![ইভিএম প্রকল্প: শেষ পর্যায়ে মেয়াদ বাড়াতে ইসির তোড়জোড়](uploads/2024/06/15/electioncomission-1718429499.jpg)
দূরদর্শিতার অভাবে যখন ভেস্তে যাওয়ার পথে ইভিএম প্রকল্প, ঠিক সেই সময়েই প্রকল্পটির আয়ু অন্তত এক বছর বাড়ানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলমান ইভিএম প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে চলতি জুন মাসেই। এই প্রকল্পে সরকার নতুন বরাদ্দ না দিলেও অবশিষ্ট ১১৬ কোটি টাকা এবং সচল ইভিএমগুলো নিয়েই আপাতত কার্যক্রম চালিয়ে নিতে নতুন পরিকল্পনা করেছে ইসি। তার পরও শেষ রক্ষা হবে কি না, তা নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কমিশন বৈঠক শেষে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ার চিঠিটি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পে ব্যয় না বাড়িয়ে অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অবশিষ্ট ১১৬ কেটি টাকা দ্রুত ছাড় পেতে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে অকেজো অবস্থায় থাকা ইভিএমগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুক্রবার (১৪ জুন) কমিশন সভা শেষে প্রকল্পটির মেয়াদ অন্তত এক বছর বাড়ানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। তবে ইসির এই উদ্যোগ আরও কিছুদিন অন্তত দুই মাস আগে নিতে পারলে আরও ভালো হতো। চলতি মাসের বাকি আছে আর মাত্র ১৬ দিন। প্রকল্পের মেয়াদ শুধু বাড়ানোর অনুমতির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান পেলে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না। সচল ৪৫ হাজার ইভিএম দিয়ে উপজেলা নির্বাচনের মতো আগামীতে স্থানীয় সরকারের বাকি নির্বাচনগুলো চালিয়ে নেওয়া যাবে।'
অকেজো ১ লাখ ৫ হাজার ইভিএমও মেরামতযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্ভব হলে সেগুলোকে মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় এই প্রকল্পে সরকার বরাদ্দ দেয় ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। ১০ বছর মেয়াদি প্রকল্পে কেনা সেই ইভিএমগুলো অব্যবস্থাপনা আর অযত্নের কারণে তিন বছর পরই অকেজো হতে শুরু করে। ইসির সংরক্ষণে থাকা বেশির ভাগ (১ লাখ ৫ হাজার) ইভিএম বর্তমানে অকেজো হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। বাকি ৪৫ হাজার ইভিএম ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়। পাঁচ বছরের মাথায় প্রকল্পের কার্যক্রমই বন্ধ হওয়ার পথে।
প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি বলেই ১ লাখ ৫ হাজার ইভিএম নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ এসব ইভিএমের কার্যকালের মেয়াদ ছিল ১০ বছর। জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনায় সরকারের অনুমতি না মিললে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালের প্রকল্পের অর্থছাড়ের আগেই তড়িঘড়ি করে উন্নত মানের ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেন কে এম নূরুল হুদা। প্রাথমিকভাবে ৮০ হাজার ইভিএম কেনে সেই কমিশন। ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ইভিএমের বিরোধিতা করলেও পিছু হটেনি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। এ জন্য নেওয়া হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। সিদ্ধান্ত হয় ২ লাখ ২০ হাজার ইভিএম কেনার।
বিগত কমিশনের পরিকল্পনা ছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধাপে ধাপে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে কেনা হয়। প্রতিটি মেশিনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো, যার দাম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এত দামি মেশিন কোথায় রাখা হবে, তার জন্য প্রকল্পে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
ইভিএম মেশিন একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান স্টোররুমে এই ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে ইভিএমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার কথা জানিয়েছিলেন বর্তমান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ জন্য নতুন করে নেওয়া হয় ৯ হাজার কোটি টাকার দ্বিতীয় ইভিএম প্রকল্প। কিন্তু সরকারের আর্থিক সংকটের কারণে সেই প্রকল্প স্থগিত করা হয়। ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।