![বিশ্বকাপ মানেই ‘বিবর্ণ’ অধিনায়ক!](uploads/2023/11/02/1698916140.Captains.jpg)
শুধু ক্রিকেটেই অধিনায়ক কিংবা নেতার যতটা দাপট রয়েছে, তা দুনিয়ার আর কোনো খেলাতেই নেই। কথাটা ১৯৯২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান তার লেখা আত্মজীবনী ‘পাকিস্তান: আমার ইতিহাস’ বইয়ে লিখেছিলেন। যে নেতৃত্ব বড় টুর্নামেন্ট জিততে রাখে মুখ্য ভূমিকা। ইমরানকে অবসর ভেঙে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুরোধে। সে বিশ্বকাপে মাঠের ক্রিকেটে পাকিস্তানকে শিরোপা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাটে-বলে আর নেতৃত্বে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছিলেন অধিনায়ক ইমরান খান। ৩১ গড়ে ৬ ইনিংসে করেন ১৮৫ রান, সঙ্গে উইকেট শিকার করেন ৭টি।
ভালো ছাত্র যেমন ভালো শিক্ষক হতে পারেন না, তেমনি ভালো ক্রিকেটারও ভালো অধিনায়ক হতে পারেন না। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন জগৎসেরা দুই ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারা। অধিনায়ক হিসেবে সফল হতে না পেরে তারা নিজ ইচ্ছায় নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। অধিনায়ক পারফর্ম করতে না পারলে যেকোনো দলেরই বিশ্বকাপের পথ হয়ে যায় বন্ধুর। যে অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ দলের। ১৯৯৯ থেকে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া শুরু বাংলাদেশের। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আসরে কোনো অধিনায়কই ব্যাটে-বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি।
১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। গ্রুপ পর্বে ঙ্কটল্যান্ড ও শেষ ম্যাচে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাসের জন্ম দিলেও পুরো বিশ্বকাপেই অধিনায়ক বুলবুল ছিলেন নিষ্প্রভ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গোল্ডেন ডাকসহ ৫ ম্যাচে ৯ গড়ে মাত্র ৪৫ রান করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ অধিনায়ক।
দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বাভার ছিল খালেদ মাসুদ পাইলটের কাঁধে। ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে ব্যাটিং করে ২০ গড়ে সর্বসাকুল্যে ৯৯ রান করেছিলেন পাইলট। ২০০৩ সালের সে বিশ্বকাপে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হারতে হয়েছিল কানাডার বিপক্ষেও।
২০০৭ বিশ্বকাপের আসর ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে স্মৃতিমধুর। গ্রুপ পর্বে ভারত ও বারমুডাকে হারিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় টাইগাররা। সুপার এইটে জয় আসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওয়ানেডতে সেটি ছিল আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। শক্তি ও সামর্থ্যের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ সেবার প্রশংসিত হলেও দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ৯ ম্যাচের মধ্যে ৮ ইনিংস ব্যাট করে মাত্র ১০৫ রান করেছিলেন। গড় ছিল মাত্র ১৩।
শুধু দুটি করে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০১১ বিশ্বকাপ ছাড়াও চলমান ২০২৩ বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
২০১১-তে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। তাই দলের কাছে সমর্থকদের আশা ছিল অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখার। সেটি তো সম্ভব হয়নি, উল্টো উইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ৫৮ ও ৭৮ রানে অলআউটের লজ্জায় ডোবে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একটি অর্ধশতকে সর্বমোট ১৪২ রান করেছিলেন ২৪ গড়ে আর উইকেট নিয়েছিলেন ৭টি। আগের অধিনায়কদের পারফরম্যান্স বিবেচনায় সাকিবের এই পারফরম্যান্স ছিল মন্দের ভালো।
বছরজুড়ে আশার ফানুস উড়ানো চলতি বিশ্বকাপে সাকিব ও তার দলের পারফরম্যান্স সবারই মুখস্থ। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে মাত্র একটি জয়। অধিনায়ক সাকিবের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সও নিম্নমুখী। ৬ ম্যাচে ৬ ইনিংসে করেছেন মোটে ১০৪ রান, যেখানে ব্যাটিং গড় ১৭। উইকেট পেয়েছেন ৭টি। সাকিব নেতৃত্বেও ছিলেন একেবারে গড়পড়তা। ব্যর্থ অধিনায়ক সাকিব আবার ২০২৩ বিশ্বকাপকে নিজেদের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা নৈপুণ্য ছিল ২০১৫ সালের আসরে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল। অধিনায়ক হিসেবে ছিল মাশরাফির প্রথম বিশ্বকাপ। মাঠের নেতৃত্বে মাশরাফি সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। বল হাতে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট।
২০১৫ সালে নিজের নৈপুণ্য মোটামুটি হলেও ২০১৯ বিশ্বকাপে মাশরাফির হতশ্রী পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গিয়েছিল আগের সব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কদের পারফরম্যান্স। ৮ ম্যাচে মাশরাফির ঝুলিতে ছিল মাত্র একটি উইকেট। কিন্তু ব্যাট-বলে দুরন্ত ছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে বিশ্বকাপের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬০৬ রান করেন তিনি। বল হাতে শিকার করেন ১১ উইকেট। দেশে ফিরে এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক মাশরাফির অফ ফর্ম নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘যেহেতু অধিনায়ক পারফর্ম করছিল না, এটা বড় সমস্যা। তার জন্যও, দলের জন্যও। অধিনায়ককে পারফর্ম করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ওই জায়গাটাতে আমরা অনেক বেশি পিছিয়ে গেছি।’
সব বিশ্বকাপেই এভাবে অধিনায়কদের পারফরম্যান্সের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স কী তাহলে ২০১৯ বিশ্বকাপ-পরবর্তী তার বলা কথারই ইঙ্গিত দেয়, ‘অধিনায়ক পারফর্ম না করাতেই পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ?’