সেন্ট ভিনসেন্টে গ্রুপপর্বের শেষ দুই ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের ঠিকানা এখন অ্যান্টিগা। সুপার এইটে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ খেলবে অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে। এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। নিজেদের সেরা বিশ্বকাপ কাটানো বাংলাদেশকে বারবার একরাশ হতাশা উপহার দেয় এই মাঠ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে কোনো ম্যাচ খেলেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বাকি দুই ফরম্যাটে খেলা চার ম্যাচে কোনো জয় পায়নি সাকিব-শান্তরা। কিংবদন্তি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের নামকরণে তৈরি মাঠে নিজেদের প্রথম জয়ের অপেক্ষায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডে তৈরি হয় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপ চলাকালে প্রথম এই মাঠে খেলে বাংলাদেশ। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হারে যথাক্রমে ১০ ও ৯ উইকেটে। কাকতলীয় ব্যাপার হলো ওই ম্যাচ দুটিও ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচ। প্রায় দেড়যুগ পর এবার ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপে সুপার এইটে একই ভেন্যুতে মাঠে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ওই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন দিনের ব্যবধানে দুই ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ পরে এই মাঠে ম্যাচ খেলে ২০১৮ ও ২০২২ সালে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলে দুটি টেস্ট। দুই টেস্টেই হারে বিশাল ব্যবধানে।
বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা পাঁচ ক্রিকেটারের আছে অ্যান্টিগার এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা। তাদের মধ্যে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা চার ম্যাচের সব কটিতে ছিলেন সাকিব আল হাসান। বাকি চারজনের মধ্যে লিটন দাস খেলেছেন শেষ দুই ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও নাজমুল হোসেন শান্তদের আছে একটি করে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা। পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অজি বধ মিশনে বাংলাদেশ সফল হতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
এমন অপয়া ভেন্যুতে মাঠে নামার আগে এক কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ২১ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে সাকিবের শিকার ছিল দুই উইকেট। অস্ট্রেলিয়া কিংবা ভারতের বিপক্ষে এক উইকেট শিকার করলে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন। এর আগে কোনো ক্রিকেটার পারেননি এই কীর্তি গড়তে। অবশ্য এই মাঠে সাকিবের বোলিং রেকর্ডও সুখকর না। নর্থ সাউন্ডে দুটি করে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলে তার শিকার ছিল মোটে তিন উইকেট। ব্যাট হাতে খানিকটা ছন্দে ছিলেন। এই মাঠে খেলা ছয় ইনিংসে দুই ফিফটিতে করেছেন ১৭৬ রান। সাকিব কিছুটা রান পেলেও ওই পথে হাঁটতে পারেননি বাকিরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তরা এই মাঠে করতে পারেননি কোনো হাফসেঞ্চুরি। পুরোনো হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর এবার টাইগার ক্রিকেটাররা কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় এই মাঠে সেটাই দেখার অপেক্ষা।
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না হওয়ায় টাইগারদের সঙ্গী হবে খানিকটা অনভিজ্ঞতা। এই মাঠে হওয়া ১৭ টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ইনিংসে গড়ে উঠেছে ১২৮ রান। এ মাঠে হওয়া ম্যাচগুলোতে আগে ব্যাট করে জয়ের ঘটনা ঘটেছে ১০ ম্যাচে। বাকি ৭ ম্যাচে জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা দলগুলো। এ ছাড়া এই মাঠে ১৫০ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র একটি। তাতে ধারণা করা যাচ্ছে এই মাঠে হতে পারে লো স্কোরিং ম্যাচ। এ ছাড়া এই মাঠে ১৭ টি-টোয়েন্টিতে ছিল পেসারদের দাপট। পেসারদের ১২০ উইকেটের বিপরীতে স্পিনারদের শিকার ছিল ৭৬টি। এটাও বাংলাদেশকে জোগাতে পারে ভরসা। কারণ আসরজুড়ে ছন্দে আছেন তানজিম হাসান সাকিব, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানরা। এমন পক্ষে থাকা উইকেটে বাংলাদেশ জয়ের হাসি হাসবে কী, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।