![এনবিআরের প্রস্তাব আটকে গেল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে](uploads/2024/05/25/NBR-1716620522.jpg)
আগামী অর্থবছরের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে (আইসিটি) রাজস্ব সুবিধা বাতিল হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে এ খাতের বিকাশে সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী অর্থবছরেই আইসিটি খাতের সব রাজস্ব সুবিধা প্রত্যাহারের জোরালো সুপারিশ করেছে। আইএমএফের সুপারিশ আমলে এনে এনবিআরও এ খাতে রাজস্ব সুবিধা প্রত্যাহারের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উল্লেখ করে সারসংক্ষেপ তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
এনবিআর থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়, ‘২০১১ সাল থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি দেওয়া আছে। কর অব্যাহতি সুবিধা নতুনভাবে না বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের ওপর কম হারে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর অব্যাহতির পাশাপাশি আইটি খাতে অন্যান্য শুল্ক, করেও ছাড় দেওয়া হয়েছে; যা বাতিলের প্রস্তাব করছি।’
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়নি। একজন উপদেষ্টা আগামী অর্থবছরেই এ সুবিধা বাতিল না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপদেষ্টার কাছে কেন সুবিধা বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে বলেন, ‘আমরা তো চিরকালের জন্য কর অব্যাহতি দিতে পারি না।’ আইসিটি খাতে রাজস্ব সুবিধা বাতিল করা হলে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের ওপর কী প্রভাব পড়বে তার হিসাব দিতে বলেন সরকারপ্রধান। আইসিটি খাতে রাজস্ব সুবিধা বহাল রাখার ফলে আগামী এক অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি কীভাবে উপকৃত হবে, তা নিয়ে প্রতিবেদনও দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রতিবেদন খতিয়ে দেখে এবং আরও তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে প্রধানমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে আইসিটি খাতের সব রাজস্ব সুবিধা প্রত্যাহার না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বার্থে আগামী অর্থবছর আইসিটি খাতে বর্তমানে যেসব রাজস্ব সুবিধা রয়েছে তা বহাল রাখার সুপারিশ করছি। আগামী বাজেটে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে এ খাতে কতদিন পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া হবে। আইসিটি খাতে আরও পাঁচ থেকে সাত অর্থবছর কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হলে তা বিবেচনায় রেখে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হলে আইসিটি খাত দ্রুত বিকাশ হবে। কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি এ খাতের বিকাশে নীতি-সহায়তাও জরুরি। আমরা দেখছি, সুনির্দিষ্ট ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দেশের অনেক শিল্প খাতে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে এসব খাতের সম্ভাবনাও পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এরই মধ্যে দেশে ২ হাজার ৫০০ আইটি সার্ভিস প্রোভাইডার ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে কাজ করছে। এখানে প্রায় তিন লাখ কর্মসংস্থান হয়েছে। সময়োপযোগী নীতি-সহায়তা দেওয়া হলে তার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাবে আগামী দুই অর্থবছরে সরাসরি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত খাতে নতুনভাবে ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে এবং রপ্তানি আয় ২০২৯ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে নিতে হলে বিগ ডেটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি, ব্লকচেইন ও রোবোটিকসের মতো সম্ভাবনাময় অতি আধুনিক প্রযুক্তি খাতে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। স্টার্টআপ, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সির মতো বিষয়গুলোতে তরুণদের উৎসাহ দিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আইসিটি খাতে দক্ষ অংশগ্রহণকারী বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। আইসিটি খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হলে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বাড়বে।’
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে কর অব্যাহতি সুবিধার আওতায় রয়েছে সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, গ্রাফিক্স ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস) ও আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস। এই সুবিধার আওতায় আরও রয়েছে সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং অ্যান্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং।
আইসিটি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এনবিআরের হিসাবের সঙ্গে একমত না। এনবিআরের মতে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ হয়। এ খাত থেকে রাজস্ব আসা উচিত ৫০ হাজার কোটি টাকা। আমাদের সংগঠনের হিসাবে এই খাতের মোট টার্নওভার ২ হাজার কোটি টাকা। তাহলে কীভাবে এত বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় হবে? হিসাবের এই অসামঞ্জস্যতা দূর করা সম্ভব হলে আইএমএফ থেকেও কর অব্যাহতি তুলে নিতে জোর দেবে না। কর অব্যাহতি তুলে নিলে আইসিটি খাতে খরচ বাড়বে। এই খাতের সম্ভাবনা বিবেচনা করে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতির দাবি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইসিটি খাতে এখনই ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হলে সাধারণ মানুষকে আইসিটি খাতের সেবা নিতে হলে বেশি খরচ করতে হবে। কম্পিউটার চালাতে, ইন্টারনেট ব্যবহারে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, অফিসের কাজ, সর্বক্ষেত্রেই খরচ বাড়বে।’