৮ চাল ৫৫ টাকা, পাইজাম ৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। দাম বাড়লেও কিন্তু বেচাকেনা কম। কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সি, কুমিল্লা রাইস এজেন্সিসহ অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারাও বলছেন, কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়েছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাড়া-মহল্লাতেও বেড়েছে দাম।
খুচরা ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলে বাড়ছে চালের দাম। তাই বাংলাদেশ অটো রাইস মিল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই চালের দামও বাড়ছে। কারণ চাল বিক্রি করেই তো অন্য জিনিস কিনতে হয়। আমন ধানের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে, এ জন্য দাম বাড়ছে। যারা নতুন করে ধান কিনবে তাদের মিলে চালের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু রশিদ, সাগর তো হঠাৎ করে ধান কিনছে না। তাহলে তারা এভাবে দাম বাড়াচ্ছে কেন? এটা সরকারকে দেখা দরকার। কেউ অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা গ্রেপ্তার করা হলে অন্যরা হঠাৎ করে চালের দাম বাড়াবে না। ভোক্তাদেরও বেশি দামে কিনতে হবে না।
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আলুর দামও কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ভাণ্ডারের সবুজ খবরের কাগজকে বলেন, খেত থেকে বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে কৃষকরা আলু জমা করছেন। এ জন্য বাজারে দাম বাড়ছে। কয়েক দিন আগে কম দাম থাকলেও গতকাল রাজশাহীর বিভিন্ন খেতেই ৩০ টাকা কেজি আলু। সেই আলু আমাদের ৩৩ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে পাইকারিতে বাড়তে থাকায় খুচরা বাজারে বেশি দাম বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা হালিমসহ অন্যরা বলেন, সপ্তাহখানেক আগে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও বর্তমানে সেই দামে কেনা নেই। বেশি দামে কেনার কারণে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে একই চিত্র। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নতুন আলু উঠলেও বেশি দামে কেনার কারণে কম দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
রমজানে বেগুনের দাম হঠাৎ করে অস্থির হয়ে যায়। ৮০-১২০ টাকা কেজি বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেন। গতকাল টাউনহল বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দেখা যায় লম্বা ও গোল বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজি। দামের ব্যাপারে সবজি বিক্রেতা জাহিদ বলেন, আগে বেশি দাম ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে অর্ধেকে নেমে গেছে। তা ৫০-৬০ টাকা কেজি। অন্য বাজারেও কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
এদিকে রমজানের আগে শসার বাজারে আগুন লাগে। বিভিন্ন বাজারে ১০০-১৪০ টাকা কেজি ক্রেতাদের কিনতে হয়। তবে সারা দেশে ব্যাপকভাবে সরবরাহ থাকায় ৮ রমজানেই কমতে শুরু করেছে দাম। গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা যায়। লেবুর দামও কমতে শুরু করেছে। আগে ৫০-৬০ টাকা হালি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৩০-৪০ টাকায় নেমে আসে। সবজি বিক্রেতা কালু বলেন, চাহিদা কমে গেছে। তাই দামও কমছে। আগে বেশি দামে বিক্রি করলেও বর্তমানে যেকোনো বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা কেজি ও লেবুর হালি ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন শপিংমলেও রোজার পণ্য কম দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। টাউনহল বাজারের স্বপ্ন আউটলেটে এক বিক্রমকর্মী জানান, আগের চেয়ে দাম কম। এখন বেগুন ৫৫ টাকা, আলু ৩৮ টাকা, পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, শসা ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সামনে আরও কমতে পারে বলে জানান তিনি।