![দুই বছরেও বিশেষ স্মার্টকার্ড পাননি অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা](uploads/2024/03/26/1711435556.smartcard.jpg)
সরকার ২০২১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট সনদ ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রায় সব মুক্তিযোদ্ধাই স্মার্ট সনদ পেয়েছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা বিশেষ স্মার্টকার্ড পাননি অধিকাংশ জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় দেড় বছর বন্ধ ছিল ওই কার্যক্রম। তৎকালীন রকিবউদ্দিন কমিশনের ১ লাখ ৮৩ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিশেষ স্মার্টকার্ড দেওয়ার উদ্যোগে আপত্তি জানায় মন্ত্রণালয়।
গত বছরের শেষদিকে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ওই কাজটি আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। নভেম্বরে মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পুনরায় গতিশীল হয় ওই কার্যক্রম। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিনই আসছে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন। এ পর্যন্ত বিশেষ স্মার্টকার্ডের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় এক হাজার।
এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করতে মর্যাদাপূর্ণ ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্টকার্ড প্রায় ১০০ জন জীবিত মুক্তিযোদ্ধার হাতে তুলে দেয় তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার কমিশন। এর আগে বিশেষ এই স্মার্ট কার্ডের নকশা তৈরি করতে সাত সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশ ও পরামর্শ অনুযায়ী কার্ডের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বর্তমান স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের অবয়ব ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত রেখে চিপের ঠিক নিচে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দ দুটি থাকছে।
কার্যক্রমের ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে গত বছরের শেষদিকে কাজটি করতে আমরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাই। এরপর তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে আবার আবেদন নেওয়া শুরু করে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন আসছে। বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। যাচাই-বাছাই শেষে এ পর্যন্ত চূড়ান্ত হওয়া ২শটি স্মার্ট আইডি কার্ড প্রিন্ট করা হয়েছে। এসব কার্ড হস্তান্তরে ইসির পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে কিনা- সে বিষয়টি এখনো ইসির পরিকল্পনাধীন। ঈদের পর কমিশন সভায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
প্রথমদিকে ইসিতে আসা আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই/ভেটিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতো। তারপর সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা ইসিতে ফেরত এলে তাদের কার্ড চূড়ান্ত করা হতো। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনগুলো ভেটিংয়ের জন্য না পাঠিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য ও নির্দেশনা অনুসরণ করে ইসিকে চিঠি দিয়ে কার্যক্রমটি পরিচালনা করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ে স্বীকৃতি পাওয়া মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত প্রায় সব মুক্তিযোদ্ধাকে এরই মধ্যে স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নানা জটিলতায় এখনো যাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় আসেনি তাদের মধ্য থেকে সংক্ষুব্ধ আপিলকারী মুক্তিযোদ্ধারা এ প্রক্রিয়ার বাইরে আছেন। সেসব আপিল আবেদনের শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাদের আবেদন বৈধতা পাবে তাদের পরে স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের গেজেটে প্রকাশিত তালিকায় থাকা সব জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে পর্যায়ক্রমে এই বিশেষ স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। ইসির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্মার্টকার্ডের নকশায় পরিবর্তন না করাসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বোঝাপড়া শেষে কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গত ২০২২ সালের জুলাইয়ে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১৭ জেলার ২৪ হাজার ৭৬১ জন ‘মুক্তিযোদ্ধা স্মার্ট আইডি কার্ড’ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ‘ডিজিটাল সার্টিফিকেট’ পাবেন ৪৬ হাজার ৮০৩ জন মুক্তিযোদ্ধা। রকিবুদ্দিন কমিশন জানিয়েছিল, মন্ত্রণালয়ের গেজেটে প্রকাশিত সবশেষ সমন্বিত তালিকা অনুযায়ী ১ লাখ ৮৩ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পর্যায়ক্রমে বিশেষ এই স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই স্মার্টকার্ড পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য অত্যন্ত মর্যাদার। এটি সঙ্গে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের পরিচয় দিতে আর কোনো বেগ পেতে হবে না। আইডি কার্ড দেখালেই হবে। তারা সরকারি রেল ও বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে পাবেন ফ্রি যাতায়াতের সুবিধা। যেকোনো সরকারি হাসপাতালে পাবেন বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা। তার মধ্যে থাকবে- সব ধরনের ডাক্তারি সেবা, শল্যচিকিৎসা, ওষুধ ক্রয় ও সরবরাহ, বেডভাড়া, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ এবং সেবিকার সেবা। তাদের জন্য রাজধানীর নামিদামি ১৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এসব সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এজন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসাসেবা প্রদান নীতিমালা’ নামে একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা আরও জানান, গত ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মার্টকার্ডের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের কার্ডগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে আবেদন পাঠানোর পাশাপাশি অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই স্মার্টকার্ড পেতে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে ইসিতে আবেদন করছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেখান থেকে এ পর্যন্ত ৩শ’ মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ স্মার্টকার্ডের আবেদন স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি থাকা অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদন সংগ্রহের কাজ চলমান।
ইসির আইডিইএ-২ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকায় থাকা জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা সংবলিত বিশেষ স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে এই স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে।