বাংলাদেশ দল কী নদী থেকে সাগরে গিয়ে পড়ল? সাঁতার কেটে নদী ঠিকই পার হয়ে গেছে। কিন্তু সাগরে গিয়ে কী সাঁতার কাটতে পারবে, নাকি উত্তাল ঢেউয়ে ডুবে যাবে? গ্রুপপর্ব ছিল বাংলাদেশের কাছে নদী। আর সুপার এইট যেন সাগর। সাঁতার কেটে নদী পার হয়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার কাটতে পারেনি। ডুবতে ডুবতে পার হয়েছে। আর এ কারণেই সুপার এইটে যাওয়াটা সাগরে গিয়ে পড়ার শামিল হয়েছে!
২০০৭ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ খেলছে সুপার এইট। কিন্তু ২০০৭ সালে যেভাবে দাপুটে জয়ে (দুই ম্যাচের একটিতে জয়) সুপার এইটে গিয়েছিল, এবার তিন জয়ে সুপার এইটে যাওয়ার পরও দুশ্চিন্তা থেকে গেছে। কারণ একটি জয়ও দাপুটে ছিল না। একমাত্র নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়টা এসেছিল কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে। বাকি দুই জয় ছিল হারতে হারতে পাওয়া। যে কারণে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই শঙ্কা। খেলবে আবার অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া একবার করে শিরোপা জিতেছে। অ্যান্টিগাতে ২১ জুন সকালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সুপার এইটের যাত্রা। ২০০৭ সালে সুপার এইটের তিন ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো জয় পায়নি, এবারও সে রকম হওয়ার শঙ্কা!
বাংলাদেশের এই শঙ্কার নাম ব্যাটিং ব্যর্থতা। এই ব্যাটিং ব্যর্থতা শুরু হয়েছে সেই বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে থেকে, যা বহমান আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। বোলারদের অসম্ভব দৃঢ়তায় বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে তিনটি ম্যাচ জিতে এ পর্যন্ত এসেছে। ব্যাটারদের ব্যর্থতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১৩ রানও অতিক্রম করতে পারেনি। আবার নেপালের বিপক্ষে মাত্র ১০৬ রানের পুঁজি দিয়েছিল বোলারদের। সেই রানকেও বোলাররা ২১ রানের জয়ে পরিণত করেন। ব্যাটারদের এ রকম ব্যর্থতায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সুপার এইটের ওঠার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যাটসম্যানেরও দায়িত্ব আছে। কেন হচ্ছে না, এটা সবাই চেষ্টা করছে বের করার। কিন্তু কোনোভাবে হচ্ছে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের জন্য এটা চিন্তার কারণ।’
বোলাররা প্রতি ম্যাচে ভালো করবেন, এমনটি নাও হতে পারে। তানজিম সাকিব ৯টি এবং মোস্তাফিজ ও রিশাদ ৭টি করে উইকেট নিয়ে আছেন ওপরের দিকে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাসকিন, সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ মিলে। তাই সময় এসেছে ব্যাটারদের কিছু করে দেখানোর। টপঅর্ডারের ব্যর্থতা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রুপপর্বে ৪ ম্যাচ খেলে লিটন দাস ৫৬, তানজিদ হাসান তামিম ৪৭, নাজমুল হোসেন শান্ত ২৬ রান করেছেন। এর রেশ মিডল অর্ডারেও প্রভাব ফেলছে। যে কারণে ব্যাটিং ব্যর্থতা গভীরে পৌঁছে গেছে। তার পরও এই মিডল অর্ডারের কারণেই বাংলাদেশ পেয়েছে জয়। তাওহীদ হৃদয় ৯৫, সাকিব ৯২, মাহমুদউল্লাহ ৭৪ রান করেছেন। বোলারদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি ব্যাটাররাও নিজেদের মেলে ধরতে পারেন, তা হলে সুপারে এইট বাংলাদেশ দলের জন্য মধুর হয়ে উঠতে পারে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মধুর স্বাদ পেতে হলে এর বিকল্প নেই। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে যতটা কঠিন প্রতিপক্ষ ভাবা হচ্ছে, পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে আবার সে রকমটি মনে হবে না। কারণ, ১০ বারের মোকাবিলায় বাংলাদেশের জয় ৪টিতে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৬টিতে। বাংলাদেশের ৪টি জয় ছিল ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে। ঘরের মাঠে নিজেদের পছন্দের স্লো উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নিমন্ত্রণ করে ৫ ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল ৪-১ ব্যবধানে। এমন জয়েও কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের পরবর্তী সময়ে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি।
সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে সুপার এইটে ওঠার সুখস্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ দল ১৭ জুন অ্যান্টিগা পৌঁছেছে। পরের দিন দুই বেলা অনুশীলন ছিল। কিন্তু দিনের অনুশীলন বাজে আবহাওয়ার কারণে বাতিল হয়ে যায়। সন্ধ্যার অনুশীলনে সবাই ছিলেন বেশ ফুরফুরে। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ অনুশীলন করেছেন। যাতে করে ওয়ার্নার ট্রাভিস হেডের বিগ শটগুলো ছক্কায় পরিণত না হয়। পেসাররা নিজেদের মতো করে তালিম নিয়েছেন। রিশাদ ছিলেন মুশতাক আহমেদের তত্ত্বাবধানে। ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
২০০৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুপার এইটে ওঠে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলেছিল অ্যান্টিগাতে। প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সুপার এইটে উঠে অ্যান্টিগাতে প্রথম ম্যাচ খেলছে। প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়াই। গ্রুপপর্বে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ৪টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া একটি ম্যাচে নামিবিয়াকে ৭২ রানে অলআউট করে ম্যাচ জিতেছিল ৯ উইকেটে। ১০ ওভারের ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১২২ রান করে ম্যাচ জিতেছিল ৪১ রানে।
সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা একাদশে পরিবর্তন আসবে কি না, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গ্রুপপর্বের শেষ তিন ম্যাচ বাংলাদেশ অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলেছে। উইনিং কম্বিনেশনে কোচ পরিবর্তন আনবেন কি না, সেটা দেখার বিষয়। যদি পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে স্পিনার বাড়াতে পারে একাদশে। শেখ মাহেদী বা তানভীর ইসলামের অভিষেক হতে পারে। সাইড লাইনে চলে যেতে পারেন জাকের আলী। কারণ নামিবিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জ্যাম্পা ১২ রানে ও ওমানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।