![সাঈদ আনোয়ারের কাব্যগাথা ভেন্যুতে পাকিস্তানের শোক](uploads/2023/10/25/1698213061.Pak-Chennai-Niloy.jpg)
চেন্নাইয়ের চিপকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেই সামনে চলে আসে সাঈদ আনোয়ার ও পাকিস্তানের নাম। সাঈদ আনোয়ারের সেই ১৯৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের কথা। ১৯৯৭ সালের ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের সেই ম্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীরা ভুলে যাবে, এমনটা হওয়ার নয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ভক্তদের তো মোটেই নয়। একে তো ঐতিহাসিক এক ইনিংস, তার ওপর আবার প্রতিপক্ষ ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। ম্যাচে পাকিস্তান জয়ও পেয়েছিল ৩৫ রানে।
ক্রিকেট হরহামেশা আইন বদল হয়। এসব আইন অধিকাংশই ব্যাটারদের পক্ষে যায়। যে কারণে এখনকার ক্রিকেট ২০০ রান করা ব্যাটারের অভাব নেই। শচীন টেন্ডুলকারের হাত ধরে সূচনা হয় এই ক্লাবের। যার সংখ্যা এখন ১০। কিন্তু সাঈদ আনোয়াররা যখন খেলতেন, তখন দ্বিশত রান করার কথা কেউ ভাবতেনই না। সে সময় তার ব্যাট থেকে এসেছিল এই ১৯৪ রানের ইনিংস।
এই জয় আফগানদের জন্য বিশেষ কিছু। কারণ এটি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়। আগের সাত ম্যাচেই ছিল হার। চেন্নাইয়ের যে স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের শোকগাথা রচিত হয়েছে, সেই স্টেডিয়ামেই শুধু সাঈদ আনোয়ারের সুখগাথা নয়, দল হিসেবেও রয়েছে সাফল্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে পাকিস্তান দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই পেয়েছিল জয়। এই দুটি ম্যাচই ছিল আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে।
পূর্বসূরিদের জন্য আশীর্বাদের চেন্নাই আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে রাতারাতি অভিশপ্ত এক ভেন্যুতে পরিণত হয়েছে বাবর আজমদের কাছে। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য এই পরাজয় কেমন? অপ্রত্যাশিত এই পরাজয়ে পোস্ট ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে বাবর আজমের কাঁপা কাঁপা গলার স্বর প্রমাণ করেছে কতটা ভেঙে পড়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের এমন হারে খোদ ওয়াসিম আকরামই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই পরাজয় লজ্জাজনক আর খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছে প্রতিদিন খাসির মাংস গরগর করে গিলছে।’
ক্ষুব্ধ না হয়ে তো উপায় নেই। সুখস্মৃতির চেন্নাই ভেন্যুতে এই পরাজয় পাকিস্তান সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না। ১৯৯৭ সালের সেই ম্যাচে সাঈদ আনোয়ার একাই খেলেছিলেন ১৪৬ বলে ১৯৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। ২৬ বছর আগের ১৩২ স্ট্রাইকরেটের সেই ইনিংসে ছিল পুরোদস্তু আধুনিক ক্রিকেটের ছোঁয়া। সবার চোখ কপাল স্পর্শ করতে বাধ্য হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট উত্থানের ৭ বছর আগে সাঈদ আনোয়ারের সেই বিধ্বংসী ইনিংসে।
ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করা আনোয়ারের ইনিংসে সেদিন ৫ ছয়ের পাশাপাশি ছিল ২২টি চারের মার। ৩২৭ রানের বিশাল সংগ্রহে পাকিস্তান জয়লাভ করে ৩৫ রানে।
২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআইতে শচীন প্রথম ২০০ রান করে প্রথমবারের মতো টপকে যান সাঈদ আনোয়ার ও চার্লস কভেন্ট্রিকে। এর আগে এ দুজনের নামের পাশেই ছিল ওডিআইতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ড। চার্লস কভেন্ট্রি ২০০৯ সালে এ রেকর্ডে ভাগ বসানোর আগে ১০ বছর এই রেকর্ডের একচ্ছত্র মালিক ছিলেন সাঈদ আনোয়ার।
বছর দশেক আগে অচলায়তন ভেঙে ভারত-পাকিস্তান সবশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজের প্রথম ওডিআইটিও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এখানে। সে ম্যাচে নাসির জামশেদের ১০১ রানের ইনিংসে তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। আফগান ম্যাচের আগে চেন্নাইতে খেলা শেষ দুই ম্যাচেই জয়ের হার শতভাগই ছিল পাকিস্তানের।
এই চেন্নাইতে দুই জয়ের সুখস্মৃতির পর আকস্মিক এই ধাক্কা। আবার এই স্মৃতি তারা ভুলে যেতে পারবে যদি একই ভেন্যুতে ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের দেখা পায়।