![আলোকচিত্রে দুর্গম গিরি অভিযানের গল্প](uploads/2024/06/01/Himalaya-1717226872.jpg)
রোদ ঝলমলে দিন; হিমালয় পর্বতমালা অভিযানে গিয়ে বাংলাদেশের একদল অভিযাত্রী তখন পৌঁছে গেছেন নেপালের রোলওয়ালিং উপত্যকায়। ক্লান্ত অভিযাত্রীরা পথ চলতে চলতে কিছু সময় বিশ্রাম নিলেন বেদিংখোলা নদীর তীরে। তখন সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। অভিযাত্রী কাজী বাহলুল মজনুর ক্যামেরায় রোলওয়ালিং উপত্যকার সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। শেষ রোদের আলোয় প্রমত্তা বেদিংখোলা বেয়ে যেন নেমে আসছে স্বর্ণালি স্রোত।
গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের বাংলা মাউন্টেরিয়ান ক্লাবের অভিযাত্রীরা হিমালয়ের নানা পর্বতশিখর জয় করেছেন। ভয়ংকর, সুন্দরতম এসব অভিযানে দুঃসাহসী অভিযাত্রীদের ক্যামেরায় পর্বতমালা, অভিযানের নানা দৃশ্য, নদী উপত্যকা ও উপত্যকাসংলগ্ন গ্রামীণ জীবন উঠে এসেছে নানা অধ্যায়ে। ল্যান্ডস্কেপ, পোর্ট্রেইট, স্ট্রিট, অ্যারিয়াল ফটোগ্রাফিতে উঠে এসেছে সেসব অভিযানের গল্প।
১৮ জন অভিযাত্রীর ১০৯টি ছবি নিয়ে শুক্রবার (৩১ মে) থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি-২ এ শুরু হয়েছে ‘মাউন্টেইন মেমোরিজ: কানেক্টিং পিকস অ্যান্ড পিপল’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
ঢাকার নেপাল দূতাবাসের আয়োজনে এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি, প্রদর্শনীর কিউরেটর ইনাম আল হক।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, হিমালয়ের চূঁড়ায় যা ঘটছে তার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের নিচু ভূমিতে এসে পড়ছে। তাই শুধু সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নয়, বেঁচে থাকার জন্যও পাহাড়ের ইকোসিস্টেম রক্ষা জরুরি। আমরা পর্বতজয় সেলিব্রেশন করব আবার সেখানে যা ঘটছে তার সম্পর্কেও সচেতন থাকব। মনে রাখতে হবে পাহাড় ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব।
মঞ্চে ডেকে এভারেস্ট বিজয়ী মো. বাবর আলীকে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানান অতিথিরা।
এ সময় তাকে নেপালি টুপি পরিয়ে দেন ঘনশ্যাম ভান্ডারি। ফুল ও ক্রেস্ট তুলে দেন অন্য অতিথিরা।
ঘনশ্যাম ভান্ডারি বলেন, পাহাড় আমাদের আইডেনটিটি মার্কার। অ্যাডভেঞ্চার লাভারদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে এসব পাহাড়। এসব পাহাড় মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যেও সম্পর্কে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, হিমালয় পৃথিবীর স্পন্দনের মতো। হিমালয়ে যা ঘটে তার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়ে। এই প্রদর্শনী মূলত বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের চোখে হিমালয়ের সৌন্দর্যের দৃশ্য নিয়ে। এতে নেপালের বিখ্যাত কয়েকজন আলোকচিত্রীসহ বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের ১২০টি ছবি রয়েছে।
আয়োজকরা জানান, এ প্রদর্শনীতে অভিযাত্রী, রোপ ফোর, অল্টিচিউড হান্টার্স, মাউন্টেইন ম্যাডেনস, দ্য কোয়েস্ট, ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স এবং বিএমটিসি সদস্যদের তোলা ছবি ঠাঁই পেয়েছে।
প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের যে উল্লেখযোগ্য ১৮ পর্বতারোহীর ছবি স্থান পেয়েছে তারা হলেন নিশাত মজুমদার, ফজলুর রহমান শামীম, আরিফুর রহমান, অমিত ঘোষ, ফরহান জামান, মাহমুদ রানা, জাফর সাদেক, মোহাম্মদ হোসাইন সবুজ, আবরারুল আমিন, আহাসানুজ্জামান তৌকির, আবু সাইদ মো. রাজীব, কাউছার রূপক, রিয়াসাদ সানভী, ইকরামুল হাসান শাকিল, বাহালুল মজনু বিপ্লব, নূর মোহাম্মদ, সাদিয়া সুলতানা এবং এম এ মুহিত।
এ আয়োজনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ বিশ্বখ্যাত চার নেপালি শেরপা ক্লাইম্বিং গাইড মিংমা গ্যালজে শেরপা, পেম্বা দর্জি শেরপা, ড্যান্ডি শেরপা, চিরিং ওয়াংচু শেরপার তোলা কয়েকটি ছবি।
পর্বতারোহী রিয়াসাদ সানভী হিমালয় পর্বতমালার লারকি পর্বত অভিযানে গিয়েছিলেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে। সেবার গোরখা জেলায় লোহ গ্রাম থেকে তিনি তোলেন মানাসালু পর্বতের ছবি। লোহ গ্রাম থেকে পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা তিন হাজার মিটার।
ধউলাগিরি সার্কিট থেকে আরিফুর রহমান তুলেছেন মারফা গ্রামের ছবি। ২০১২ সালে এভারেস্ট যাওয়ার পথে সোলোকুম্ভু ভ্যালিতে দাঁড়িয়ে পর্বতারোহী এম এ মুহিত ফ্রেমবন্দি করেন অনিন্দ্য সুন্দর টকটক গ্রামের ছবি।
গত বছর নভেম্বরে আমাদামলাম অভিযানে যান কাউসার রূপক। তার ছবিতে উঠে আসে সোলোকুম্ভু ভ্যালিতে অভিযাত্রী দল কোথায়, কীভাবে অবস্থান নিয়েছিল। এম এ মুহিত এবং আবরারুল আমিনের ছবিতে দেখা মেলে তুষারাচ্ছাদিত ইমজা লেকের।
এ ছাড়া লবকা সামিটের যাওয়ার পথে শেরপাদের সমবেত প্রার্থনা, অভিযাত্রীদের দুর্গম গ্লাসিয়ার পার হতে নানা প্রস্তুতির কথা উঠে আসে আলোকচিত্রে।
কিয়াজো রাই হাই ক্যাম্পের একটি ছবিও দেখা গেলো প্রদর্শনীতে।
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/