![সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম এক শতাংশ দাবি উদীচীর](uploads/2024/05/31/Udichikk-1717175159.jpg)
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম এক শতাংশ দাবি করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘জাতীয় বাজেট: সংস্কৃতি খাতে এক শতাংশ বরাদ্দের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক উদীচীর এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশিদ, মফিদুল হক, ম. হামিদ, এম এম আকাশ, ফওজিয়া মোসলেম, মানজারে হাসিন মুরাদ, আসিফ মুনীর তন্ময়সহ বরেণ্য সংস্কৃতিজন এবং সংগঠকরা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম।
মূল প্রবন্ধে অমিত রঞ্জন দে বলেন, ‘অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিগত কয়েক বছর ধরে দাবি উঠছে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ ভাগ বরাদ্দ দেওয়ার। কিন্তু তা শূন্য দশমিক শূন্য ৯ থেকে শূন্য দশমিক ১৬ ভাগের ওপরে উঠেনি কোনোভাবে।’
সংস্কৃতি বাজেটের সিকিভাগ শিল্পকলা একাডেমিতে বরাদ্দ থাকায় তারও সমালোচনা করেন অমিত। তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের জন্য বরাদ্দের একটা অংশ শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো অনুষ্ঠানই হয়েছে শিল্পকলার চৌহদ্দিতে মিলনায়তনের ভেতরে হয়, যেখানে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ শিল্পকলা একাডেমির দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে কী হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করে। ভেতরে গিয়ে দেখার সাহস তাদের নেই। অথচ সংবিধানের ২৩ নং অনুচ্ছেদে সর্বস্তরের জনগণ যাতে জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে এবং অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘আমরা যদি সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে ব্যর্থ হই তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যতই হোক না কেন তা এক সময় বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়বে। সুতরাং সবার আগে এই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে।’
সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, ‘প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ছে, কিন্তু সংস্কৃতির কাঠামো-পরিকাঠামো বাড়ছে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্র অভিমুখী আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্নকল্প তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজেট প্রণীত হচ্ছে না। যতটুকু যা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা অবকাঠামো নির্মাণে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। সেখানে চলছে অবাধ লুটপাট এবং নির্ধারিত সময়ে কাজটি সম্পন্ন না করতে পারায় প্রাক্কলন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সংস্কৃতিকর্মীরা সম্মুখসারিতে ছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রাজনৈতিক ব্যক্তিরা চলে গেলেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আর সংস্কৃতিকর্মীরা পড়ে থাকলেন রাজপথে। সংস্কৃতি বাজেট যারা করেন তারা সংস্কৃতি বোঝেন কি না সে প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
সংস্কৃতিজনরা বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার মাশুল দিতে হবে রাষ্ট্রকে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে সংস্কৃতি খাতে বাজেট বরাদ্দের দাবি জানান বক্তারা।
জয়ন্ত/এমএ/